কালীমূর্তি, তন্ত্র এবং স্বপ্ন
‘কালী তুমি কোথা হইতে’ শীর্ষক পত্রে (৩০-১১) নানা তন্ত্রগ্রন্থে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা দিয়ে পত্রলেখক লিখেছেন, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ওই সব গ্রন্থের কালী বর্ণনার সাহায্যেই কালীমূর্তি গড়েছেন। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেননি, শবের মতো শায়িত শিবের বুকে পা দিয়ে জিভ বার করা পরিচিত ভঙ্গির কথা। এর বর্ণনা কৃষ্ণানন্দ কোন তন্ত্রগ্রন্থ থেকে পেয়েছিলেন? এটি এই কালীমূর্তির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তন্ত্রগ্রন্থে কি তার ভাববর্ণনা পাওয়া যায়?
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কল্যাণকুমার দাশগুপ্ত লিখেছেন, কালীতন্ত্র ও স্বতন্ত্রতন্ত্র (তন্ত্রসার-এ ধৃত) অনুসারে শিব শবের মতো পড়েছিলেন, কালী তাঁর সঙ্গে বিপরীত রতি করেছিলেন।... কারণ, পরশিব অর্থাৎ অপরিবর্তনীয় শিব, যিনি শবের মতো নিষ্ক্রিয়, তাঁকে সৃষ্টিক্রিয়ার জন্য জাগ্রত করতে হলে তাঁর পত্নীকে সক্রিয় হতে হবে।... কল্পের শুরুতে নিত্যানন্দময়ী দেবী এভাবে পতিকে বশীভূত করে সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে আনন্দ পেয়েছিলেন (কর্পূরাদি স্তোত্র), এখানে শিব ও কালী যথাক্রমে অনন্তের পুরুষ ও নারী। সাংখ্যদর্শনের পুরুষ ও প্রকৃতি। পরবর্তী কালে জনরুচির স্বার্থে এই ভাবচিত্র পরিবর্তিত হয় এবং কালী সেখানে তাঁর স্বামীর বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকেন। (দ্রষ্টব্য: প্রতিমাশিল্পে হিন্দু দেবদেবী, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০০)। প্রতিমাশিল্পে এর নিদর্শন চেন্নাই মিউজিয়ামে রক্ষিত একটি কালো পাথরের ভাস্কর্যে ধরা কালীর বিপরীত মূর্তি।
আগমবাগীশের সময়কাল ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি। বাংলায় তন্ত্রসাধনার যুগ। কঠোর তন্ত্র মতে এই শবশিবা কালীর পুজো শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই সাকার মূর্তি সাধারণ মানুষের পূজিত হতে পারে না। তাই স্বাভাবিক কারণেই আগমবাগীশকে এই পরিচিত ভঙ্গির রূপকল্পনা করেই মূর্তি গড়তে হয়েছিল, তন্ত্রগ্রন্থের বিপরীত মূর্তির ভাবচিত্র অনুসারে নয়। এখানে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে ‘উর্বর কল্পনামাত্র’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় কী?
চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-৩০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy