ক্রমবর্ধমান কোটিপতিদের, বিশেষত ডলার-কোটিপতিদের সংখ্যাবৃদ্ধির এই যুগে একটি প্রশ্ন অবধারিত ভাবে জাগে। সেটি এই যে, ‘ক্রেডিট সুইস’, ‘দ্য হরন রিচ লিস্ট’ বা ‘ফোর্বস’-এর মতো বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রাহক সংস্থাগুলি তাঁদের সম্পর্কে, তাঁদের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে যে তথ্যগুলি প্রতি বছর প্রদান করে, সেই সব তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা ঠিক কতখানি।
সাংবাদিক ক্যাথারিন বেলটন তাঁর সাড়া জাগানো বই 'পুতিন'স পিপল'-এ দেখিয়েছেন যে, মাত্র সাত থেকে আট জন গোষ্ঠীপতি একটি স্তরে রাশিয়ার মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি-র অর্ধাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। এমন স্বল্পসংখ্যক মানুষের দ্বারা পরিবেষ্টিত গণশাসকের উদাহরণ আজকের বিশ্বে বিরল। ভারতে যে দুই ‘আনি’ (আদানি এবং অম্বানী) সম্পর্কে বিবিধ কথা চালাচালি হয়, তাঁদের একেকজনের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার। তলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হবে যে, রাশিয়ার কোনও গোষ্ঠীপতির থেকে আদানি এবং অম্বানীরা অনেক বেশি বিত্তশালী। কারাগারে যাওয়ার আগে রাশিয়ার গোষ্ঠীপতি মিখাইল খোদোর্কোভ্স্কির সম্পদের মোট পরিমাণ ছিল ১৫ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার। এবং এই মুহূর্তে রাশিয়ার ধনীতম ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার বলেই জানা যায়।
এ সত্ত্বেও কেউ ভারতের এই দুই ধনী পরিবার সম্পর্কে এমন দাবি তোলেন না যে এরা সেই পরিমাণ প্রাধান্য এবং রাষ্ট্রশক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ফলিয়ে থাকে, যা একদা রাশিয়ার গোষ্ঠীপতিরা ফলিয়ে এসেছেন। রুশ গোষ্ঠীপতিরা কার্যত দেশের শাসক কে হবেন, তা পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিতেন। যত দূর জানা যায়, ভারতে প্রায় ১৪০ জন ডলার-বিলিয়নেয়ার রয়েছেন (সংখ্যাটি রাশিয়ার তুলনায় সামান্য বেশি)। ‘ক্রেডিট সুইস’-এর হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালে ভারতে ৭৬৪,০০০ জন ডলার-মিলিয়নেয়ার ছিলেন। অর্থাৎ, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৭.৫ কোটি টাকা বা তার থেকে বেশি। এই সংখ্যাটি রাশিয়ার ডলার-মিলিয়নেয়ারদের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। কিন্তু সেই সময় ভারতের অর্থনীতি ছিল বৃহত্তর এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের সংখ্যাও সেখানে বেশি ছিল।