ফাইল চিত্র।
জনপরিসরে জীবন যাঁদের, জনপরিসরেই মৃত্যু যাঁদের, জনপরিসরেই চিরন্তন হয়ে যাওয়া যাঁদের, তাঁদের জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? চলে গেলেন মুথুভেল করুণানিধি। কিন্তু জনস্রোতে ভেসে চিরভাস্বর হয়ে গেলেন তিনি।
দ্রাবিড় অস্মিতার আজীবন প্রহরী ছিলেন। নশ্বর দেহের প্রয়াণ ঘটল বটে, তবে প্রহরা থামল না। জীবদ্দশাতেই যেন জীবনের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর পরেও তাই অস্তিত্বশীল হয়ে রইলেন অগণিত অনুগামীর হৃদয়ে, অস্তিত্বশীল হয়ে রইল তাঁর রাজনীতি।
মুথুভেল করুণানিধি ১৩ বার তামিলনাড়ুর আইনসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এক বারও হারেননি। পাঁচ বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কোনও দিন দিল্লির রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু সুদূর দক্ষিণে বসেও দিল্লির রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্বাচনে অনেক বারই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন, অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
রাজনীতিতেই শেষ নয়। তামিল চলচ্চিত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মুথুভেল করুণানিধির। চিত্রনাট্যকার হিসেবে তামিল চলচ্চিত্র জগতের সর্বকালীন জনপ্রিয়তমদের এক জন তিনি। উপন্যাস, নাটক, কাব্য— তামিল সাহিত্যের একের পর এক শাখায় অনায়াস যাতায়াত করেছেন জীবনভর।
তবে সবটাই যে গৌরবজনক, সবটাই যে ইতিবাচক, তা-ও নয়। বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, বার বার উঠেছে। জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন বলে তাঁর সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও জরুরি অবস্থার অবসানে দলকে ক্ষমতায় ফেরাতে পারেননি শুধুমাত্র ওই দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হয়ে।
কিন্তু থামানো যায়নি করুণানিধিকে। বার বার তামিল রাজনীতির ভরকেন্দ্রকে পদানত করেছেন বিপুল জনাদেশে সওয়ার হয়ে। বার বার জাতীয় রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন নিজের জনভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে।
আরও পড়ুন: শ্রীমুথুভেল করুণানিধি (১৯২৪-২০১৮)
আরও পড়ুন: অন্তিম যাত্রায় মানুষের ঢল, মেরিনা বিচের পথে করুণানিধি
জনপরিসরে বাঁচেন যাঁরা, জনমনে এই অটুট বিশ্বাসই তাঁদের কাছে সর্বাপেক্ষা প্রার্থিত এ পৃথিবীতে। আর করুণানিধি সে প্রার্থিত সাফল্যে সাফল্যের তুঙ্গ স্পর্শ করেছেন। সুখ্যাতি-অভিযোগ, সুনাম-দুর্নাম, ইতি-নেতির অনেক উপরে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি নিজেকে। তামিল ভূখণ্ডে গত সাত বছর ক্ষমতার অলিন্দের বাইরে করুণানিধির দল ডিএমকে। সংসদেও উপস্থিতি খুব উল্লেখযোগ্য নয় এই মুহূর্তে। কিন্তু প্রাসঙ্গিকতায়, গুরুত্বে, তাৎপর্যে শেষ দিন পর্যন্ত সমান মহিমান্বিত রয়ে গেলেন তিনি। ভারতীয় রাজনীতির প্রতিটি শিবির তাঁর নশ্বর দেহ ঘিরে ভিড় জমাল, সশ্রদ্ধ বিদায় জানাল। আর তাঁর শত-সহস্র-লক্ষ অনুগামীর আকুল অশ্রুতে চেন্নাই ভেসে গেল।
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক থাকতে পারার আকাঙ্খা সম্ভবত প্রত্যেক আত্মসচেতন ব্যক্তিত্বের মধ্যেই থাকে। কিন্তু করুণানিধির মতো ব্যক্তিত্বরা সে সব আকাঙ্খার সীমা ছাড়িয়ে চিরকালীনতার সমুদ্রে মিশে যান যেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নয়, জীবনের পরেও প্রাসঙ্গিক থাকেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy