বাইক আরোহীর রক্ষাকবচ হিসেবে তার উদ্ভাবন। কিন্তু পঞ্চায়েতের বাংলায় তার ভূমিকা একটু বদলে গিয়েছে। গণতন্ত্রের সংহারে উদ্যত যাঁরা, বিরোধী দলের লোকজন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন দেখলেই গত কয়েক দিন ধরে যাঁরা রে-রে করে তেড়ে যাচ্ছেন, যাবতীয় বিরোধিতার মাথা ভেঙে দিতে যাঁরা বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছেন, হেলমেট এখন তাঁদের রক্ষাকবচ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল পর্ব এত উত্তপ্ত হয়, তা আগে সম্ভবত কারও জানা ছিল না। উত্তাপ যে হেতু রয়েছে, সে হেতু বিপদও রয়েছে। বিপদের হাত থেকে বাঁচতে তাই রক্ষাকবচ খুঁজে নিয়েছে ‘গণতন্ত্র সংহার বাহিনী’। রাজ্যের নানা প্রান্তের বিডিও কার্যালয় এবং এসডিও কার্যালয় ঘিরে এই বাহিনীকে অবস্থান করতে দেখা গিয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। বাহিনীর সদস্যদের হাতে লাঠি বা আগ্নেয়াস্ত্র আর মাথায় হেলমেট। মাথাও বাঁচবে, মুখটাও ঢাকা থাকবে। এক ঢিলে দুই পাখি। সঙ্গে উপরি পাওনা একের পর এক পঞ্চায়েতের অনায়াস দখল।
হেলমেট বাহিনীকে এতটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখব কি না, তা অবশ্য ‘ভেবে দেখা’ দরকার। এই হেলমেট বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ‘নির্বিঘ্ন’ রাখার জন্যই। রাজ্যের শাসক পক্ষ ‘উন্নয়ন’ বিষয়ে অত্যন্ত ‘সংবেদনশীল’। নির্বাচনী ফলাফলে কোনও ‘অঘটন’ যদি কোনও অঞ্চলে ঘটে যায়, তা হলে সেই অঞ্চলের উন্নয়ন ব্যাহত হবে বলে বর্তমান শাসকরা বিশ্বাস করেন। কারণ বিরোধীর হাতে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক প্রকল্প রূপায়ণের কোনও ইচ্ছা যে তাঁদের নেই, শাসককুল তা একাধিক বার বেশ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। তাই সব পঞ্চায়েতকেই নিজেদের হাতে রাখতে চান শাসক দলের নেতারা। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য ‘নিজেদের মতো’ করে ‘নির্বাচন’ করতে চান তাঁরা। সেই প্রক্রিয়ায় ‘বিঘ্ন’ ঘটা একেবারেই কাম্য নয়। অতএব হেলমেট বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, সে কথা বলাই বাহুল্য।