Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
green credit project

ঋণাত্মক

কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীন ফরেস্ট অ্যাডভাইজ়রি কমিটি সম্প্রতি সবুজ সঙ্কেত দিয়াছে ‘গ্রিন ক্রেডিট’ প্রকল্পকে। যাহা ছিল একান্তই সরকারের কাজ, এই প্রকল্পের অধীনে তাহাই করিতে পারিবে কোনও বেসরকারি সংস্থা।

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

এত দিন নিয়ম ছিল, কোনও শিল্পসংস্থা বনভূমির অংশবিশেষ পরিষ্কার করিয়া ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যবহার করিলে বন দফতরকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিবে। শুধু তাহাই নহে, শিল্পসংস্থাটিকেই নির্বাচন ও অধিগ্রহণ করিতে হইবে অন্য ভূমিখণ্ড, যেখানে বন দফতর নূতন করিয়া বনসৃজন করিবেন। এই বন্দোবস্তেই বদল আসিতেছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীন ফরেস্ট অ্যাডভাইজ়রি কমিটি সম্প্রতি সবুজ সঙ্কেত দিয়াছে ‘গ্রিন ক্রেডিট’ প্রকল্পকে। যাহা ছিল একান্তই সরকারের কাজ, এই প্রকল্পের অধীনে তাহাই করিতে পারিবে কোনও বেসরকারি সংস্থা। তাহারাই জমি বাছিবে, গাছ লাগাইবে, কাজ দেখিয়া ঠিক মনে হইলে ও বন দফতরের শর্ত পূরণ করিলে তিন বৎসর পরে তাহা ‘সম্পূরক বনভূমি’র মর্যাদা পাইবে। বনভূমি হইতে লব্ধ অর্থকরী যাহা কিছুই, বেসরকারি সংস্থাটি চাহিলে তাহা লইয়া বাণিজ্য করিতে পারিবে, অপর কোনও শিল্পসংস্থা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ইহাদের নিকট হইতে সেই ভূমিখণ্ড ক্রয়ও করিতে পারিবে। অর্থাৎ বনভূমিকে দেখা হইতেছে একটি পণ্য হিসাবে। সরকারের ঘর হইতে ছাড়িয়া দিয়া, বেসরকারি হস্তে সঁপিয়া বাণিজ্যও হইল, নূতন বনসৃজনও হইল। পরিবেশ বাঁচিল, আবার শিল্পসংস্থার উন্নয়নকার্যও বহাল রাখিল!

সমস্যা রহিয়াছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যে অরণ্য কাটা পড়িল, আর সম্পূরক বনভূমি বলিয়া যাহা সৃষ্টি হইল, তাহার চরিত্র এক নহে। অরণ্য বহুমাত্রিক, তাহাতে শতসহস্র তরুলতাবৃক্ষের অবস্থিতি। বেসরকারি সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করিয়া যাহা করিবে তাহা বৃক্ষরোপণ, মূলত একই ধরনের গাছ লাগাইবার কাজ। হয়তো সমগ্র ভূমিতে সারি সারি ইউক্যালিপটাস রোপণ হইল। তাহা কি পরিণত অবস্থাতেও কখনও অরণ্যের সমান বা সমকক্ষ হইতে পারে? যে হেতু বেসরকারি সংস্থার গাছ লালনপালন করিয়া বড় করিবার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বরাদ্দ, তাই নানান প্রজাতির গাছ না লাগাইয়া একটি-দুইটি প্রজাতির গাছ— যাহারা অনায়াসে বা অল্প আয়াসে বড় হয়— লাগাইবার প্রবণতা থাকিবে। গত বৎসর প্রকাশিত ‘স্টেট অব ফরেস্ট রিপোর্ট’ হইতে প্রাপ্ত তথ্য, দেশে সবুজের বিস্তৃতি বাড়িয়াছে। এই সবুজের মধ্যে অনেকাংশেই কিন্তু বাণিজ্যিক বৃক্ষরোপণ; প্রকৃত অর্থে ‘গভীর অরণ্য’ যাহা, তাহার পরিধি ক্রমেই কমিতেছে। গ্রিন ক্রেডিট দিয়া বেসরকারি সংস্থাকে কাজ ছাড়িয়া দিলে বৃক্ষরোপণ হইবে বটে, বনসৃজন কতখানি হইবে বলা মুশকিল। অরণ্য কেবল অক্সিজেনই দেয় না, বহুবিধ প্রাণকে আশ্রয় দেয়, জীববৈচিত্রকে ধরিয়া রাখে। একধর্মী বৃক্ষরোপণে শত প্রাণের পরিপুষ্টি সাধন অসম্ভব।

বাণিজ্যিক দিকটি লইয়াও নিঃসন্দেহ হওয়া যাইতেছে না। যে বেসরকারি বা শিল্পসংস্থা এই কাজে যোগ দিবে, তাহাদের সামগ্রিক দায়বদ্ধতা থাকিবে তো? অরণ্যবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষিত হইবে তো? বন দফতর এত সব নজরে রাখিতে গিয়া নিজেদের কার্যে পিছাইয়া পড়িলেও গোল বাধিবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণ লইয়া বিতর্ক কম নাই। তাহার উপরে আছে পছন্দের বেসরকারি সংস্থাকে ‘পাইয়া দিবার’ অভিযোগ, যাহা আদৌ ভিত্তিহীন নহে। সমস্ত সামলাইয়া সবুজের অভিযান সফল হইবে কি না, প্রশ্নচিহ্ন থাকিয়া গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Green credit project Forest Advisory Committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE