চি কিৎসক তৈয়ারি করিতে যে বিপুল সরকারি ব্যয় হয়, তাহার অবমাননা করিলে জরিমানা হইবে। এমনই নিয়ম করিল বিহার সরকার। সে রাজ্যে সরকারি খরচে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর পড়িবার শর্ত: তিন বৎসর গ্রামের হাসপাতালে কাজ করিতে হইবে। এ বার সরকার নিয়ম করিল, সেই শর্ত ভঙ্গ করিলে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে পঁচিশ লক্ষ টাকা। মাঝপথে পড়া ছাড়িবার জরিমানা পনেরো লক্ষ। স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির সময়েই এই শর্ত স্বীকার করিয়া চুক্তি সই করিতে হইবে ছাত্রছাত্রীদের। বিহার সরকারের এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক নহে। সে রাজ্যের গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ফাঁকা পড়িয়া আছে। বহু চেষ্টাতেও যথেষ্ট চিকিৎসক নিয়োগ করা যায় নাই। অপর দিকে, স্নাতকোত্তর আসনগুলির মধ্যে যেগুলি প্রায়োগিক চিকিৎসার (ক্লিনিক্যাল) আসন নহে, সেই শারীরবিদ্যা বা প্রাণ-রসায়নের মতো বিষয়গুলি মাঝপথে ছাড়িয়া পড়ুয়ারা অন্য রাজ্যে কিংবা বেসরকারি কলেজে ক্লিনিক্যাল বিষয় পড়িতে চলিয়া যায়। আসনগুলি শূন্য পড়িয়া থাকে, ফলে ওই সব বিষয়ে শিক্ষক তৈয়ারি হয় না। বিপুল সরকারি অনুদান দিয়াও যদি রাজ্যবাসীর চিকিৎসার প্রয়োজন মিটাইতে এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকের পদপূরণের কাজে সরকার ব্যর্থ হয়, তাহা চিন্তার বিষয়। করদাতার অর্থ তাহাদের স্বার্থে ব্যয় করিতে সরকার দায়বদ্ধ।
মেডিক্যাল ছাত্ররা করদাতার অর্থে পড়াশোনা করিতেছেন। স্নাতক স্তরে ছাত্রপিছু বৎসরে ন্যূনতম ৩৫-৪০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। স্নাতকোত্তর স্তরে আরও বেশি। রাজ্যবাসীর টাকায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের কি তাঁহাদের চিকিৎসার দায় নাই? ছাত্রদের আপত্তি, তাঁহাদের পড়াশোনার বিষয় ও কাজের ক্ষেত্র নির্বাচনের স্বাধীনতায় সরকার হস্তক্ষেপ করিতে পারে না। উচ্চতর প্রশিক্ষণ বা গবেষণা করিতে যিনি আগ্রহী, তাঁহাকে কেন গ্রামে গিয়া চিকিৎসা করিতে হইবে? এই বিতর্ক নূতন নহে। বিহার সরকারের সমাধানটিও সমস্যাহীন নহে। চুক্তি আরোপ করা সহজ নহে, তাহা কার্যকর করা আরও কঠিন। শর্তভঙ্গকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কি সম্ভব হইবে? চিকিৎসক সংগঠনগুলির হইচই, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আদালতে মামলা— আশঙ্কা অনেক। নানা সময়ে চিকিৎসকদের বিশৃঙ্খলা রুখিতে গিয়াও পিছাইতে হইয়াছে প্রায় সব রাজ্যের সরকারকে। শাস্তি প্রত্যাহার করিতে হইয়াছে। সেই ইতিহাস মাথায় রাখিলে সন্দেহ হয়, চুক্তি করিয়া চিকিৎসক ধরিয়া রাখিবার লক্ষ্যপূরণ হইবে কি?
সরকারি নিয়মের নিগড়ে ইহার সমাধান সম্ভব নহে। তাকাইতে হইবে আইআইটি, আইআইএম-এর মতো প্রতিষ্ঠানের নিয়মের দিকে। সেগুলিতেও পড়াশোনা ব্যয়সাধ্য, কিন্তু সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা রহিয়াছে। যাহাতে ছাত্ররা কাজ করিয়া তাহা পরিশোধ করিতে পারেন। পশ্চিমের অনেক দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা বেতন মিটাইতে শিক্ষাঋণ লইয়া থাকে পড়ুয়ারা। চিকিৎসাবিদ্যা একটি পেশাগত প্রশিক্ষণ। তাহাতে রোজগারের সম্ভাবনা যথেষ্ট, সরকারি চাকরি-সহ নিয়োগের সম্ভাবনারও অভাব নাই। অতএব সহজ, নমনীয় শর্তে ঋণ লইয়া সকল ছাত্রই পড়াশোনা করিলে ভাল। তাহাতে তাঁহাদের উপর নৈতিক দায় চাপিবে না, করদাতাও প্রতারিত অনুভব করিবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy