প্রতীকী চিত্র।
অর্ধেক আকাশ নামে পরিচিতি তাঁর ঠিকই, কিন্তু আকাশের শুধু অর্ধেকটা তাঁর জন্য নয়, গোটা আকাশ জুড়েই ডানা মেলুন নারী— আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ঘিরে গোটা পৃথিবীর উচ্চারণটাই এই মুহূর্তে এই রকম। সমাপতনই হোক বা পরিহাস, গোটা পৃথিবী যখন আকাশ জুড়ে নারীর ডানা মেলার আয়োজন সাজাতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়েই ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে নারীর পোশাক প্রসঙ্গে সরকারি ‘ফতোয়া’।
রাজস্থানের কমিশনারেট অব কলেজ এডুকেশন নির্দেশিকা দিয়েছে জিন্স বা স্কার্ট বা ওই জাতীয় পোশাক পরে আর কলেজে ঢুকতে পারবেন না ছাত্রীরা। কলেজে যেতে হলে পরতে হবে শাড়ি অথবা সালোয়ার-কামিজ-ওড়না। কমিশনারেটের এই নিদানকে নির্দেশিকা না বলে ফতোয়া নামে অভিহিত করাই যে শ্রেয়, সে নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। উগ্রবাদী এবং ধর্মান্ধ কোনও সংগঠন, কোনও গোঁড়া ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘোষিত ভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী কোনও দল— এদের কাছ থেকে যদি আসত এমন ফতোয়া, আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকত না। কিন্তু গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত যে সরকার, তার অধীনস্থ কর্তৃপক্ষ এমন ফতোয়া দিচ্ছেন! জিন্স বা স্কার্ট পরে মেয়েরা কলেজে ঢুকতে পারবেন না— এমন ফতোয়া শিক্ষা কমিশনারেট থেকে দেওয়া হচ্ছে! ভাবতেও অস্বস্তি লাগে বেশ।
ভারতীয় সমাজের গৈরিকীকরণ চাইছে বিজেপি— এমন সমালোচনা ক্রমশ চড়া হচ্ছে দেশে। আধুনিক মূল্যবোধ নয়, দেশে প্রাচীন সামাজিকতা ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিজেপি এবং তার জন্য সর্বাগ্রে শিক্ষা ব্যবস্থার গৈরিকীকরণের চেষ্টা শুরু হয়েছে— এমন কথা অনেকেই বলছেন। বিজেপি অবশ্য সে কথা অস্বীকার করছে হলফ করে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এত দিন ভুল ইতিহাস পড়ানো হত, এ বার থেকে পড়ুয়ারা ভারতের সঠিক ইতিহাস পড়বে, বিজেপির তরফে কোথাও কোথাও এমন কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজস্থানে মেয়েদের জন্য যে পোশাক নির্দেশিকা জারি হল, তাতে সাফাই দেওয়ার সুযোগটাও সম্ভবত আর রইল না বিজেপির সামনে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এই একবিংশ শতকে এসেও মেয়েদের পোশাকে বিধিনিষেধ আরোপ! শাড়ি অথবা সালোয়ার-কামিজ-ওড়না ছাড়া অন্য কোনও পোশাকে কলেজে ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা! গণতান্ত্রিক দেশের প্রশাসন এই নির্দেশিকা জারি করল! বিষ্ময়ের ঘোর কাটতে চাইছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy