Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সুসংবাদ নহে

যে চিনের সহিত অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার রাজনৈতিক ভাষ্য বর্তমান সরকারের মূল উপজীব্যগুলির একটি, মানবোন্নয়ন সূচকে তাহার ক্রম ৮৬।

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

মানবোন্নয়নের নিরিখে উন্নতি হইয়াছে ভারতের। এক ধাপ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী ১৮৯টি দেশের মধ্যে এই বৎসর ভারতের অবস্থান ১৩০তম স্থানে। গত বৎসর ছিল ১৩১। সেই উন্নতি লইয়া কেন্দ্রীয় সরকারের গর্বের ইয়ত্তা নাই। প্রশ্ন হইল, আস্ফালনটি কি যথার্থ? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজিতে হইলে গোড়ায় দেখা প্রয়োজন, ভারত কোথায় দাঁড়াইয়া আছে। যে দেশটির তুলনায় ভারতের অবস্থা প্রশ্নাতীত রকম ভাল, তাহার নাম পাকিস্তান। এই তথ্যটিতেই যদি জাতীয়তাবাদী আবেগের বান ডাকে, এবং তাহার স্রোতে বাকি সব যুক্তি ভাসিয়া যায়, তবে আর কিছু বলিবার থাকে না। কিন্তু, অন্য তুলনায় গেলে ছবিটি আশাপ্রদ নহে। যে চিনের সহিত অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার রাজনৈতিক ভাষ্য বর্তমান সরকারের মূল উপজীব্যগুলির একটি, মানবোন্নয়ন সূচকে তাহার ক্রম ৮৬। ‘ব্রিকস’-এর সদস্য আরও একটি দেশ ব্রাজিলের ক্রম ৭৯। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ভারতের তুলনায় বহু আগাইয়া রহিয়াছে— তালিকায় ৭৬তম স্থানে। আয়ের নিরিখে যে দেশটির ভারতের সহিত কোনও তুলনাই চলে না, সেই বাংলাদেশ আছে ১৩৬তম স্থানে। মাথাপিছু আয়ের অঙ্কে যে দেশগুলি ভারতের তুল্য, যেমন ফিলিপিন্স বা বলিভিয়া, তাহাদের অবস্থান যথাক্রমে ১১৩ এবং ১১৮তম স্থানে। সূচকের মইয়ে এক ধাপ উঠিয়াই হুঙ্কার ছাড়িলে সেই আওয়াজ বড় ফাঁপা শুনায়। লজ্জাটি আরও বেশি, কারণ আয়বৃদ্ধির হারের নিরিখে ভারত এই দেশগুলির তুলনায় অনেকখানি আগাইয়া আছে। আয় বাড়িতেছে, কিন্তু মানবোন্নয়ন হইতেছে না— একমাত্র ব্যাখ্যা, অসাম্য বাড়িতেছে। বস্তুত, ভারতের মানবোন্নয়ন সূচকের সিকি ভাগের বেশি নম্বর কাটা গিয়াছে অসাম্যের প্রাবল্যেই। হুঙ্কার দেওয়ার পূর্বে সরকার এই কথাটি মাথায় রাখিলে ভাল করিবে।

সূচকের অঙ্কে বৃদ্ধির অনুপাত হিসাব করিলে দেখা যাইবে, দ্বিতীয় ইউপিএ-র আমলে ভারতের অধিকতর উন্নতি হইয়াছিল। কিন্তু, ক্রমসংখ্যায় খানিক অবনমনও হইয়াছিল সেই আমলে। ক্রমতালিকায় অবস্থান চরম নহে, আপেক্ষিক। সেই আমলে অন্য দেশগুলির উন্নতির হার ভারতের তুলনায় অধিকতর ছিল। বর্তমান ‘উন্নতি’-র কারণও ভারতের নিজস্ব কৃতিত্ব নহে, বরং অন্য দেশগুলির আপেক্ষিক গতিহীনতা। তাহা ভারতের গর্বের কারণ হইতে পারে কি? বরং খেয়াল করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, মায়ানমারের মতো উপমহাদেশের অন্য দেশগুলি লিঙ্গবৈষম্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতকে পিছনে ফেলিয়াছে। কিছু ক্ষেত্রে উন্নতিও হইয়াছে। যেমন, মাথাপিছু আয়, প্রত্যাশিত আয়ু বৃদ্ধি পাইয়াছে। গর্ভবতী মহিলা এবং সদ্যোজাতের মৃত্যুহার কমিয়াছে। স্কুলে যোগদানের সংখ্যা বাড়িয়াছে। কিন্তু, সেই উন্নতির এতখানি জোর নাই যে তাহাতে যাবতীয় অন্ধকার ঢাকা পড়িয়া যাইবে। তবুও সেই ‘সাফল্য’ই যখন (আত্ম)প্রচারের উপাদান হইয়া দাঁড়ায়, তখন তিনটি কথা বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন। এক, প্রচারের যোগ্য কৃতিত্বের সত্যই বড় অভাব ঘটিয়াছে। দুই, জিয়ো ইনস্টিটিউট বা রাফাল চুক্তি হইতে দেশের নজর সরাইবার তাগিদ অতি তীব্র। এবং তিন, উন্নয়ন লইয়া সরকারের প্রকৃত মাথাব্যথা নাই। কোনওটিই ভারতের পক্ষে সুসংবাদ নহে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government India Human Development Index
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE