Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Editorial news

নৈরাজ্যের এই গ্রাস যে কোনও মূল্যে থামান

দায় কার? গলদটা ঠিক কোথায়? কিছুতেই উত্তর মিলছে না যেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫১
Share: Save:

বার বার একই বার্তা রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে আর উপর্যুপরি সে বার্তার লঙ্ঘন। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রী, বার বার সতর্কবার্তা দিচ্ছেন শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আর সে সব বার্তার অনুরণন মিলিয়ে যাওয়ার আগেই কোনও না কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তাল হয়ে উঠছে। দায় কার? গলদটা ঠিক কোথায়? কিছুতেই উত্তর মিলছে না যেন।

এ বারের বিশৃঙ্খলাস্থল নদিয়ার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন পদাধিকারীর অপসারণ দাবি করে আন্দোলনে পড়ুয়ারা, অবস্থান উপাচার্যের দফতরের সামনে। তার পরে আচমকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহিরাগতদের তাণ্ডবের অভিযোগ। পড়ুয়াদের বেধড়ক মারধর, ভাঙচুর, ছাত্রী হস্টেলে হামলা এবং শেষে বোমাবাজি-গুলি। আন্দোলন করছিলেন যে পড়ুয়ারা, তাঁদের অভিযোগ অন্তত সে রকমই।

আক্রান্তদের আঙুল এ বারও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধেই। উপাচার্য কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভয়াবহ তাণ্ডবের নেপথ্যে ‘কোনও রাজনৈতিক বিষয়’ রয়েছে বলে তিনিও মনে করছেন।

আরও পড়ুন: পুলিশের সামনেই বহিরাগতদের তাণ্ডব, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা-গুলি

শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি এমন দুর্ভাগ্যজনক হয়ে উঠবে কেন? কখনও শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষ, কখনও শাসকদলের ছাত্র সংগঠনেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত, কখনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনের তীব্র রোষ, কখনও আবার বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে তাণ্ডব। প্রায় রোজ রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে এ ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর আসছে। আজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো কাল প্রেসিডেন্সি, আজ আশুতোষ কলেজ তো কাল ডেবরা কলেজ— বিশৃঙ্খলার ছবি অত্যন্ত সহজলভ্য। কী কারণে বার বার এই অবস্থা? পড়ুয়ারা সব অবাধ্য-উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছেন? নাকি কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের দাবিদাওয়া এবং চাহিদা সম্পর্কে অসংবেদনশীল হয়ে পড়েছেন? কারও না কারও ব্যর্থতা বা অপদার্থতা তো রয়েছেই। কার ব্যর্থতা, কার অপদার্থতা, কার উচ্ছৃঙ্খলতা— খুঁজে বার করা অত্যন্ত জরুরি। রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনকে এ ভাবে নৈরাজ্যের গ্রাসে চলে যেতে দেওয়া যায় না। সমস্যার গভীরে তথা শিকড়ে পৌঁছতেই হবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সমস্যা খুঁজে বার করে তার সমাধানের দায়িত্ব কে নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন, তা কারও জানা নেই। অতএব সমস্যার গভীরে এখনও পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে পেরেছেন কি না, তাও স্পষ্ট নয়। অতএব রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনের জন্য প্রায় দুরারোগ্য ব্যাধি হয়ে ওঠা এই অরাজকতার নিরাময় কী উপায়ে হবে, তাও খুব স্পষ্ট করে কারও জানা নেই। কিন্তু খুব স্পষ্ট করে সকলেরই বুঝে নেওয়া দরকার, এই বিশৃঙ্খল আবহকে স্থায়ী হতে দেওয়া যায় না। অবিলম্বে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে প্রতিটি কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে। সরকার বা প্রশাসন তার জন্য কী পদক্ষেপ করছে, তা খুব স্পষ্ট নয়। তবে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিক্ষাঙ্গনে অবিলম্বে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফেরা বাঞ্ছনীয়। সরকার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ কতদিনে সমস্যার গভীরে পৌঁছতে পারবে, তার পরে কতদিনে সঙ্কট কাটবে, সঙ্কটের নিরশন আশু নাকি অনির্দিষ্ট, এ সব প্রশ্নের কোনও জবাব আপাতত নেই। কিন্তু জবাব নেই বলে বিশৃঙ্খলা চলতে দেওয়া যায় না। প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ করুক সরকার, বজ্রমুষ্টিতে পরিস্থিতির রাশ হাতে নিক। কিন্তু অবিলম্বে নিশ্চিত করা হোক, আর কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই রকম দুর্ভাগ্যজনক ছবির মুখোমুখি দাঁড়াবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE