Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যয়

তাপমাত্রা বাড়িবার ফলে ধান, গম ও ভুট্টার ফলন কমিবে, আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তাপমাত্রার হেরফেরের জন্য রবি ফসলের ক্ষতি, এবং বৃষ্টির অনিশ্চয়তার জন্য খরিফ ফসলে ক্ষতি হইতেছে, তাহা এখনই স্পষ্ট। একটি হিসাব, জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য প্রতি বছর কৃষি উৎপাদনের ৪ থেকে ৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে, যাহার জন্য দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের দেড় শতাংশ নষ্ট হইতেছে।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তাহা হইতে জীবিকার বিপর্যয়। কেরলে কৃষিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরাইতে লাগিবে অন্তত কুড়ি হাজার কোটি টাকা। ইহাও সম্পূর্ণ হিসাব নহে। ধান প্রভৃতি খাদ্যশস্যের ফলন দুই-তিন বৎসরে স্বাভাবিক হইতেও পারে। কিন্তু গোলমরিচের ফলন পাইতে লাগিবে অন্তত চার বৎসর, রবার পাইতে সাত বৎসর, নারকেল ফলিতে দশ বৎসর। গবাদি পশু হারাইবার ক্ষতিও দ্রুত মিটিবার নহে। কৃষির এই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতির সাক্ষ্য এ রাজ্যও ইতিপূর্বে পাইয়াছে। আয়লা ঝড়ে সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকায় জমি ও জলাধারগুলি লবণাক্ত হইয়া পড়ে। ধান ও সব্জি উৎপাদন দীর্ঘ দিন ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছিল, মাছ চাষ প্রায় বন্ধ হইয়াছিল, ঘাসও বিরল হইবার ফলে পশুপালন অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছিল। জীবিকার সন্ধানে ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে চলিয়া যান পুরুষরা, তাহার সামাজিক ক্ষত আজও বহন করিতেছে গোসাবা, বাসন্তী, হিঙ্গলগঞ্জের চাষি পরিবার। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতি-উষ্ণতা, অতি-বর্ষণ, অতি-শৈত্য অবধারিত, এবং তাহাতে কৃষির ক্ষতিও নিশ্চিত। গত কয়েক দশকে ভারতে মৌসুমি বায়ুবাহিত বৃষ্টির আগমন, পরিমাণ এবং মেয়াদ কত দূর বদলাইয়াছে, গ্রীষ্ম ও শীতের গড় তাপমাত্রা কত বদলাইয়াছে, তাহা নথিভুক্ত হইয়াছে।

তাপমাত্রা বাড়িবার ফলে ধান, গম ও ভুট্টার ফলন কমিবে, আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তাপমাত্রার হেরফেরের জন্য রবি ফসলের ক্ষতি, এবং বৃষ্টির অনিশ্চয়তার জন্য খরিফ ফসলে ক্ষতি হইতেছে, তাহা এখনই স্পষ্ট। একটি হিসাব, জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য প্রতি বছর কৃষি উৎপাদনের ৪ থেকে ৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে, যাহার জন্য দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের দেড় শতাংশ নষ্ট হইতেছে। ইহার সহিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় যুক্ত হইলে ক্ষতির পরিমাণ কত হইবে, আন্দাজ করা দুঃসাধ্য নহে। আরও ভয়ানক সত্য এই যে, এমন বিপর্যয় হইবে ধারাবাহিক। দুই বৎসর পূর্বে প্রবল খরায় দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠিয়াছিল। কৃষিঋণ মকুব-সহ নানা আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়াও চাষির ক্ষোভ প্রশমিত হয় নাই। তাহার রেশ না কাটিতে কেরলের বন্যা এক মস্ত প্রশ্ন লইয়া আসিল। চাষির সুরক্ষার নীতি কী? কেন্দ্রের অনুদান বা বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ লইয়া চাষির তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানো যাইতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর চাষির পুনর্বাসনের কাজটি বহুমাত্রিক, তাহার জন্য আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন।

সে প্রস্তুতির উপায় কী? প্রথমত, দূষণ বাড়াইলে উষ্ণায়ন বাড়িবে। তাই কৃষি বা পশুপালন হইতে অতিরিক্ত মিথেন গ্যাস, বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্রকণা উৎপাদন রুখিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষির সাযুজ্য রাখিতে হইবে। উত্তম বর্ষার পূর্বাভাস থাকিলে কী করিতে হইবে, সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনায় চাষির কী কর্তব্য, তাহার রূপরেখা দরকার। ঝুঁকি কমাইলে লাভ বাড়িবে। সর্বোপরি, কৃষিবিমা দ্রুত ও কার্যকর করিতে হইবে, যাহাতে পরবর্তী চাষের পূর্বেই কৃষক বিপর্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ পাইতে পারে। কেবল চাষির বোঝা লাঘব করিলেই হইবে না, রাজকোষের অপচয়ও রোধ করিতে হইবে। নচেৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয় উন্নয়নের সকল লাভ ভাসাইয়া দিবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Flood Kerala Flood Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE