Advertisement
E-Paper

দক্ষিণের কড়চা

চড়িদার নাম সকলে জানে ছৌ নাচের সুবাদে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কাছেই জঙ্গলমহলের এই গ্রামের বিশ্বজোড়া পরিচিতি ছৌ নাচের কিংবদন্তী শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়ার গ্রাম হিসেবে। তাঁর ছৌ নাচের শৈলীর জন্য এই শিল্পীকে পদ্মশ্রী খেতাব দিয়েছিল ভারত সরকার।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০৩

মুখোশের টানে

চড়িদার নাম সকলে জানে ছৌ নাচের সুবাদে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কাছেই জঙ্গলমহলের এই গ্রামের বিশ্বজোড়া পরিচিতি ছৌ নাচের কিংবদন্তী শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়ার গ্রাম হিসেবে। তাঁর ছৌ নাচের শৈলীর জন্য এই শিল্পীকে পদ্মশ্রী খেতাব দিয়েছিল ভারত সরকার। সেই গ্রামের ছৌ নাচের মুখোশ এখন পৌঁছে যায় দেশ বিদেশের নানা বাড়ির বৈঠকখানায়। এই গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যতম প্রধান পেশা মুখোশ বানানো। সেই গ্রামেরই চেনা ছবিটা বদলে গিয়েছিল তিন দিনের জন্য। গ্রামের রুখা পথে দেখা মিলছিল দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। গমগম করছিল অন্য সময়ের তরঙ্গহীন জনপদটা। সৌজন্যে, ছৌ মুখোশ শিল্পী সঙ্ঘ। তাঁদের উদ্যোগেই তিন দিনের মেলা হয়ে গেল এই গ্রামে। তবে মেলা বলতে সাধারণত যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, চড়িদার এই তিন দিনের মেলার সাজ ঠিক তেমনটা ছিল না। শিল্পীদের দোকানগুলিই হয়ে উঠেছিল মেলার এক একটি স্টল। মেলার জন্য সেগুলিকে সাজানো হয়েছিল নানা রকমের আলোকসজ্জায়। চড়িদা গ্রামের হরিমন্দিরের পাশে মঞ্চ বেঁধে. আয়োজন করা হয়েছিল ছৌ, ঝুমুর, বাউল-সহ নানা লোকগানের অনুষ্ঠানের। কোথাও আখড়ায় তৈরি হচ্ছে মুখোশ। তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে তাতে হাত লাগিয়েছিল খুদেরাও। মুখোশকে ঘিরে এই মেলার আয়োজন করেছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। শহর থেকে দূরে গ্রামে ঘুরতে আসায় এই মেলা দেখার মধ্যে ছিল একটা পর্যটনের ছোঁয়াও। সে কারণেই খুশি মেলায় মুখোশ কিনতে আসা পর্যটকেরাও। চড়িদা গ্রামের বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, এ ভাবে লোকশিল্পীদের গ্রামে যদি মেলার আয়োজন করা হয় তাতে আখেরে উপকৃত হন শিল্পীরাই। বাইরের দুনিয়ার অনেকের কাছে সহজে পৌঁছে যায় তাঁদের কাজের কথা। এখন যদিও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ই-গ্রামীণ হাটের মাধ্যমে অনলাইনে কেনা যায় মুখোশ, তবুও এমন মেলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। চড়িদার ওই মেলায় এসেছিলেন আর্জেন্টিনার এক পর্যটকও। এ বারের সাড়া পেয়ে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পরের বছর ফের হবে এই মেলা।

নৃত্য সন্ধ্যা

শ্রীলঙ্কা ও ভারতের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের মাধ্যম ছিল নাচ। শনিবার ‘শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠান হয়ে গেল শান্তিনিকেতনের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে। উদ্যোক্তা সান্দানি রঙ্গানা কলানিকেতন নামে এলাকার একটি নৃত্যের প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শাস্ত্রপতি চান্দনি কস্তুরী আরাচ্চি জানান, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার একাধিক নৃত্য পরিবেশনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ছিল নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। শ্রীলঙ্কার সিংহলী গানের উপর ভরতনাট্যম, কথাকলি, মনিপুরী ঘরানায় সরস্বতী বন্দনা-সহ একাধিক নৃত্য পরিবেশিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ছিল ‘কিসা গৌতমী’ নামে একটি নাটকও। তামিল গানের উপর ভরতনাট্যমে ‘তাকা তাকা ধিম’ শ্রীলঙ্কার ছেলে, মেয়েদের পারম্পরিক লোকনৃত্য ‘নানা ভিলে’ ছিল যাতে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার একাধিক শিল্পীরা যোগ দেন।

পুরাতনী

‘‘আমার আজ বিপদের দিন। ঠিক সময়েই তোমরা এসেছ। এই সময়েই তোমাদের আমার দরকার ছিল। বিচিত্র আঘাতে ও বিরুদ্ধতায় আজ আমার মন ক্লান্ত ক্লিষ্ট।’’— এমন বলছেন রবীন্দ্রনাথ। বলছেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্রদের। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্রদের কাছে বিভিন্ন সময়ে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার অনুলিপি রেখেছিল প্রাক্তনেরাই। পৌষ ১৩৪৩ (১৯৩৬) এ সেই অনুলিপির সংকলন— ‘প্রাক্তনী’, প্রকাশ করেছিল শান্তিনিকেতনের আশ্রম সঙ্ঘ। দীর্ঘ দিন পরে নব কলেবরে সেটি আবার প্রকাশিত হতে চলেছে। সঙ্গে দুর্লভ চারটি ছবি। নতুন সংস্করণের প্রকাশক ‘কারিগর’। ৭ পৌষ উত্তরায়ণ প্রাঙ্গণে, আশ্রমিক সংঘের সভায় বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ।

পারিজাতের সুর

স্টেজে গান শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই উইংস-এর পাশে অনিন্দ্য, উপল-সহ পুরো ‘চন্দ্রবিন্দু’ দলটাই এসে দাঁড়াল। চন্দ্রবিন্দুর নক্ষত্ররা ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন ২০০৬-এর সেই সন্ধেতে। সে দিন থেকেই নিজেদের গান, নতুন গান গাওয়ার শুরু। বাংলা ব্যান্ড ‘পারিজাত’ আজও সুর সৃষ্টির সেই পথে এগিয়ে চলেছে। ২০০৮-এ প্রথম অ্যালবাম ‘কী করবি কর’। তারপর পর পর বছরগুলিতে আরও পাঁচটি। মেদিনীপুরের একটিগানের দলের পক্ষে লড়াইটা বেশ কঠিন। তবু হাল ছাড়েনি পারিজাত। কলকাতা শহরের থেকে অনেক দূরে থেকেও পারিজাতের সুগন্ধ আজ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাগত সুমন্ত, দেবব্রত, কিংশুক, শান্তনু, স্বপন। কেউ স্বাস্থ্য দফতরে, কেউ আছেন ইউনিভার্সিটিতে, কেউ ভারতীয় রেলে তো কেউ শিক্ষক। কিন্তু জীবন কে বেঁধে রেখেছে গান। আগামী ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ মাতৃভূমি মেদিনীপুর শহরের ‘বিদ্যাসাগর হল’এ ‘‘পারিজাত’’ তাদের অষ্টম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে শোনাবে তাদের নিজেদের গান। নতুন গান। এই অনুষ্ঠান নতুন গানের প্রতি মানুষকে আকর্ষণ করবে, নতুন গানের শ্রোতা বাড়িয়ে তুলবে, এটাই ‘পারিজাত’ এর আশা।

চয়নিকা

ছোট পত্রিকা থেকে প্রকাশনা— বাংলা লিটল ম্যাগের ইতিহাসে এমন উদ্যোগ নতুন নয়। সম্প্রতি সাঁইথিয়া থেকে প্রকাশিত ‘চয়নিকা’ পত্রিকা এ বার ঠিক সেই পথেই হাঁটল। রবিবার চয়নিকার পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশ হল। সম্পাদক কৌশিক ভাণ্ডারী জানান, তার মধ্যে রয়েছে অসীম অধিকারীর ‘ঘৃণায় বেঁকে যাচ্ছে তর্জনী’, অজয় আচার্যের ‘শীতের বলি’, দেবযানী দাস সিংহের ‘দু-এক পশলা’ প্রভৃতি। সদ্যপ্রয়াত কবি ভূমেন্দ্র গুহকে শ্রদ্ধা জানাতে মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছিল তাঁর নামে। ছিলেন কবি রণজিৎ দাস, কবি শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, কবি অতনু বর্মন, লেখক সোমব্রত সরকার, সমাজসেবী মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, গবেষক আদিত্য মুখোপাধ্যায়, প্রাবন্ধিক তপন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ছিল অরুণ পটুয়া ও সম্প্রদায়ের লোকগানও।

গানেই আলাপ

কবির সঙ্গে তাঁর নিত্য আলাপ। স্বপ্নের শিকড়ে যখন চিন্তার বিস্তার ঘটে, তখন প্রবন্ধও প্রাণ পায় নতুন চেতনায়। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে এমন এক ‘পবিত্র’ উচ্চাসনে বসিয়ে রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা, যে তার আঙ্গিক নিয়ে যে কোনও জিজ্ঞাসাই কড়া বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে বারবার। এই পরিমণ্ডলে এক আশ্চর্য রচনা বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্নসংলাপ: রবি আমি রবিগান’। আশ্চর্য সাবলীলতায় তিনি আলাপচারিতায় মেতেছেন তাঁর প্রাণের মানুষের সঙ্গে। যেন খুব কাছের কোনও মানুষের সঙ্গে বহু দিনের জমে থাকা ভাবনার আদানপ্রদান। উত্তরপাড়া নিবাসী বিপ্লববাবু গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাগসঙ্গীগীত, প্রাচীন বাংলা গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত ইত্যাদির চর্চা করে চলেছেন। সেই সাধনা থেকেই রবীন্দ্রনাথের গানে, প্রবন্ধে বিপ্লববাবু খুঁজে নিয়েছেন তাঁর রবিঠাকুরকে। ব্যক্তিগত লেখনীর ঢঙ তাঁকে সাহায্য করেছে প্রবন্ধের পরম সত্য প্রতিষ্ঠার প্রথাগত ছাঁচ থেকে বেরিয়ে আসতে। আটটি কথোপকথনে কখনও লেখক আপত্তি জানিয়েছেন কিছু গানে তালবাদ্যের ব্যবহার নিয়ে। আবার কখনও তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের গায়কি, রাগ সঙ্গীত ও কাব্য সঙ্গীতে রাগের প্রয়োগ বা স্বরলিপির ব্যবহার। কথা-সুরের মিশেলে রবীন্দ্রনাথের গান তৈরির পদ্ধতি নিয়েও নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন লেখক। আলাপের ফাঁকেই বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথের ‘সংগীতচিন্তা’ গভীর ভাবে ভাবিয়েছে বিপ্লববাবুকে। অঞ্চল ভেদে সংস্কৃতির ভিন্নতা বিষয়ে কবির সঙ্গে লেখক যেন একমত হতে পারেন না। সব মিলিয়ে যাঁরা গান ভালবাসেন এবং প্রশ্নশীলতাকে মূল্য দেন, এই বই তাঁদের অচিরেই বিপ্লববাবুর পথের সঙ্গী করবে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy