রাজনীতিতে কথা বড় মূল্যবান বস্তু। কথার মারপ্যাঁচ থাকতে পারে, কিন্তু কথার খেলাপ বড় সাংঘাতিক। —ফাইল চিত্র।
কথা ছিল বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসবে কালো টাকা। শুধু কথা ছিল বললে সম্ভবত একটু কমই বলা হয়, প্রতিশ্রুতি ছিল বা অঙ্গীকার ছিল। ২০১৪-র বিপুল নির্বাচনী বিজয়ের অন্য স্তম্ভ ছিল সে অঙ্গীকার। কিন্তু তার পরে কী হল? তার পরে সুইস ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারত সরকারের কথোপকথন হল, কালো টাকার মালিকদের নাম জানাতে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেল, টানাপড়েন চলতে লাগল এবং দেখতে দেখতে নতুন সরকারের চার-চারটে বছর কেটে গেল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এ বার জানালেন ২০১৯ সালে সুইস ব্যাঙ্ক আমাদের সরকারকে জানাবে, সে ব্যাঙ্কে কোন ভারতীয় কত টাকা রেখেছেন।
দিল্লির মসনদে মোদী সরকার চার বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর কালো টাকার হিসেব কষতে বসে ভারতবাসীর হাতে তা হলে কী রইল? রইল একটা পেনসিল।
শুধু সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা নয়, অসদুপায়ে অর্জিত টাকা ভারতীয় নাগরিক দেশে বা বিদেশে যেখানেই রাখুন, খুঁজে বার করা হবেই। ২০১৪ সালে এমনই ছিল নরেন্দ্র মোদী ব্রিগেডের প্রতিশ্রুতিটা। কালো টাকার সর্বনাশ হবে আর সে টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে ঢোকানো হবে, এমনও বলা হয়েছিল। ২০১৮ সালের অর্ধেকটা কাটিয়ে দেওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের মেয়াদ ফুরোতে যখন আর মাত্র এক বছর বাকি, তখন কী শোনা গেল? শোনা গেল, সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।
ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ক্ষমতায় আসার পরে প্রশাসনিক ঢক্কানিনাদ। তার পরে নোটবন্দির মতো পদক্ষেপ। কালো টাকার নাকি সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে প্রতিটা পদক্ষেপে, দাবি করা হচ্ছিল তেমনই। এই হল সেই সর্বনাশের নমুনা! সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকার পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল! এর পরে কি নরেন্দ্র মোদীও দাবি করতে পারবেন যে, তিনি দুর্নীতি দমনে সফল?
আরও পড়ুন
সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থের সব তথ্য হাতে আসবে, দাবি পীযূষ গয়ালের
খুড়োর কলের কথা মনে আসে। প্রথমে বলা হল, ক্ষমতায় এলেই দুর্নীতিতে কোপ। ক্ষমতায় এসে জানানো হল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতার মেয়াদ প্রায় শেষ ভাগে পৌঁছনোর পর বলা হচ্ছে, আসছে বছর আমরা জেনে যাব, কারা দুর্নীতিগ্রস্ত। অর্থাৎ, এ দফায় জেনে নিলাম দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকা। সামনের দফাতেও সুযোগ দিন, তা হলেই দুর্নীতির মূলোৎপাটন হবে। একটু অনুচ্চারিত ভঙ্গিতে এ কথাই যেন বলা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কি বলেছিলেন, প্রথম পাঁচ বছরে দুর্নীতির সর্বনাশ করা যাবে না? দুর্নীতিগ্রস্তদের নাম-পরিচয় জানতেই পাঁচ বছর কেটে যাবে, এমন আভাস কি দিয়েছিলেন?
রাজনীতিতে কথা বড় মূল্যবান বস্তু। কথাই সব। কথার মারপ্যাঁচ থাকতে পারে, কিন্তু কথার খেলাপ বড় সাংঘাতিক। দুর্নীতি দমন বা কালো টাকার প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীদের কথার খেলাপটা যে পর্যায়ে পৌঁছে গেল, তাতে ভাবমূর্তির ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে যায়। কেউ বলতেই পারেন, কথার খেলাপটা এ যুগের রাজনীতিতে খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু সে কথা যাঁরা বলবেন, তাঁদের মনে করিয়ে দেব, নরেন্দ্র মোদী ওই রাজনীতি করেন না বলেই তাঁর দল দাবি করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy