Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

আসল দায়টা ভুলে যাচ্ছেন পার্থবাবুরা

কার দায়, আর কার নয়, এই বিচারের সময় এখন? উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে যে প্রবল সঙ্কটের মুখে পড়লেন, তার নিরসনই সর্বপ্রথম কর্তব্য এই মুহূর্তে প্রশাসনের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৫
Share: Save:

বিস্তর বিতর্ক, বিপুল হইচই, দিকে দিকে পরিত্রাণের জন্য আকুতি। এমন দাঁড়াল পরিস্থিতি যে, আসরে নামতে হল খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে। নিজে কলেজে ছুটলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছুটলেন শিক্ষা মন্ত্রীও। ভর্তি নিয়ে কোনও অনিয়ম যেন না হয়, কঠোর নজরদারি হোক— মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে মুখ্যমন্ত্রী এই রকম নির্দেশ দিলেন বলেও শোনা গেল। কিন্তু রাত পোহাতেই যেন তৎপরতায় ভাঁটা। শিক্ষা মন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে উপশমের দাওয়াই বাতলানোর ভঙ্গি করলেন। কিন্তু তাকে ছাপিয়ে গেল যেন দায় ঝেড়ে ফেলার দায়। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন কোনও দুর্নীতিতে জড়িত নয়— এই বাক্যবন্ধই যেন দিনভর ধ্বনিত হল নানা প্রান্ত থেকে, ধ্বনিত হল অন্য সব ধ্বনিকে ছাপিয়ে।

কার দায়, আর কার নয়, এই বিচারের সময় এখন? উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে যে প্রবল সঙ্কটের মুখে পড়লেন, তার নিরসনই সর্বপ্রথম কর্তব্য এই মুহূর্তে প্রশাসনের। কিন্তু এক দিকে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন শিক্ষা মন্ত্রী, অন্য দিকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সভানেত্রী। পড়ুয়াদের স্বার্থ নিয়ে বা পড়ুয়াদের সঙ্কট নিরসন নিয়ে কথা বলার চেয়ে বেশি তাগিদ দেখালেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করতে।

দায়বদ্ধতা আসলে কার প্রতি বা কাদের প্রতি বোঝা দুষ্কর। কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে যাঁরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, সর্বাগ্রে তাঁদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল শিক্ষা মন্ত্রীর। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় সর্বাগ্রে দাঁড়ালেন নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের পাশে। কলেজে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি যা কিছু হয়েছে, তার সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যে কোনও যোগ নেই, এই তত্ত্বে সিলমোহর দেওয়ার জন্যই যেন সবচেয়ে উতলা দেখাল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভর্তি দুর্নীতি নিরসনে যে দিন মাঠে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার পরের দিন মূলত দু’জনকে সক্রিয় হতে দেখা গেল। এক জন শিক্ষা মন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্য জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্ত। দু’জনেই ছাত্রদের স্বার্থে কথা বলবেন বলে আশা করা গিয়েছিল। ছাত্রদের স্বার্থে দু’জনেই কথা বলেছেন, তবে পোশাকি ঢঙে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভাবমূর্তি পরিষ্কার রাখার তাগিদই বেশি করে ধরা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রীর যাবতীয় কর্মকাণ্ডে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জয়া দত্ত, দু’জনেই দাবি করেছেন, কলেজের কোনও পড়ুয়া ভর্তি দুর্নীতিতে জড়িত নন, দুর্নীতি করছেন বহিরাগতরা। যাঁরা দুর্নীতি করছেন, তাঁরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কেউ নন, এমন দাবিও করা হয়েছে। আদৌ কি সত্য এই দাবি? একের পর এক কলেজ থেকে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, এখনও পর্যন্ত যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই? তাঁরা সংগঠনের কেউ নন? কেউ ছিলেনও না? একগুচ্ছ প্রশ্নের জন্ম দিয়ে দিয়েছেন পার্থ ও জয়া।

আরও পড়ুন: কাউন্সেলিং বন্ধ, এ বার টাকা জমাও অনলাইনে

আরও পড়ুন: ভর্তি দুর্নীতি: সব দায় ঝেড়ে ফেললেন জয়া, সিলমোহর দিলেন পার্থ

ভর্তি দুর্নীতি থেকে পড়ুয়াদের রেহাই দিতে রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাও জানিয়েছেন। অনলাইন মেধা তালিকা প্রকাশ, কলেজে হাজির না হয়েই ভর্তি হয়ে যাওয়া, ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার পরে ভেরিফিকেশন— এমন নানা বন্দোবস্তের কথা শুনিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী। এই সব বন্দোবস্তে বা পদক্ষেপে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতি রোখা যাবে তো? যে পদক্ষেপ রাজ্য সরকার করল, কলেজে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের কোনও সুবিধা বা সুরাহা সেই সব পদক্ষেপে হবে তো? উত্তর খুব শীঘ্রই মিলবে। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ঘাড় থেকে দুর্নীতির দায় ঝাড়তে যতটা উদগ্র হতে দেখা গেল শিক্ষা মন্ত্রীকে এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রীকে, সাধারণ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর বাসনাটাও যদি ততটাই তীব্র হত, তা হলে আর প্রশ্ন তোলার অবকাশগুলো থাকত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE