Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষা কি আছে?

শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে পুঁথিগত শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা ও মানুষ গড়ার শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটানো আবশ্যক।

শৈবাল বসু
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২১ ০৪:৩৪
Share: Save:

তাজুদ্দিন আহ্‌মেদের ‘শিক্ষা আছে, চাকরি নেই’ শীর্ষক প্রবন্ধের (৩-৮) পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা উল্লেখ করতে চাই। লেখক বলেছেন, আমাদের বঙ্গে শিক্ষা আছে, চাকরি নেই। চাকরি যে নেই তার প্রমাণ, অতিমারিতে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরে ফেরার দৃশ্য। নিজের রাজ্যে কাজের ভাল সুযোগ থাকলে কেউ কি আপনজন ছেড়ে শুধু কিছু রোজগারের জন্য বছরের পর বছর বাইরে পড়ে থাকে! অতিমারিতে যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক বলে পরিচিত হয়েছেন, তাঁরাই মানবসম্পদের সিংহভাগ, যাঁদের সদ্ব্যবহার করার ব্যবস্থা স্বাধীনতার প্রায় ৭৫ বছর পরেও এই বঙ্গে তৈরি হয়নি। উপরন্তু, বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।

লেখক বলেছেন শিক্ষা আছে। তাঁর মতে, “শিক্ষা যদি এই মেয়েদের মনন এবং চিন্তনের প্রসারের সঙ্গে জীবিকা অর্জনের পথ না খুলে দেয়, তা হলে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে কী ভাবে?” অর্থাৎ, তিনি পেশাগত শিক্ষার কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য কি শুধু কর্মসংস্থান? শিক্ষা মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের উপায়, সুনাগরিক গড়ে তোলার মাধ্যম। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার মান ক্রমহ্রাসমান। আর অতিমারিতে শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ডটাই ভেঙে গিয়েছে। তাই শিক্ষা আছে, এ কথা বলা চলে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে পুঁথিগত শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা ও মানুষ গড়ার শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটানো আবশ্যক। আশা করা যায়, তখন রুমানা সুলতানারা সফল শিক্ষার্থী হিসেবেই সমাজে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হবেন, কোনও ধর্মের ভিত্তিতে নয়।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ

রানাঘাট, নদিয়া

তফাত নেই

তাজুদ্দিন আহ্‌মেদ ‘শিক্ষা আছে, চাকরি নেই’ প্রবন্ধে জরুরি কিছু কথা তুলে ধরেছেন। মুসলমান সমাজে মেয়েরা লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে— এটা রহস্যের ব্যাপার নয়। মুসলমান সমাজে আর্থ-সামাজিক সুযোগের অভাবের জন্যই এটা ঘটে। বলা বাহুল্য, হিন্দু সমাজের মধ্যেও সম্প্রদায় বিশেষে এই সুযোগের তীব্র অভাব। এবং ঠিক সেই কারণেই লেখাপড়ায় যুক্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, যেমনটা লেখক বলেছেন।

তবে তাঁর এই তথ্যটি এক প্রকার বিভ্রমের জন্ম দিতে পারে— মুসলমানদের যাঁরা সতত পশ্চাদ্গামী বলে মনে করেন, তাঁরা বেশি করে এই তথ্যটাই তুলে ধরবেন যে, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা বলছে মুসলমানদের মধ্যে বাল্যবিবাহ বেশি। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার বাল্যবিবাহের তথ্য (৫৫ শতাংশ) থেকে যদি মুসলমানদের মধ্যে এর আধিক্য প্রমাণ হয়, তা হলে হিন্দুপ্রধান পূর্ব মেদিনীপুরে বাল্যবিবাহের আধিক্য (৫৮ শতাংশ) থেকে হিন্দুদের মধ্যে বাল্যবিবাহের আধিক্যও প্রমাণ হয় না কি? আসল কথাটা হল, বাংলার সংস্কৃতি, তার অর্থব্যবস্থা ও সাধারণ সামাজিক গতি-প্রকৃতি এমন যে, বহু দিক দিয়েই হিন্দু-মুসলমান একই পথের পথিক। শুধু সারা দিনে কিছু ক্ষণের ধর্মাচরণ তাদের আলাদা
করে রেখেছে।

ফণীভূষণ ঘড়াই

হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

সমস্যা বেকারত্ব

‘শিক্ষা আছে ,চাকরি নেই’ প্রবন্ধে লেখক ধর্মভেদে উন্নতি-অনুন্নতির চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। আসলে অর্থনৈতিক তারতম্যের ফলেই সমাজের জীবনযাত্রার মানের তফাত হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে অনেক অর্থবান শিক্ষিত মুসলিম মানুষ আছেন, ঠিক যেমন অনেক ধনী ও শিক্ষিত হিন্দু মানুষও আছেন। এঁরা একই অর্থনৈতিক শ্রেণির। আবার গরিব মানুষ যে ধর্মেরই হন, তাঁর অসুবিধা এবং অভাব ঠিক একই রকম। লেখক অভিযোগ করেছেন যে, মুসলিম ছেলেদের জন্য প্রযোজ্য কায়িক শ্রমের কাজ, দিনমজুরের কাজ, অথবা চাষবাসের কাজে হাত লাগানো। আর বৌদ্ধিক, বেশি পারিশ্রমিকের কাজ অন্যদের কুক্ষিগত! তা হলে হাসপাতালের ডোম পদের জন্য স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্ররা আবেদন করেন কেন? বেকারত্বের সমস্যা বা উপযুক্ত কাজ না পাওয়ার সমস্যায় জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ভুক্তভোগী।

সর্বানী গুপ্ত

বড়জোড়া, বাঁকুড়া

নেই সদিচ্ছা

পায়েল ঘোষের ‘শৈশবের রং মুছছে অতিমারি’ শীর্ষক প্রবন্ধটি (২-৮) সময়োপযোগী ও তথ্যসমৃদ্ধ। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রে ও শিশু-মননে থাবা বসিয়েছে অতিমারি। স্কুল থেকে দীর্ঘ দিন বিচ্যুত থাকার কারণে গৃহের নির্বান্ধব পরিবেশে শিশু কুসুমগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে নানান মানসিক প্রক্ষোভ। শিক্ষাঙ্গন থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের ভান্ডারও শূন্য। অথচ, সে দিকে কারও খেয়াল নেই। ঠিক এই জায়গায় লেখক উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, “তবে কি তিলে তিলে ফুরিয়ে যাবে ওদের সম্ভাবনা?” সম্ভবত তা-ই। কারণ, শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের কল্যাণকামী রাজ্যের বা রাষ্ট্রের কোনও সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষা এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ উচ্ছন্নে যাক! পেগাসাস, কৃষি আইন থেকে শুরু করে দেবাঞ্জন, বাবুল সুপ্রিয়, ত্রিপুরা অভিযান নিয়ে রাষ্ট্র এবং রাজ্য রাজনীতি সরগরম থাক। বেঁচে থাক ‘খেলা হবে’, বেঁচে থাক ‘দিদি ও দিদিইই’, গড়ে উঠুক সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প!

সবুজ ডালপালা ছড়িয়ে চারাগাছের মতো মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই সঙ্কীর্ণ রাজনীতির রুদ্র দহনে ঝলসে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। রাজনীতি নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রস্তাব, প্রকল্প, অনুদান, সভা মিটিং-মিছিল হতে পারে, কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঘিরে কোনও পরিকল্পনা হবে না কেন? কেন হবে না বিকল্প কোনও চিন্তাভাবনা? আসলে এ প্রশ্ন তুলতে আমরা কেউ সাহস পাই না। যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের দেখানো হয় ইডি, সিবিআই, জাতীয় নিরাপত্তা আইন কিংবা মাওবাদী তকমার জুজু। তাই শুধু অতিমারি নয়, সরকারি ঔদাসীন্যে, উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনার অভাবে শৈশবের রং মুছে যাবে— এ আর নতুন কথা কী!

বিশ্বরূপ দাস

শ্রীপল্লি, পূর্ব বর্ধমান

শুধুই শহর কেন

প্রথম সারির বাংলা সংবাদপত্র ও নিউজ় চ্যানেলগুলি ধীরে ধীরে খুব বেশি শহরকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে কলকাতার পাশাপাশি শহরতলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবস্থাও যথেষ্ট বেহাল হয়েছে। সেই ছবি, সেই প্রতিবেদন সংবাদপত্র বা নিউজ় চ্যানেলে তেমন ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না।

আশা রাখি, আধুনিক মিডিয়া কেবলমাত্র বিশেষ কোনও গোষ্ঠী বা দলের পৃষ্ঠপোষকতা না করে কলকাতা ছাড়াও আশপাশের জলমগ্ন জনপদের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করবে। সেখানকার জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা ও লেখালিখি হবে।

শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-১৪১

বজ্রপাতে মৃত্যু

বর্ষার মরসুমে কী ভাবে বজ্রপাত থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখা যায়, সে বিষয়ে এই সংবাদপত্রে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রতি বছরই এই মরসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে বজ্রপাতে একাধিক মৃত্যুর খবর আসে। এ বছরে বজ্রপাতের ঘটনাও অনেক বেশি। প্রায় প্রতি দিনের খবরে এই মর্মান্তিক বিবরণ পড়তে হচ্ছে। যদি বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়, তা হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন।

জয়ন্ত ঘোষ

পাঁচাল, বাঁকুড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE