Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

রাত্রি হল, শুয়ে পড়া যাক— কী এমন অতীত, এত তাড়াতাড়ি শুয়েই পড়তে হল রেজাউল? বাঁধানো ছবির ওপারে বাসি বেলফুলের আড়াল থেকে ঘোর মফস্সলের ছেলেটি কী এখনও দেখছে— পাখিদের একাকীত্ব আর জোনাকির বনভোজন?

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

প্রবাস কবে শেষ রেজাউল

রাত্রি হল, শুয়ে পড়া যাক— কী এমন অতীত, এত তাড়াতাড়ি শুয়েই পড়তে হল রেজাউল?

বাঁধানো ছবির ওপারে বাসি বেলফুলের আড়াল থেকে ঘোর মফস্সলের ছেলেটি কী এখনও দেখছে— পাখিদের একাকীত্ব আর জোনাকির বনভোজন? দুয়ারে সাইকেল হেলান দিয়ে এখনও সে প্রশ্ন করে বসে তাঁর বন্ধুরা। আর গ্রামীণ গোরের উপরে ঝরে পড়ে শুকনো পিপুল পাতা।

মুর্শিদাবাদের লালবাগের বালটুঙ্গি গ্রামের রেজাউল করিম অবশ্য তাঁর বাঁধানো বই-টই কিছুই দেখে যেতে পারেননি। বরং তা নিয়ে কিঞ্চিৎ অস্বস্তিই ছিল তাঁর। এ সবই নিজেকে ‘এক অপরাহ্নের কাছে’ রেখে চলে যাওয়ার পরে গ্রন্থিত। সম্পন্ন কৃষক পরিবারের ছেলে রেজাউল, ১৯৮১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাশ করে শিক্ষকতায় ঢুকেছিলেন। কিন্তু তারপর মহানগরের ব্যস্ততায় নয়, ফিরে গিয়েছিলেন সেই প্রান্তির জনপদে— লালগোলায়।

িযনি মাত্র এগারো বছর বয়সেই লিখে ফেলেছিলে আস্ত একখানা উপন্যাস সেই তিনিই কিনা পরে আশ্রয় খুঁজলেন কবিতার কাছে। কিন্তু সেই কবিতাই তাঁকে মাত্র সাতান্ন বছর বয়সে, ‘মেঘের ভেঁড়ার পাল চরাতে চরাতে..... অনন্ত ভ্রমণে’ নিয়ে চলে গেল।

কেই বা জানত!

কবিতার আশ্রম

দু’মলাটে কয়েক বছর ধরে ‘ধুলো মাখা, সাদাসিধে বাংলা কবিতা’ প্রকাশ করে চলেছে ‘কবিতা আশ্রম।’ মাসিক পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু হল শান্তিনিকেতন, শিলিগুড়ি, বনগাঁ, পুরুলিয়া, দুর্গাপুর, ছাড়িয়ে বিস্তৃত দুই বাংলায়। রণবীর দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে প্রথম সংখ্যাটি। পরিচিত কবিদের সঙ্গে নতুন কবিদের লেখা পড়ার এক অপূর্ব আয়োজন। সম্পাদক লিখেছেন, ‘প্রচারের বাইরে থাকা বড় কবিতাজগৎকে নবীন কবির কাছে উপস্থিত করাটা বাংলা কবিতার মঙ্গলের জন্যই জরুরি।’ জায়গা করে নিয়েছে কবি মলয় গোস্বামী ও প্রবুদ্ধসুন্দর করের কবিতা-কেন্দ্রিক ধারাবাহিক গদ্যও।

হীরের ঝড়

‘‘না ভাই, ঝড় খুঁজবেন না। ও সব অক্ষরেই থাকে’’— ঘনিষ্ঠ আড্ডায় কথাটা বার বারই বলেন। লোকাল ট্রেনে কোণার দিকে একটা সিট খুঁজে সেই যে চুপ মেরে গিয়েছেন... একে একে পেরিয়ে যাচ্ছে নিভু নিভু স্টেশন। চুপ করে আছে মানুষটা। মাথার ভিতর তখনই হয়তো কিলবিল করছে ছোটখাটো ঝড়-ঝাপটা— ‘নতুন মেম’, ‘জলের সীমানা’, ‘সহিস’। দেখতে দেখতে খান চোদ্দ উপন‌্যাস হয়ে গেল তাঁর। মোহনা পাড়ের প্রান্তিক স্টেশন আসতেই চুপচাপ নেমে পড়ছেন তিনি। তার পর অচেনা রিকশায়, কখনও বা হেঁটেই ঢালু রাস্তা ধরে আটপৌরে বাড়ি। ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়কে ওই এক টুকরো মোহনার শহরই বেঁধে রেখেছে। তিনিও নিজেকে বলেন, ‘ডায়মন্ডহারবারের ঝড়েশ্বর।’ কলকাতার বইপাড়াও তাঁকে ওই নামে চেনে। প্রকাশকেরা বলেন, ‘‘দোকানে এসেই তাড়া, আটটা দশের ট্রেনটা তো ধরতেই হবে দাদা।’’ কোচবিহার ছেড়ে যেমন বিশেষ বাইরে পা রাখতে চাইতেন না অমিযভূষণ, আসানসোল কিংবা ট্রেন লাইন ঘেঁষা উলুবেড়িয়া এখনও যেমন গর্ব করে— আমাদের জয়া মিত্র কিংবা ‘উলুবেড়ের আফসার আহমেদ’ বলে, ডায়মন্ডহারবারও তেমনই, গোপনে শ্লাঘার বুজকুড়ি কাটে নাকি— ‘আমাদের ঝড়েশ্বর’দা বলে!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

South Korcha cultural news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE