Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

রাজধর্ম পালিত না হলে বিপন্ন হবে গণতন্ত্রই

চ্যুতিই যদি অবাধ নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, তবে কী হয় গিরিরাজ সিংহেরা সেটা দেখিয়ে চলেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া এক মন্ত্রী রাখঢাক না করে প্রকাশ্যে বলেছেন, যে সব জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশি, সেই সব জেলায় জাতীয়তাবাদ বিপন্ন!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:৪০
Share: Save:

এক যে ছিলেন ষষ্ঠীচরণ, যিনি খেলার ছলে যখন তখন হাতি লুফতেন। আর এক আছেন যোগী আদিত্যনাথ, যিনি সম্প্রতি লোফালুফি শুরু করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটাকে নিয়ে। স্বাধীন ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটার চেয়ে বড় মিথ্যা নাকি আর কিছু হয় না। লোফালুফি এখানেই শেষ হয়ে গেল, এই যাঁরা ভাবছিলেন, তাঁরা বিস্মিত হবেন না, এ বার ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়টাকে নিয়েই খেলা শুরু করলেন কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রী। বিজেপি নেতা, মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের গর্জন শোনা গেল, ভারতে গণতন্ত্র নিরাপদ, কারণ হিন্দুরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এই বক্তব্যগুলোকে অর্বাচীনের প্রলাপ বলে তবু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতাম, যদি দেখা যেত সর্বোচ্চ স্তর থেকে তীব্র তিরস্কার নেমে আসছে এই মন্তব্যগুলোর জন্য। অথবা যদি শোনা যেত জলদমন্দ্র কণ্ঠে মনের কথা, হে মিত্রেরা, এই নেতাদের বক্তব্য নিন্দার্হ। ভারত ধর্মনিরপেক্ষতারই সাধনা করে, সেখানে কোনও চ্যুতি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দুর্ভাগ্যজনক, শোনা যাচ্ছে না সেই কণ্ঠ, মৌনে সম্মতির লক্ষণই যেন অনুরণিত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রাঙ্গণে। এবং সেখানেই আশঙ্কা। এই দেশ তার গণতন্ত্রের ধ্বজা যে সগর্বে ওড়াতে পারে, তার ভিত্তিস্তম্ভগুলোর অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষতাও, এই কথা ভুললে অন্যায় হবে। অন্যায় হবে রাজধর্ম পালনেও। যে রাজধর্মের কথা গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।

আরও পড়ুন: মুডি’জ রেটিংয়ে আহ্লাদে আট খানা হওয়ার কারণ নেই: মনমোহন

চ্যুতিই যদি অবাধ নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, তবে কী হয় গিরিরাজ সিংহেরা সেটা দেখিয়ে চলেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া এক মন্ত্রী রাখঢাক না করে প্রকাশ্যে বলেছেন, যে সব জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশি, সেই সব জেলায় জাতীয়তাবাদ বিপন্ন! এবং জনসংখ্যার এই পরিবর্তনের প্রবণতা দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক!

এহেন মন্তব্যকে দেশবিরোধী বলে অভিহিত করার দাবি উঠবে না? রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ উঠবে না? গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হবে না? রাজদণ্ড কোনও এক বার ঘোষণা করবে না, এই মন্তব্য ন্যক্কারজনক?

রাজধর্ম পালনের মানদণ্ড কিন্তু শেষ পর্যন্ত আছে নাগরিকের জীবনগাথায়। সেই গাথায় সম্প্রীতির সূত্রটায় টান দিলে টান পড়ে নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনে। গিরিরাজ সিংহেরা যদি তা না ভাবেন, নরেন্দ্র মোদী কি তিরস্কার করবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE