Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

পদবির জেলখানায় বন্দি থাকব কেন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

পদবির জেলখানায় বন্দি থাকব কেন

স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত ‘মানছি না’ ক্রোড়পত্রে অনুনয় চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেশের নাম পৃথিবী’ ও গৌতম চক্রবর্তীর ‘হে পার্থ, কৌন্তেয়, গুড়াকেশ’— লেখা দুটি পড়ে এই ক্রোড়পত্রের সম্পাদকীয় ভূমিকার অনুসরণেই বলি, জগদ্দল পাথরের মতো ধারণাগুলোকে বয়ে নিয়ে চলা সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে যাঁরা নিয়ত কথা বলেন ও কলম ধরেন, তাঁদের কুর্নিশ।

দেশ, রাষ্ট্র, জাতি (জাতপাত-সহ) সম্প্রদায়, গোষ্ঠী ইত্যাদি গড়ার জন্য আমরা যুগ যুগ ধরে বিরাট ও অসংখ্য পাঁচিল তৈরি করেছি এবং সযত্নে তাদের পিঠ দিয়ে রক্ষা করে চলেছি। মানুষে মানুষে বিভেদের যে আইডিয়াগুলো আমরা লালন করছি, সেগুলোকে ভেঙে ফেলাই আজকের কাজ। ব্যক্তিক ও সামাজিক স্বাধীনতার যে বোধ এই পাঁচিল ভাঙতে পারে তারই কথা বলেছেন গৌতম চক্রবর্তী।

ব্যবহারিক প্রয়োজনে একটি নাম নিশ্চয়ই চাই। রাম বা অর্জুনের যতো নামই থাক। ওই নামই তার মূল প্রতিনিধি পরিচয়ের ক্ষেত্রে। যথাথর্র্ প্রশ্ন করেছেন গৌতম: কেন পদবি ব্যবহার করতে হবে? মহাভারত-পুরাণ থেকে এই স্বাধীনতা শিখব না কেন? আমরা লেখাপড়া জানা মানুষেরা অনেক বলি বা লিখি। কারণ, তাতে আত্মতৃপ্তি পাই। কিন্তু জীবনে পাঁচিল ভাঙা বা প্রথা ভাঙার কথা ভাবতেই পারি না। পাছে সুবিধার ঘরে টান পড়ে। আর এক জায়গায় ব্যথা লাগে। জায়গাটি হল সংস্কার। এক শ্রেণির প্রাচীন বুদ্ধিজীবী মানুষ ক্ষমতার স্বার্থে একটি আইডিয়া তৈরি করেছিলেন। আমরা সুবিধাভোগীরা তাকে সংস্কারে পরিণত করেছি।

পদবি জাতপাত ভেদের অন্যতম প্রধান বাহন। মূল লক্ষ্য ছিল: ভাগ কর এবং শাসন কর। শাসনের লক্ষ্য ছিল সুবিধার কায়েমি দখল। দখলের জন্য বিভেদের ভিতের উপর ধর্মের ও ভয়ের আসন পেতে দেওয়া হল। তার পর করা হল পদবি প্রথার সৃষ্টি।

গৌতম চক্রবর্তী প্রশ্ন করেছেন— আমরা যারা মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকারকে সমাজে পুরো প্রতিষ্ঠা করার জন্য বলি বা লিখি, তারা পদবি ব্যবহার করব কেন? না-ব্যবহারের অধিকার সংবিধান দিয়েছে। পদবির না-ব্যবহার অথবা ইচ্ছা মতো ব্যবহার অবশ্যই আমাদের মানবিক ও সাংবিধানিক অধিকার। না-ব্যবহারের উদাহরণ ভারতে কম নয়।

আমাদের মানবাধিকার কমিশন সহ নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার শতেক প্রতিষ্ঠান আছে। তারা স্বাধীনতা ও অধিকার হরণকারী পদবি ও জাতপাতের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা প্রচারের দায় নেয় না কেন?

বর্তমানে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি ভারতে ক্ষমতাসীন, তাঁরা এক সময়ে হিন্দুদের ডাক দিয়েছিলেন পদবি ত্যাগ করার জন্য। পরে তাঁরা নীরব হলেন কেন? বাধা কি সংস্কার, না কি রাজনীতি?

নীলকণ্ঠ ঘোষাল। কলকাতা-৬৩

বর্ধমান নয়, পুরুলিয়া

পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রকাশিত ‘সাহিত্যচর্চা’ (বাংলা ক-দ্বাদশ শ্রেণি) নামক গ্রন্থের ৬৯ পৃষ্ঠায় অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাট্যাংশের ‘নাট্যকার পরিচিতি’তে লেখা হয়েছে, ‘অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১০৩৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। সাবেক মানভূম জেলা, এখন বর্ধমানের রোপো গ্রামে’। বাক্যটি হবে ‘১৯৩৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, সাবেক মানভূম জেলা, এখন পুরুলিয়া জেলার রোপো গ্রামে’।

স্বাধীনতা-উত্তর বিহার প্রদেশের মানভূম জেলা ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়া জেলা নামে পশ্চিমবঙ্গভুক্ত হয়েছিল। সেই জেলার একটি থানার নাম জয়পুর। জয়পুর থানা এলাকার একটি গ্রামের নাম রোপো। গ্রামটির জে এল নম্বর ‘২৩’। রুপাই মাঝির নাম থেকে রোপো গ্রামের নাম হয়েছে। রোপো একটি গ্রাম পঞ্চায়েতও। এই রোপো গ্রামেই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। এটি তাঁর মামাবাড়ির গ্রাম। মাতামহের নাম রমেশ চট্টোপাধ্যায়। মায়ের নাম লক্ষ্মীরানি চট্টোপাধ্যায়। ওই গ্রামটিতে অজিতেশবাবু বাল্যকাল কাটিয়েছেন। আমৃত্যু রোপো গ্রামে তাঁর যাতায়াত ছিল। ১৯৬৭ সালে শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক লেখায় রোপো গ্রামে তাঁর যাতায়াতের প্রসঙ্গটি অতি সুন্দর। ‘জয়পুরে ছোট ট্রেনে নেমে কেউ বলে পাঁচ মাইল, কেউ বলে সাত মাইল, কেউ বলে দশ মাইল দূরের রোপো গ্রামে আমার মামাবাড়ি’।

দিলীপকুমার গোস্বামী। পুরুলিয়া

তীরভূমি

বিকাশ রায়কে নিয়ে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ ‘বড়ে গোলাম আলির গাওয়া...’ (২৬-৭) পড়ে খুব ভাল লাগল। তবে একটি তথ্যগত ভুল চোখে পড়ল। উনি লিখেছেন, ‘...ওঁকে এত সম্মান করতাম যে গুরু বাগচীর ‘তিন ভূমি’ ছবিতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। ...’। ছবির নামটি হবে ‘তীরভূমি’। শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত হয়েছিল। এতে জাহাজের পাইলট মিস্টার মুখার্জির চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেছিলেন বিকাশ রায়।

সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-১৯

থিমপুজোর টাকায়

আবার একটা পুজো এসে গেল। তার মানে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে থিমের প্রতিযোগিতা আর পুরস্কারের ছড়াছড়ি। এক দিন শারদ সম্মান পুজোগুলিতে সুস্থতা ফিরে আসতে সাহায্য করেছিল। ক্রমশ এই সব সম্মান লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে থিমের পুজোগুলিকেই দেওয়া হতে থাকে। ফলে প্রতিযোগিতায় বাজেট বাড়তে থাকে। টাকার অপব্যয় না-করে আচার মেনে পুজো করে বাকি টাকায় নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হোক।

পুরস্কারদাতাদের অনুরোধ জানাই, তাঁরা সেই সব পুজোকেই পুরস্কৃত করুন, যারা আচার এবং রীতি মেনে কম বাজেটে পুজো করে বেশির ভাগ টাকাটাই ব্যয় করবে নিজ নিজ এলাকার আলো, পানীয় জল, রাস্তা ও পয়ঃপ্রণালীর উন্নয়নে।

কেউ বলতে পারেন, থিমের দৌলতে বেশ কিছু লোকের রুটি, রুজির ব্যবস্থা হত, তাঁরা তো বেকার হয়ে যাবেন। কিন্তু ওই সব উন্নয়ন মূলক কাজে প্রতি পুজো কমিটি কিছু কিছু লোকের স্থায়ী কর্মসংস্থান করবে। একটু ভেবে দেখুন, জনসাধারণের টাকায় নিজ নিজ এলাকার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে। এর জন্য কোনও কোষাগার থেকেই অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। তার কারণ, ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক জনসাধারণ এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের পুজোর সময় এ টাকা দিতেই হয়।

গোপাল বসাক। কলকাতা-৫

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial letter anandabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE