লক্ষ্মী অগ্রবাল
তিনি অ্যাসিড-আক্রান্ত। তিনি ভারতে ‘স্টপসেল অ্যাসিড’ আন্দোলনের অন্যতম মুখও। লক্ষ্মী অগ্রবাল সম্প্রতি কলিকাতা ঘুরিয়া গেলেন। এই সফর তাঁহার আন্দোলনেরই অংশ। দেশে অ্যাসিড বিক্রয় নিষিদ্ধ করিবার আন্দোলন। ইতিপূর্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরিয়া তিনি অ্যাসিড বিক্রয় বন্ধ করিবার ডাক দিয়াছেন। উদ্দেশ্য, মেয়েদের উপর অ্যাসিড হামলার বাড়বাড়ন্ত প্রতিহত করা। মাত্র পনেরো বৎসর বয়সেই লক্ষ্মী দিল্লিতে অ্যাসিড হামলার শিকার হইয়াছিলেন। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ষকাল পরই তিনি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন, অ্যাসিড বিক্রি নিষিদ্ধ করিবার লক্ষ্যে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসিড বিক্রির উপর একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নূতন নিয়মে বলা হয়, আঠারো বৎসরের কম বয়সি কাহাকেও অ্যাসিড বিক্রয় করা যাইবে না। এবং অ্যাসিড ক্রয় করিবার জন্য ক্রেতাকে সচিত্র পরিচয়পত্র জমা দিতে হইবে। পরবর্তী কালে অ্যাসিড আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ ক্ষতিপূরণও দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার্য করা হয়।
এতৎসত্ত্বেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায় নাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় প্রতি নিয়ত অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা সংবাদ শিরোনামে উঠিয়া আসে। নিয়ম রহিয়া গিয়াছে খাতায়-কলমেই, তাহাকে বাস্তবে প্রয়োগ করিবার মতো উদ্যোগ কেন্দ্র, রাজ্য, কোনও সরকারেরই নাই। খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রয়ে রাশ টানা সর্বত্র সম্ভব হয় নাই। যেখানে সম্ভব হইয়াছে, সেখানেও চোরাগোপ্তা পথে তাহা ক্রেতার হস্তগত হইতেছে। অ্যাসিডের মতো অল্প দামের একটি অস্ত্র, বস্তুত মারণাস্ত্র, হাতের কাছে মজুত রাখিলে তাহার অপব্যবহার হইতে বাধ্য। তাহাই হইতেছে। অন্য রাজ্যের মতো এই রাজ্যেও অ্যাসিড হানার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে। অথচ এখানে অ্যাসিড ক্রয় এবং বিক্রয়ের নিয়মটি যথেষ্ট কড়া। অ্যাসিড বিক্রয়ের জন্য সর্বাগ্রে জেলাশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স লওয়া প্রয়োজন। তদুপরি, বিক্রেতাকে ক্রেতার নাম-ঠিকানা, উদ্দেশ্য লিখিয়া তাঁহাকে স্বাক্ষর করাইয়া লইতে হয়। কিন্তু এই শেষোক্ত নিয়মটি কত দূর পালন করা হইবে, তাহা কার্যত বিক্রেতার সদিচ্ছার উপরই ছাড়িয়া রাখা হইয়াছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, বহু বিক্রেতা এ হেন নিয়মের অস্তিত্ব সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল নহেন। তাঁহারা সতর্ক হইবেন কী উপায়ে? সুতরাং, যুগপৎ নজরদারি এবং সচেতনতার অভাবের বিষফলটি ভোগ করিতেছে রাজ্যের অ্যাসিড আক্রান্তরা।
অথচ, অ্যাসিডের মতো বস্তুর ক্ষেত্রে নজরদারির গুরুত্ব ছিল সমধিক। ঘরের বিবিধ কাজে অ্যাসিড ব্যবহারের অভ্যাসটি অনেকেই ছাড়িতে পারেন নাই। সুতরাং, কে ক্রয় করিতেছেন এবং কী উদ্দেশ্যে ক্রয় করিতেছেন, তাহার তথ্য জমা রাখিবার প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনটি অবহেলা করিবার মতো নহে। অ্যাসিড শুধুমাত্র তো আক্রান্তকে শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, মনটিকেও সারা জীবনের মতো ক্ষতবিক্ষত করিয়া ছাড়ে। লক্ষ্মী সেই ক্ষত সামলাইয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইয়াছেন। কিন্তু অগণিত মেয়ে তাহা পারেন নাই। সরকার নিয়ম করিয়াছে। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করিয়াছে। কিন্তু সেই নিয়মকে কড়া ভাবে প্রয়োগ করিয়া আক্রান্তদের ভরসা জোগাইতে পারে নাই। লক্ষ্মীর লড়াই সেই ভরসা জোগাইবার কাজটিই করিতেছে। ইহা শিক্ষণীয় বইকি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy