Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর ভোজন

অপুষ্টিতে ভুগিয়া এ দেশে শিশুর বুদ্ধি ও শরীরের বিকাশ ব্যাহত হইতেছে ব্যাপক হারে। স্কুলে পুষ্টিকর ভোজন তাহার একটি সমাধান। পরীক্ষামূলক প্রকল্পের প্রাথমিক পর্বে নানা গোলযোগ হইতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ফল পরিবেশনের সরকারি বিজ্ঞপ্তি নির্দিষ্ট একটি ফলই (আপেল) দিবার নির্দেশ কি না, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়াছে। আপেল পুষ্টিকর, সহজে নষ্টও হয় না, কিন্তু মূল্য অধিক। স্বভাবতই শিক্ষকরা চিন্তিত।

মিড ডে মিল। —নিজস্ব চিত্র।

মিড ডে মিল। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় শিশুদের স্কুলের মধ্যাহ্নভোজনের সহিত একটি ফলও দিবার নির্দেশ দিয়াছে জেলা প্রশাসন। মিড ডে মিলের বরাদ্দের উপর ব্যাঙ্কের যে সুদ মেলে, এবং কিছু শিশুর অনুপস্থিতির জন্য যেটুকু অর্থ উদ্বৃত্ত রহিয়া যায়, তাহা শিশুদের অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য ব্যয় করা হইতেছে। কেন্দ্রীয় সরকার শিশুদের পুষ্টিকর আহারের জন্য এ বৎসর বাজেটে বরাদ্দ প্রায় কিছুই বাড়ায় নাই। মাথাপিছু চার টাকা তেরো পয়সাই যথেষ্ট বলিয়া মনে হয় দিল্লির কর্তাদের। জেলা প্রশাসন সেখানে মোট তেরো টাকা পঁচিশ পয়সা মাথাপিছু বরাদ্দ নির্ধারণ করিয়াছে। এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের রূপায়ণ যদি সফল হয়, ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে উন্নততর মিড ডে মিলের চাহিদা দেখা যায়, তবে অন্যান্য জেলাতেও বরাদ্দ বাড়িতে পারে। তাহা যে এক আনন্দময় সম্ভাবনা, তাহাতে সন্দেহ নাই। অপুষ্টিতে ভুগিয়া এ দেশে শিশুর বুদ্ধি ও শরীরের বিকাশ ব্যাহত হইতেছে ব্যাপক হারে। স্কুলে পুষ্টিকর ভোজন তাহার একটি সমাধান। পরীক্ষামূলক প্রকল্পের প্রাথমিক পর্বে নানা গোলযোগ হইতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ফল পরিবেশনের সরকারি বিজ্ঞপ্তি নির্দিষ্ট একটি ফলই (আপেল) দিবার নির্দেশ কি না, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়াছে। আপেল পুষ্টিকর, সহজে নষ্টও হয় না, কিন্তু মূল্য অধিক। স্বভাবতই শিক্ষকরা চিন্তিত।

এই সংশয়ের নিরসন করিবার কাজটি জেলা প্রশাসনের। দরিদ্র শিশুর নিকট আপেল লোভনীয়, পুষ্টির দৃষ্টিতে কিন্তু পেয়ারা বা কলার সহিত তাহার পার্থক্য সামান্যই। ঋতুচক্রে যখন যে ফল বা সব্জি সুলভ, তাহার বিতরণই কাম্য। শিক্ষকদের সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত লইতে বাধা কোথায়? বরং প্রশ্ন ইহাই যে, গ্রামের স্কুলে ভোজনের পুষ্টিগুণ বর্ধিত করিতে কেবল সরকারি দাক্ষিণ্যের উপরেই নির্ভর করিতে হইবে কেন? সুজলা-সুফলা বাংলায় তরিতরকারির অভাব নাই। গত কয়েক বৎসরে এই রাজ্যে সব্জি চাষ ক্রমবর্ধমান। ফসলের বৈচিত্র ও ফলনের পরিমাণ, উভয়ই আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়িয়াছে। সংরক্ষণের অভাবে অনেক সব্জি নষ্টও হইয়া থাকে। যখন যে সব্জি সুলভ হইয়া ওঠে, তখন তাহার কিছু অংশ শিশুদের মিড ডে মিলের জন্য দিবার কাজ সানন্দে গ্রহণ করিতে হইবে। তাহার ভাগ তো গ্রামের শিশুরাই পাইবে। প্রতিটি শিশু দুই-একটি করিয়া সব্জি আনিলে, পুষ্টিতে ও স্বাদবৈচিত্রে ভোজনের গুণমান বর্ধিত হইবে।

‘সরকারের যাহা দিবার কথা, তাহা আমি কেন দিব,’ এই সঙ্কীর্ণ মানসিকতা ত্যাগ করিতে হইবে এই রাজ্যের নাগরিককে। ‘সকল শিশু খাইবে, তাই সকলেই তাহার দায়িত্ব যথাসাধ্য ভাগ করিয়া লইব’, এই সঙ্কল্প কি এতই কঠিন? বাংলার হৃদয় কি এতই ক্ষুদ্র হইয়াছে? এই রাজ্যেরই কিছু স্কুল সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত করিয়াছে। শিক্ষকদের উদ্যোগে স্কুলের চত্বরেই গড়া হইয়াছে সব্জির বাগান। অভিভাবকেরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তত্ত্বাবধান করিতেছেন। কখনও বা শিক্ষকের আহ্বানে পরিবারের জন্মদিন, বিবাহ প্রভৃতি উৎসবের উদ্‌যাপন হয় স্কুলে। স্কুলের মধ্যাহ্নভোজন সেই সকল দিনে আনন্দময় প্রীতিভোজ হইয়া ওঠে। বিদ্যালয়কে গ্রাম ও শহরের মানুষ যত আপন করিয়া লইবে, ততই সমৃদ্ধ হইবে শিশুরা। তাহাদের দেহ, মন ও সমাজচিন্তা, সকলই পুষ্ট হইবে। তাহার সুফলটি পাইবে ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Fruit Apple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE