Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নামী-লোকাল-নলেন, কেকের বাজারে টানাটানি ত্রয়ীর

বড়দিন মানে ঝলমলে আনন্দ। বড়দিন মানে কেকও। কত রকমের কেক আসে। কত ধরনের মানুষের কথা চিন্তা করে তৈরি হয় কত রকমের কেক। বাজার ঘুরে খোঁজ দিলেন বরুণ দেবড়দিন মানে ঝলমলে আনন্দ। বড়দিন মানে কেকও। কত রকমের কেক আসে। কত ধরনের মানুষের কথা চিন্তা করে তৈরি হয় কত রকমের কেক। বাজার ঘুরে খোঁজ দিলেন বরুণ দে

প্রস্তুতি: মেদিনীপুরে বড়দিনের জন্য চলছে কেক তৈরি। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: মেদিনীপুরে বড়দিনের জন্য চলছে কেক তৈরি। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কী ভাবে কেক তৈরি হল, সে অনেক গল্প। কেক কী ভাবে বড়দিনের সঙ্গে মিশল? তার গল্পও বহু প্রাচীন। এক সময়ে নাকি বড়দিনের আগের দিনে পরিজ খাওয়া হত। দুধে বা জলে মেশানো খাদ্যশস্য সিদ্ধ হল পরিজ। পরে তাতে ধীরে ধীরে যোগ হল ফল, মধু। এল কেক। বড়দিনের সঙ্গে আগাপাশতলা জড়িয়ে গেল কেক। এখন কেক ছাড়া বড়দিন ভাবাই দুষ্কর।

বাঙালি বাড়িতেও কবে যেন ঢুকে গিয়েছে বড়দিন আর কেক। তার প্রমাণ তো ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বেকারিগুলোতে কেক তৈরির ব্যস্ততাতেই বোঝা যায়। বাজার ধরার জন্য প্রতি বছরই নতুন স্বাদ, গন্ধের কেক আনার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। সেই বাজারে আবার রয়েছে দ্বন্দ্ব।

নামী সংস্থার কেক রয়েছে বাজারে। রয়েছে স্থানীয় সংস্থার কেকও। নামীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে মেদিনীপুরের নির্মাতারা কিছু পরিবর্তন আনছে। পরিবর্তন আনছে সাইজে, প্যাকেজিংয়ে। মেদিনীপুরের বিবিগঞ্জের ‘আশাদীপ’ বেকারি। কর্ণধার গোবিন্দ কুণ্ডু বলেন, ‘‘বড় বড় ব্র্যান্ড এসেছে। তবে লোকাল ব্র্যান্ড, যারা গুণমান ঠিক রাখে তাদের একটা বাজার রয়েছে।’’ কেউ কেউ যে বলেন স্থানীয় কারখানায় মান বজায় থাকে না? এক বেকারির কর্তার কথায়, ‘‘একেবারেই ভুল কথা। আমরা একটা কোম্পানির কেমিক্যাল কিনে নিয়ে আসছি। জিএসটি নিয়ে দাম নিচ্ছে। কেমিক্যালটা এক নম্বর না দু’নম্বর আমরা জানব কি করে?’’ গোবিন্দ আরও বলছিলেন, ‘‘নামী সংস্থা শোরুম খোলে। কিন্তু আমাদের প্রোডাক্ট চলেই। তুলনায় দামও কম।’’ কেমন? তাঁর কথায়, ‘‘নামী কোম্পানির ফ্রুট কেক ২০০ গ্রামের দাম ৬০ টাকা। আমরা ২০০ গ্রামের ফ্রুট কেক ৪০ টাকায় দিচ্ছি। গুণমান বজায় রয়েছে। স্বাদ নিয়েও গ্রাহকের কোনও অভিযোগ নেই।’’

তাঁর কথায়, ‘‘নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গ্রাহকেরা কাউকে উপহার দেওয়ার সময়ে নামী সংস্থার কেকই দেন। কিন্তু অনেকেই নিজেদের বাড়ির জন্য নিয়ে যান স্থানীয় ভাবে নামী সংস্থার কেকই। কারণ তাঁরা জানেন, স্বাদে-মানে নামী সংস্থার কেকের সঙ্গে খুব একটা হেরফের হয় না। স্থানীয় বেকারিতে তৈরি কেকের দাম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা পাউন্ড। সর্বোচ্চ ৮০ টাকা। গোবিন্দ বলছিলেন, ‘‘কোনও কোনও বেকারি ৬০ টাকা কিলো কিসমিস ব্যবহার করে। আমরা করি ৩০০ টাকা কিলো। দামে ফারাকটা অনেক। তা-ও।’’

মেদিনীপুরের স্কুলবাজারে রয়েছে ‘কৃষ্ণা’ বেকারি। এই বেকারির কর্ণধার সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে প্লাম কেক আমরাই প্রথম শুরু করি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাজার বুঝে আমাদের কেক তৈরি করতে হয়। এখন শুধু প্লাম কেক নয়, ফ্রুট কেক, পেস্ট্রিরও বাজার রয়েছে। তাই আমরাও ফ্রুট কেক, পেস্ট্রি তৈরি করি।’’ সুকুমার বলেন, ‘‘কেকের মান বজায় রাখাটাই আসল কথা। তা হলে ক্রেতারা ঠিকই সঙ্গে থাকবেন।’’ মেদিনীপুরের বাজারগুলোয় ঢুঁ মেরে দেখা গেল, বড়দিনের প্লাম কেকের বাজার রয়েছে। মরসুমি কেকও রয়েছে। চকলেট কেকও স্বমহিমায়। অনেকেই দাম মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই লেগেছেন। লাভের ভাগটা এর ফলে খানিক কমই হচ্ছে। তবে বিক্রি বাড়ছে।

কেক পার্বণে হাজির নতুন নতুন কেকও। মেদিনীপুরের একাধিক বেকারিতেও এখন তৈরি হচ্ছে ভেজ কেক সুগার ফ্রি কেক, এমনকী নলেন গুড়ের কেক! গোবিন্দ কুণ্ডুরা খেজুর গুড়ের কেক বানাচ্ছেন। কেকে খেজুর গুড়ের গন্ধ থাকবে। গত বছর ভাল বিক্রি হয়েছে খেজুরের গুড়ের গন্ধ মাখা কেক। বেকারি মহলের দাবি, যতই বড় বড় সংস্থা আসুক, মেদিনীপুরে ৫০ শতাংশ ব্যবসা স্থানীয় কেক নির্মাতাদের হাতেই। সুগার ফ্রি কেক বড় বড় কোম্পানি নিয়ে এসেছে। পাল্লা দিয়ে শহরের বেকারিও নিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে চিনি তো থাকেই না। মোরব্বাও থাকে না। অনেক সময় মেডিকেটেড ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। চকলেট কেকেরও বাজার রয়েছে। অন্য ফ্লেভারের কেকও আসে। চকলেটের প্রতি ঝোঁক থাকে ছোটদের। তাই চকোলেট কেকের একটা বাজার থাকেই।

কেকে মনকাড়া সুগন্ধের একটা কদর থাকে। ফ্রুট কেকেরও বাজার থাকে। এই কেকে নানা ধরনের ফলের সমাহার থাকে। পাশাপাশি, চকলেট মাফিনস, কুইন কেকের চাহিদা থাকে। বিভিন্ন ধরনের ফ্রুট কেক বিক্রি হচ্ছে। দাম ১০০ টাকা থেকে ৫০০-৬০০ টাকা। ২০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের কেক বেশি বিক্রি হয়। মেদিনীপুরের এক কেক বিক্রেতার কথায়, ‘‘প্লাম কেক এবং ফ্রুট কেকের বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। বড়দিন যত এগিয়ে আসে, কেকের চাহিদা তত বাড়ে। এ বারও তাই।’’ সবমিলিয়ে, বাজার জমাচ্ছে রকমারি কেক।

বেকারি থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চেরি চকোলেট কেক তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ময়দা, ডিম, সাদা তেল, কোকো পাউডার, চকলেট এসেন্স, গুঁড়ো দুধ, চিনি, বেকিং সোডা। এই উপকরণে ঘরেই বানানো সম্ভব কেক। তার প্রণালী সাদামাটা। প্রথমে ডিমের সাদা অংশ থেকে সাবধানে কুসুম আলাদা করে নিতে হয়। তার পর সাদা অংশ খুব ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হয়। তাতে ওই কুসুম যোগ করতে হয়। কুসুম-সহ ডিমের সাদা অংশ আরও একবার এমনভাবে ফেটাতে হয় যাতে কুসুম ভালভাবে মিশে যায়। অনেকে সাদা অংশ ও ডিম প্রথমেই একসঙ্গে ফেটিয়ে নেন। কিন্তু এতে কেকের ঘনত্ব কমে যায়। এর পর ডিমে একটু একটু করে মেশাতে হয় চিনি ও সাদা তেল। অন্য একটি পাত্রে ময়দা, গুঁড়ো দুধ, বেকিং সোডা, কোকো পাউডার মিশিয়ে ভাল করে চেলে নিতে হয়। এর পর ডিম, চিনি, তেলের মিশ্রণে মেশাতে হয় চেলে নেওয়া গুঁড়ো দুধ, বেকিং সোডা, চকোলেট পাউডার ও ময়দার মিশ্রণ। ভাল করে মিশিয়ে চকোলেট এসেন্স ছড়িয়ে দিতে হয়। মাইক্রো আভেনে ২০০ ডিগ্রি উত্তাপে বেক করতে হয় ৩৫-৪০ মিনিট। আভেন থেকে কেক বের করে ঠান্ডা করে নিতে হয়।

বাঙালি পরিবারে কেকের প্রভাব? রাজাবাজারে এক কেকের দোকানে কাচের শোকেশে ভিতরে রাখা রং-বেরঙের কেকের দিকে তাকিয়ে ছিল বছর সাতেকের স্নেহা দাস। স্নেহার মা শতাব্দী দাসের কথায়, ‘‘মেয়ের দাবি, কেনার আগে টেস্ট করে দেখে নিতে হবে কোনটা সেরা। যেটা জিভে লাগবে বড়দিনের জন্য সেটাই স্পেশাল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Day Cake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE