Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঞ্ছনীয়

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফে ভোটে অংশগ্রহণের ঘোষণার মধ্যে যে খানিক দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ছিল না, তাহা নহে। তবে ফ্রন্টের অন্তর্গত এক পক্ষের মতে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখিবার জন্যই ভোট হইতে মুখ ঘুরাইয়া রাখা নির্বুদ্ধিতা।

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:০৭
Share: Save:

গণতন্ত্র বস্তুটি অনেক সময়ই সুখপাচ্য নহে। কিন্তু এই বিশ্বে যে কয়েকটি বস্তু ফলের কথা ভাবিয়া বিচার করিতে নাই, কেবল চরিত্র কিংবা পদ্ধতির দিক দিয়াই বিচার্যমাত্র, তাহার মধ্যে অন্যতম, গণতন্ত্র। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কথাটি স্মরণে রাখা দরকার। সে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি হয়তো আসন্ন একাদশতম জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে চলিয়াছে, এই ঘোষণা শুনিবার পর তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ফিরিবার আশায় প্রসন্ন বোধ করিতে হয়। আওয়ামি লিগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁহার দেশের রাজনীতির অন্যতম কঠিন পর্ব কতখানি সাফল্যের সহিত পার হইয়াছেন, তাহা লইয়া তর্ক থাকিতে পারে। তাঁহার দলের বিবিধ কর্মকাণ্ডের ন্যায়-অন্যায় লইয়া বিতর্কের অবকাশ থাকিতে পারে। তাঁহার সরকার যে দক্ষতার সহিত রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো বিশালাকার আন্তর্জাতিক সঙ্কটের মোকাবিলা করিয়াছে, তাহা প্রশংসাযোগ্য ঠেকিতে পারে। কিন্তু একটি বিষয়ে খুঁত হাসিনা সরকার শত ইচ্ছা করিলেও ইতিহাসের পৃষ্ঠা হইতে মুছিতে পারিবে না। সে খুঁত হইল— বিরোধীশূন্য অবস্থায় গত নির্বাচনটি পার হইয়া আসিবার অভিজ্ঞতা। সে বারে বিএনপি অংশ লয় নাই বলিয়া সম্পূর্ণ একপাক্ষিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন সংঘটিত হয়। আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা ওই নির্বাচনকে ত্রুটিযুক্ত বলিয়া নির্দেশ করিয়াছিলেন। দুর্নাম অপনোদনের এখন একটিই পথ। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যে একাদিক্রমে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হইবার আশা করিতেছেন, বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে সঙ্গত পথে জিতিয়া আসিয়া সেই লক্ষ্য পূর্ণ করা। সম্ভবত সেই কথা ভাবিয়াই ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী ভোটে বিরোধী দলের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাইয়াছেন, এবং প্রয়োজনে নির্বাচন পিছাইবার পক্ষে মত দিয়াছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফে ভোটে অংশগ্রহণের ঘোষণার মধ্যে যে খানিক দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ছিল না, তাহা নহে। তবে ফ্রন্টের অন্তর্গত এক পক্ষের মতে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকাইয়া রাখিবার জন্যই ভোট হইতে মুখ ঘুরাইয়া রাখা নির্বুদ্ধিতা। প্রথমত সরকারের গ্রেফতারের সংখ্যা ও মাত্রা সম্প্রতি যে ভাবে বাড়িতেছে, তাহাতে বিরোধী নেতৃত্বের সামনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক ছাড়া অন্য পথ খোলা নাই। কয়েক মাস আগে ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও ব্যাপক ভাবে ধৃত ও কারান্তরিন হইয়াছেন। দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক ভাবে তাঁহারা কখনওই এতটা দুর্বল ও কোণঠাসা বোধ করেন নাই। মনে না রাখিয়া উপায় নাই, এমনকি নেত্রী খালেদা জ়িয়ার গ্রেফতারের পরও তাঁহারা কার্যত কোনও আন্দোলন তৈরি করিতে পারেন নাই, সরকারি দার্ঢ্যের সামনে তাঁহাদের সংগঠন প্রয়াস চুরমার হইয়া যায়। অর্থাৎ রাজনীতির খাতিরেই এখন বিএনপি-র সামনে একটিই পথ: খোলাখুলি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

আওয়ামি লিগের পক্ষেও ইহাই মঙ্গলজনক পথ। কেবল দূর ইতিহাস নয়, নিকট ইতিহাসও বলিয়া দিতেছে যে, দলই হউক আর ব্যক্তিই হউক, ক্ষমতার প্রতাপ যদি একচ্ছত্র হয়, তাহার বিরোধিতা এক দিন না এক দিন মাথা তুলিয়া উঠিবেই। একমাত্র গণতন্ত্রেরই সেই ক্ষমতা আছে, যাহা নৈরাজ্য বা সঙ্কটের মতো চরম দশার মুখোমুখি না করিয়া রাজনৈতিক বিরোধিতাকে সংবিধানসম্মত পথে চালিত করিতে পারে। বিএনপির মাধ্যমে কট্টরপন্থী রাজনীতি বাংলাদেশের সমাজে মান্যতা পাইবে, ইহা নিশ্চিত। কিন্তু বিএনপি-কে ধারাবাহিক ভাবে অবৈধ ও অস্বীকৃত রাখিলে কট্টরপন্থী রাজনীতি সেই দেশের সমাজকে কোনও না কোনও দিন ফুঁড়িয়া দিবে, ইহা আরও বেশি নিশ্চিত। মিশর হইতে সিরিয়া, কিংবা তুরস্ক, প্রমাণ নানা দিকে ছড়াইয়া। তাই, বিবিধ রাজনৈতিক মতাদর্শ সাংবিধানিক পথে পরস্পরের মোকাবিলা করুক, ইহাই বাঞ্ছনীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Bangladesh Awami League BNP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE