এক দিন ট্রেনে চড়লেই বিশ্বাসযোগ্যতা আসবে না
বড় কোনও রাজনৈতিক দলের পরিচিত নেতা ট্রেনে-বাসে পথ চলছেন— ‘এই ছবি বঙ্গে বিরল বটে।’ (‘এই লাইনেই...’, ২০-১০) কমিউনিস্টসুলভ জীবনযাত্রার যে ধরন অতীতে বামপন্থার আদর্শকে নির্মাণ করেছিল, তা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেছে তেমন কথা বলছি না। ভোগবাদী জীবনযাত্রার বিপদ সম্পর্কে রীতিমত সচেতন, এমন কমিউনিস্ট নেতা-মন্ত্রীর নাম আজও উল্লেখ করা যায়। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তো বটেই, এ বঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাধারণ জীবনযাত্রার কথা লোকমুখে আজও শোনা যায়। কিন্তু হেভিওয়েট নেতা ট্রেনে চেপে এসএফআইয়ের সম্মেলনে হাজির হচ্ছেন, এ ধরনের কর্মসূচিকে জনসমক্ষে হাজির করার কথা ক’জন বামপন্থী নেতা ভাবেন? সুজনবাবুরা তাই গাড়ি-হাঁকানো দাম্ভিক বামপন্থীদেরও খানিকটা অস্বস্তিতে ঠেলে দিলেন।
রাজনীতিতে চরম বীতশ্রদ্ধ হয়েই দিন কাটাচ্ছেন এ রাজ্যের মানুষ। নানা দলে, এমনকী বামপন্থী দলেও স্থান করে নিয়েছে এক শ্রেণির অধঃপতিত মার্ক্সবাদী। রাজনৈতিক আদর্শ তো বটেই, বামপন্থীসুলভ জীবনদর্শনের প্রভাব পুনরায় গড়ে তুলতে পারলে অপছন্দের মুখগুলো ঢেকে দেওয়া সহজ হবে বলেই মনে হয়। সুজনবাবুরা কি সে আদর্শগত বামপন্থায় ফিরতে চাইছেন? মন্দ স্বভাবের ভাবুকরা যদি সুজনবাবুদের গণপরিবহণে হাজির হওয়ার বিষয়টিকে ভোট-রাজনীতির কৌশল বলে সাব্যস্ত করেন, সাধারণ জীবনযাপনের ধারাবাহিকতা গড়ে তুলে সে সমালোচনা খণ্ডন করতে হবে তাঁদের। ড্যামেজ কনট্রোল-এর শস্তা বা শর্টকাট কোনও পথে বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটবে না— এ সত্য মেনে নেওয়াই শ্রেয়।
কমিউনিস্ট সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বেচ্ছায় দারিদ্র বরণ করেছিলেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিউনিস্টসুলভ জীবনযাত্রা চেতনার যে রঙে দীপ্ত হয়ে উঠেছিল, দুঃখবরণের সে সাধনা আজকের কমিউনিস্ট জীবনে একেবারেই অবাস্তব বলে গণ্য হবে। কিন্তু সাধারণের সঙ্গে জীবনের সুখদুঃখকে ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজনটা বামপন্থী আদর্শে আজও প্রত্যাশিত। সুজনবাবুরা সে প্রত্যাশা পূরণে আগ্রহী হবেন কি না তা প্রমাণ হবে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে।
প্রাক্তন সি পি এম নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা কিছু দিন আগে সিপিএম দলের নেতৃত্বকে চাঁচাছোলা ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। সে সমালোচনায় স্নো-পাউডার মাখা, ইংরেজি-জানা বাবু কমিউনিস্টদের প্রসঙ্গ যেমন ছিল, তেমনই ঘামের গন্ধওয়ালা (‘চাচার বেটা’) নেতা-কর্মীদের কাছে টানার আকুতিও প্রকাশ পেয়েছে। প্রশ্ন, ইংরেজি-জানা, সাধারণ জীবনযাপনে দীক্ষিত নেতাকর্মীরাই যদি বামপন্থার আদর্শকে ফেরাতে পারেন, ‘চাষার বেটা’ গোছের ব্যক্তিদের পার্টিনেতৃত্বে হাজির করবার মতো অতিকমিউনিস্টসুলভ কল্পনা কি আজ আর জরুরি? কমিউনিস্ট জীবনযাত্রার যে পরম্পরা সোমনাথ লাহিড়ি, বিনয় চৌধুরিদের পার্টিজীবনে গড়ে উঠেছিল, সে জীবনবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারলে মানুষকে আজও কাছে টানা সম্ভব।
শিবাশিস দত্ত। কলকাতা-৮৪
পপুলার ফ্রন্ট কী করে
‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে (‘অসমে ধৃত ৬ জঙ্গি’, ১১-১০), তা ঠিক নয়। পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। দেশের সংবিধান ও আইনের অধীনে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রকাশ্য ভাবে সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে। এর অধীনে বা ছত্রছায়ায় অন্য কোনও সংগঠন বা মঞ্চ কাজকর্ম করে না। অন্য কোনও সংগঠন বা মঞ্চ, যারা দেশের সংবিধান ও আইনের অধীনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রকাশ্য ভাবে কাজকর্ম করে না, তাদের সঙ্গে পপুলার ফ্রন্টের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে, গোপনে বা প্রকাশ্যে কোনও যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই।
সংবাদে লেখা হয়েছে ‘হুজি, হরকত-উল-মুজাহিদিন, সিমি, আই এম বা জামাতের হয়ে কাজ করতে আসা সদস্যদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া, বাসস্থান জোগাড় করার বিষয়গুলি পি এফ আই-ই তদারক করে’। এই তথ্য ভিত্তিহীন। আই বি-র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বড়ভূমিতে সাম্প্রতিক কালে জনজাতির সংঘর্ষের পিছনেও পি এফ আই-এর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।’ এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। অসমেও অন্য কোনও সংগঠনের সঙ্গে পি এফ আই-এর কোনও সম্পর্ক নেই। পি এফ আই দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে আইনি সীমার মধ্যে সব কাজকর্ম পরিচালনা করছে।
হাসিবুল ইসলাম। রাজ্য সভাপতি, (পশ্চিমবঙ্গ) পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া
তিমি তিমিঙ্গিল
বেতারে কীভাবে শব্দ ব্যবহার করা হত, সেই প্রসঙ্গে ঋজু বসু (‘নিধিরামের স্পর্ধা ’, প্রস্তুতি, ১৪-১০) লিখেছেন, ‘তিমি তিমিঙ্গিল’ নাটকটিতে যে তিমির ডাক ব্যবহার করা হয়েছে তা সমরেশ ঘোষ কলকাতা জাদুঘর থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এটি ঠিক নয়। যে রেকর্ডটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি কাহিনিকার নারায়ণ সান্যাল তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন।
শ্বেতা সরখেল। নিউটাউনপাড়া, জলপাইগুড়ি
আমরা বাঙালি
‘কী করে বাঙালি চিনবেন’ (সম্পাদক সমীপেষু, ৮-১০) পড়লাম। এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। সেই ১৯৯৮ সালে খাবারের দাম নিয়ে পুরীতে দোকানদারের সঙ্গে আমরা ঝগড়া করেছি। এ ভাবেই উত্তরোত্তর বছরগুলিতে সিমলা, মানালিতে, হরিদ্বারে, ভাইজাগে, কন্যাকুমারীতে, গ্যাংটকে, দেওঘরে— সোয়েটার, কম্বল, রাবড়ি ও নানান খাবারের দাম এবং অন্য নানা ব্যাপারে ঝগড়া করেছি। কী ভাবে অনেক টাকা খরচ করে বেড়াতে আসা, অযাচিত ভাবে তা পাশের লোককে জানিয়েছি। এমনকী পাশের বউটির শাড়ির রংটি যে বেমানান— এ সবও গায়ে পড়ে জানাতে ভুলিনি। আমরা বাঙালি।
রুণু মুখুটি। মেমারি, বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy