গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
রাষ্ট্রীয় অস্মিতার দিগন্তে সূর্যোদয় হল মঙ্গলবার। এ সকাল কোনও সাধারণ সকাল নয়। উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রের প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে মঙ্গলবার ভারত সূর্যোদয়টা ঘটিয়েছে নিজের পশ্চিম দিগন্তে। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
দিনভর চর্চা চলল একটাই মাত্র বিষয়ে— পশ্চিম সীমা অতিক্রম করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে ভারতের ভয়াবহ আঘাত। পাঠকের উদ্দেশে এই পত্র যখন লিখছি, গোটা দেশে তখন সম্ভবত কারও জানতে বাকি নেই যে, সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তানকে সুযোগ্য জবাব দিয়েছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। পাকিস্তান হতচকিত, নিদারুণ ভাবে অপ্রস্তুত, সম্ভবত ঈষত্ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ভারতের মতো পাকিস্তানেও প্রত্যেকে জেনে গিয়েছেন, কী ঘটিয়ে দিল ভারত। শেষ রাতে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টা মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান মুছে দিল আকাশসীমা, বোকা বানিয়ে দিল পাক বাহিনীকে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে বিধ্বংসী বোমা বর্ষণ করে গুঁড়িয়ে দিল পুলওয়ামা হামলার হোতা জইশ-ই-মহম্মদের বৃহত্তম প্রশিক্ষণ শিবির। বোমা বর্ষণ হল পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদ এবং চকোটিতেও।
পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে যে ভয়াবহ আত্মঘাতী হানা ঘটেছিল চলতি মাসেই, তার উপযুক্ত জবাব যে পাকিস্তানকে দেওয়া হবে, সে কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার বার বলছিলেন। নয়াদিল্লির এই হুঁশিয়ারিকে মোটেই হালকা ভাবে নেয়নি পাকিস্তান, নিজেদের ভূখণ্ড ঘিরে নিরাপত্তার বেড়াজাল জোরদার করেছিল তারা। কিন্তু মঙ্গলবার শেষ রাতে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি যুদ্ধবিমান বুঝিয়ে দিল, পাকিস্তানের তৈরি কোনও বেড়াজালই রুখতে পারবে না ভারতকে, প্রয়োজন হলেই পাকিস্তানের গভীরে হানা দেবে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে প্রত্যাঘাত বায়ুসেনার, নিকেশ ৩০০ জঙ্গি
আরও পড়ুন: ২০ বছর পর বদলা! পাকিস্তানে ঢুকে কন্দহর বিমান হাইজ্যাকের চক্রীকে নিকেশ
পাকিস্তানে যে অভিযান ভারতীয় বাহিনী চালিয়েছে তা অসামান্য। পাকিস্তানের তরফে সব রকম সতর্কতা সত্ত্বেও সে দেশের যতখানি গভীরে ঢুকে ভারত জঙ্গিঘাঁটিতে আঘাত হানল, তা কোনও সাধারণ বিষয় নয়। ১২টা যুদ্ধবিমান প্রায় একযোগে সীমা লঙ্ঘন করবে এবং প্রতিপক্ষকে প্রায় অসহায় করে দিয়ে নির্ভুল লক্ষ্যে বিধ্বংসী আঘাত হেনে ফিরে আসবে— এটা খুব সহজ বিষয় নয়। যে ভাবে মঙ্গলবার ভোররাতে জইশ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলো, সেই পরিমাণ নৈপুণ্য বলিউডি ছবিতেও দেখানো সম্ভব কিনা, সংশয় রয়েছে।
শুধু সামরিক সক্ষমতায় নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে ভারত। পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরে কূটনৈতিক ভাবে গোটা বিশ্বের সামনে পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। সন্ত্রাসবিরোধী কণ্ঠস্বর পৃথিবী জুড়ে তীব্র হয়েছিল। পুলওয়ামা হামলার জবাব দেওয়ার পরেও কূটনৈতিক পরিস্থিতিটা ভারত নিজের অনুকূলেই রাখল। অত্যন্ত দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করল ভারত। একাধিক দেশের কাছ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন আদায় করে নিল। পাকিস্তানের পরম মিত্র চিনও প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতায় অবতীর্ণ হতে পারল না।
আরও পড়ুন: দেশ নিরাপদ হাতে রয়েছে, মাথা নত হতে দেব না: প্রত্যাঘাতের পরে বললেন মোদী
পুলওয়ামার জবাব পাকিস্তানকে দেওয়া হবে, তা ভারতবাসী জানত। কিন্তু যে ভাবে এবং যে প্রাবল্যে জবাবটা দেওয়া হল, তা ক’জন প্রত্যাশা করেছিলেন, হলফ করে বলা যায় না। ভারতীয় বায়ুসেনার এই পরাক্রম নিঃসন্দেহে দেশের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু এখন সতর্কও থাকতে হবে। পাকিস্তানও প্রত্যাঘাতের হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করেছে। তার মোকাবিলায় আমাদের সব রকম ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। পরাক্রমী সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে পাক হুঁশিয়ারির মোকাবিলা করা অসম্ভব নয় বলেই কিন্তু দেশবাসী বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy