‘সুখের কথা বোলো না আর...’ (দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান)
‘মহাভারত’-এর বনপর্বে যুধিষ্ঠিরের প্রতি বকরূপী যক্ষের শেষ প্রশ্ন ছিল— এ জগতে সুখী কে? যুধিষ্ঠির উত্তরে বলেছিলেন, অঋণী-অপ্রবাসী অবস্থায় যে ব্যক্তি দিনান্তে শাকান্ন ভক্ষণ করে, সে-ই প্রকৃত সুখী। ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। এ দিন যদি ‘মহাভারত’-এর এই প্রসঙ্গ কারও মাথায় আসে, তিনি নিশ্চয়ই মনে মনে হাসবেন। দেনায় নিমজ্জিত ইএমআই গুনতে থাকা মানুষ দিনের মধ্যে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে দিনান্তে বিস্বাদ প্রিজার্ভেটিভ মাখানো খাবার মাইক্রোওয়েভে গরম করে ভক্ষণ করতে করতে আর যাই হোক ‘সুখী’ থাকে না। থাকার কথাও নয়। তবু রাষ্ট্রপুঞ্জের হয়ে কাজ করা একটি সংস্থা এই বিশেষ দিনটির প্রাক্কালে একটি তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে বিশ্বের দেশগুলিকে ‘সুখ’-এর নিরিখে ক্রম অনুসারে সাজানো হয়। ‘সুখ’ থেকে তালিকা ক্রমে গড়াতে থেকে ‘অ-সুখ’-এর দিকে।
এ বছরও সুখের তালিকায় ভারত একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করছে। ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৬ নম্বরে। ২০২১-এর হিসেব মোতাবেক ভারতের স্থান ছিল ১৩৯-এ। ২০১৯-এ ১৪০। পাকিস্তানও তালিকায় ভারতের থেকে উপরে। এ বছর তাদের স্থান ১০৫-এ।
প্রশ্ন জাগতেই পারে, কিসের ভিত্তিতে নির্ণিত হয় বিষয়টি? আর কারাই বা নির্মাণ করেন এই তালিকা? রাষ্ট্রপুঞ্জের জন্য কাজ করা ‘সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’ এই রিপোর্টটি পেশ করে। রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা সুখী কি না। পাশাপাশি হিসেবনিকেশ চলে সমীক্ষাধীন দেশগুলির আর্থিক বৃদ্ধির হার, দেশবাসীর গড় আয়ু, সামাজিক সহায়তা, কাজ করার স্বাধীনতা, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে। এই সমীক্ষায় যুক্ত থাকে পশ্চিমের বেশ কিছু গবেষণা সংস্থা।