এবি ডিভিলিয়ার্স।
এবি ডিভিলিয়ার্স ২৩ মে ঘোষণা করিলেন, তিনি ক্রিকেট হইতে অবসর লইতেছেন। দর্শককে স্তম্ভিত করিয়া দেওয়া এই খেলোয়াড়ের প্রিয় অভ্যাস, মাঠে তাঁহার অতিমানবিক ও অভিনব স্ট্রোক বা ফিল্ডিং দেখিয়া কোটি কোটি মানুষ প্রায় মূর্ছিত হইবেন— ইহাকে তিনি প্রায় নিয়ম করিয়া ফেলিয়াছিলেন। তাঁহাকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানেরই কিছু এলাকায় বল পাঠাইবার বিশেষ ক্ষমতা থাকে, কিন্তু ইনি মাঠের যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও কোণে বল পাঠাইতে পারিতেন। কয়েক দিন পূর্বে, এই আইপিএল-এই, বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করাকালীন, তিনি হাসিতে হাসিতে উড়িয়া গিয়া এমন একটি ক্যাচ ধরিলেন, সকলেই স্বপ্ন না বাস্তব বিচারার্থে আত্মচিমটি কাটিতে লাগিল। তাঁহার রেকর্ডও অঘটনঘটনপটীয়ান ভাবমূর্তির সহিত সমঞ্জস। তিনি একদিবসীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০ করিয়াছেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসাবে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরি তাঁহার, দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসাবে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরিও। একদিবসীয় ম্যাচে তাঁহার রানের সংখ্যা ৫০০০-এর অধিক, গড় ৫০-এর উপর, স্ট্রাইক রেট ১০০-র উপর। সাধে কী তাঁহার এক ভক্ত এই অবসরের পর লিখিয়াছেন, কমিক্স ও চলচ্চিত্রের সুপারহিরোদের তালিকায় আর একটি নাম যোগ করা হউক। এক জন লিখিয়াছেন, অবসরের সিদ্ধান্তে এমন দুঃখ হইতেছে, যেন প্রেমিকার সহিত অন্যের বিবাহ হইয়া যাইল। অন্য এক জন: ক্রমবর্ধমান পেট্রল-মূল্য হইতে মনোযোগ সরাইয়া লইবার জন্যই এই চক্রান্ত!
২২ মে ফিলিপ রথ-এর জীবনাবসান হইল। মার্কিন এই লেখক প্রকাণ্ড বিখ্যাত, নোবেল ব্যতীত যতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার রহিয়াছে, প্রায় প্রতিটিই পাইয়াছেন, কয়েকটি একাধিক বার। তাঁহার বই নিয়মিত প্রকাশিত হইয়া অসংখ্য উত্তেজিত আলোচনার, উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিয়াছে। ১৯৫৯ হইতে তাঁহার বই প্রকাশিত হইতেছে, মোট ৩১টি লিখিয়াছেন, তাঁহার নিয়মিত ও সর্বস্ব-উপেক্ষাকারী সাহিত্যসাধনাও কিংবদন্তি। খ্যাতি পাইয়াছিলেন বহু পূর্বেই, তাঁহার প্রথম বইটিই একটি পুরস্কার জিতিয়াছিল, ১৯৬৯ সালে তাঁহার চতুর্থ বই পোর্টনয়’স কমপ্লেন্ট হইহই ফেলিয়া দেয়। এই বইয়ে বর্ণিত কেন্দ্রীয় চরিত্র যে পরিমাণ স্বমেহনে ব্যস্ত থাকে ও চতুষ্পার্শ্বের জগৎ ও জীবন সম্পর্কে তিক্ত ধারণার বিচ্ছুরণ ঘটাইতে থাকে, তাহা অনেকেরই হজম হয় নাই। রথকে নারীবিদ্বেষী, যৌনতায় অত্যাসক্ত, আত্মঘৃণাকারীও বলা হইয়াছে, কিন্তু তাঁহার নূতন বই লিখিবার ক্ষমতা কমে নাই। এই লেখক, যিনি সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও বই লিখিলেই তাহা খবর, এবং লিখিতেছিলেনও প্রায় প্রতি বৎসরে একটি, ২০১২ সালে অবসর ঘোষণা করিলেন। রথ বাঁচিয়া থাকিবেন, অথচ লিখিবেন না, তাঁহার রথচক্রের ঘর্ঘর মার্কিন সমাজ ও মূল্যবোধগুলিকে ক্রমাগত প্রশ্নের সম্ুখে ফেলিবে না— বহু পাঠকের নিকট ইহা মহাবিপর্যয়। তবু উনি অবসর ভাঙেন নাই।
যখন ভোক্তা ভাবিতেছেন, ইঁহার আরও অনেক কিছু দিবার অাছে, তখন শিল্পী বা ক্রীড়াবিদ বা স্রষ্টা স্বয়ং ভাবিতেছেন: জ্বালানি ফুরাইয়াছে, সরিয়া দাঁড়ানোই ভাল— ইহা ধারণা করাও কষ্টকর। যে লোক অসামান্য খ্যাতি ভোগ করিয়াছে, যে কোথাও যাইয়া দাঁড়াইলেই সহস্র ফ্ল্যাশবাল্ব জ্বলিয়া উঠিয়াছে ও বারেক স্পর্শ করিতে বা সই লইতে হুড়াহুড়ি পড়িয়াছে, সে স্বেচ্ছায় এই প্রবল তৃপ্তি ফেলিয়া যায় কী করিয়া? সর্বোপরি, যাহা সেই মানুষটির জীবনের সর্বাপেক্ষা অনুরাগের ও সাধনার ধন, সেই জীবনানন্দের উৎসটি ছাড়িয়া তিনি বাঁচিবেন কী রূপে, জীবনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হইবে তাহা ভরাইবেন কী করিয়া? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়া যায় না বলিয়াই হয়তো অধিকাংশ শিল্পীই আমৃত্যু কাজ করিয়া চলেন, সে তাঁহার পাঠক-দর্শক-শ্রোতারা যতই ‘নিজেকে পুনরাবৃত্ত করিতেছে’ বলিয়া ললাটে করাঘাত করুন। বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটারকেও দেখা গিয়াছে, পরবর্তী রেকর্ডের পানে চাহিয়া নিজ অতীত ফর্ম ফিরিয়া পাইবার আত্যন্তিক অথচ নিষ্ফল চেষ্টা চালাইয়া যাইতেছেন, যে গ্যালারি তাঁহাকে দেখিয়া মোহিত হইত তাহা হইতেই বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি উত্থিত হইতেছে। সেই দুনিয়ায়, যাঁহারা অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে হেলায় কলম বা ব্যাট নামাইয়া চলিয়া যাইতে পারেন, তাঁহারা কেবল এই ক্ষমতাটুকুর জন্যই একটি অতিরিক্ত প্রণামের যোগ্য।
যৎকিঞ্চিৎ
মাংস ভাগাড়ের। সব্জি কীটনাশক ও রাসায়নিকের জেরে বিষাক্ত। মিষ্টিতে ক্ষতিকর রং। ফলের ‘পালিশ’ সর্বনাশা, আর বাদুড়ের দংশনদাগ থাকলে তো চিত্তির! তা হলে মানুষ খাবে কী? হাওয়া? তা-ও দূষণের চোটে ভয়ঙ্কর। অর্থাৎ, রাষ্ট্র থেকে, না খেয়ে ও শ্বাস না নিয়ে মরে যেতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য তাতে ভোটে কমতি পড়বে না, বরং এক এক জন জীবিত গুন্ডা হাজারখানেক মৃতের ছাপ্পা ভোট দিয়ে দেবে অনায়াসে। কিন্তু, তারা খাবে কী? কেন, চিট ফান্ডের টাকা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy