Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

হুঁশিয়ারি বৃথা যাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী বুঝছেন কি?

এমনকি, শুক্রবার ভর্তি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র সংসদ দখলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয় দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে। ওই ঘটনায় নিগৃহীত পড়ুয়াদের কয়েকজন শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বহু বার অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংগঠনকে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বহু বার অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংগঠনকে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

হুঁশিয়ারি বৃথা যাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী বুঝছেন কি?

অসুখ আরও গভীরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনীতির মূলধারায় যে অসুখ বাসা বেধেছিল আগেই, সে যেন এ বার তার শিকড় আরও গভীরে নিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র রাজনীতিতে কলুষ ক্রমশ বাড়ছে। সেই কলুষই সম্ভবত প্রধান বাধা অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার সাফল্যের পথে।

কলেজে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া অনলাইন করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ভর্তি ঘিরে দুর্নীতি বা স্বজনপোষণ এবং তার জেরে অশান্তি ঠেকাতেই মূলত এই পদক্ষেপ। কিন্তু, তাতে ভর্তির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা কি এসেছে? টাকা নিয়ে অবৈধ ভাবে ছাত্র ভর্তির কারবার কি থেমেছে? রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনও সম্ভবত জোর গলায় স্বচ্ছতার দাবি করতে পারবে না। কারণ, কলেজে কলেজে ব্যানার ঝুলিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদকেই এখনও প্রচার চালাতে হচ্ছে টাকার বিনিময়ে ভর্তির বিরুদ্ধে। অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়া সফলভাবে চালু করার চেষ্টা নতুন নয়। ব্রাত্য বসু শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী থাকাকালীনই চেষ্টা শুরু হয়েছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় চেষ্টা বহাল রেখেছেন। কাগজে-কলমে কলেজগুলির ভর্তি প্রক্রিয়া এখন অনলাইনই। কিন্তু, বন্দোবস্ত নিশ্ছিদ্র নয়। ফলে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে বিস্তর। কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক পড়ুয়ারা কলেজ চত্বরে পা রাখা মাত্রই তাঁদের ধরে ফেলছে ছাত্র সংসদ অথবা ছাত্র সংগঠনের ‘দাদারা’। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সংসদ কক্ষে অথবা সংগঠনের কার্যালয়ে। টাকা না দিলে অনলাইন ভর্তিও সম্ভব হবে না, এমন শাসানি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন কলেজ থেকে অভিযোগ আসছে এই রকমই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এ রাজ্যের কলেজগুলিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাপট এখন একচ্ছত্র। কলেজে কলেজে অভিযোগের আঙুলও অতএব তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকেই। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বহুবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংগঠনকে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছেন, ছাত্র ভর্তিকে ঘিরে টাকাপয়সার লেনদেনের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বও পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তাও টাকা আদায় থামছে না। টাকার বখরা ঘিরে অথবা টাকার উৎসের দখল হাতে পেতে একই ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠী পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। খাস কলকাতার একাধিক কলেজে সম্প্রতি এই রকম ঘটনা ঘটে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

এ রাজ্যে রাজনীতি ঘিরে হিংসা প্রায় পরম্পরা হয়ে উঠেছে। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার সবচেয়ে বড় নমুনা আমরা পেয়েছি। পঞ্চায়েত হাতে থাকলে যে বিপুল অর্থের উৎস হাতে থাকে, সেই বিপুল অর্থভাণ্ডারের জন্যই মূলত এত মারামারি। কলেজগুলির মারামারিও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে টাকার দখলের কথা মাথায় রেখেই।

আরও পড়ুন
জুলুম বহাল, তবু মন্ত্রীর সায় নেই কেন্দ্রীয় অনলাইনে

কঠোর বার্তা অনেক দিয়েছেন, ছাত্র ভর্তি নিয়ে অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলেও শিক্ষামন্ত্রী একাধিক বার জানিয়েছেন, গোলমাল বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেই সম্প্রতি শিক্ষাবিভাগ পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে। তবে সে পদক্ষেপে খুব কাজ হচ্ছে, এমনটা বলা কঠিন। অনলাইন ভর্তির বন্দোবস্তকে নিশ্ছিদ্র করে তোলাই এই অনিয়ম তথা সংঘর্ষ রোখার একমাত্র পথ। কলেজে কলেজে আলাদা ভাবে ভর্তির বন্দোবস্ত না রেখে শিক্ষাবিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যাবে বলে অনেকে আশা প্রকাশ করছেন।

অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়াকে আরও নিশ্ছিদ্র করা হবে কি না, সংঘর্ষ রুখতে রাজ্য সরকার আদৌ সচেষ্ট কি না, তার উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু, মূলধারার রাজনীতির কলুষ ছাত্ররাজনীতিতেও সাংঘাতিক ভাবে ঢুকে গিয়েছে বলে যে চর্চা শুরু হয়েছে, তা বেশ উদ্বেগজনক। ছাত্র রাজনীতিতে যদি এ ভাবে থাবা বসাতে থাকে অবক্ষয় ও দুর্নীতির প্রবণতা, তা হলে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তান্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE