ইরানে আর এক বিজ্ঞানী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হইলেন। গবেষক আহমদরেজা জালালি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হইয়াছেন। তিনি নাকি ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আপাতত বিচারক তাঁহাকে আপিল করিবার জন্য কুড়ি দিন সময় দিয়াছেন। কিন্তু ইরান-বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করিয়া দেওয়াটি নেহাতই আন্তর্জাতিক নিন্দা এবং প্রতিবাদ প্রশমিত করিবার কৌশলমাত্র। গত বৎসর অগস্ট মাসে শাহ্রাম আমিরি-র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করিবার পূর্বে ইরানি আদালত তাঁহাকেও আপিল করিবার সুযোগ দিয়াছিল। দণ্ড রদ হয় নাই। আমিরিও নাকি ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। জালালির স্ত্রী ভিদা মেহরানিয়া বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের উদ্দেশে আবেদনে বলিয়াছেন, তাঁহার স্বামীর প্রাণ বাঁচাইতে জনমত গঠন জরুরি। আবেদনে কতখানি সাড়া মিলিবে বলা যায় না। গত ২১ জুলাই গবেষণায় স্বাধীনতা রক্ষার সমর্থক সংগঠন স্কলার্স অ্যাট রিস্ক বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের বলিয়াছিল ইরান সরকার এবং রাষ্ট্রের অবিসংবাদী নেতা আয়াতোলা খামেনেইয়ের নিকট জালালির মুক্তির আবেদন দানাইতে। বিজ্ঞানীদের নানা সংগঠন ওই রাষ্ট্রনেতার উদ্দেশে চিঠি পাঠাইয়াছিল। জালালির ভাগ্য কিছুমাত্র বদলায় নাই।
জালালি দুইটি প্রতিষ্ঠানের সহিত যুক্ত। একটি সুইডেনে, অন্যটি ইটালিতে। সন্ত্রাসবাদীর অতর্কিত আক্রমণে আহত মানুষজন কী রূপে হাসপাতালগুলিতে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাইবেন, রাসায়নিক বা জৈব সন্ত্রাসের মোকাবিলাই বা কী ভাবে করা যাইবে, ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করেন জালালি। গত বৎসর তিনি সপরিবার ইরান ভ্রমণে আসিলে তাঁহাকে ইরান সরকার গ্রেফতার করে। এই অভিযোগে যে, তিনি ইজরায়েল সরকারকে ইরানী বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ তথ্য পাচার করিয়াছেন। এ জন্য জালালি নাকি ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষের নিকট উৎকোচও গ্রহণ করিয়াছেন। ইজরায়েল সরকারের তরফে জালালিকে নাকি ওই দেশে গবেষণা প্রকল্পে যোগদানের প্রলোভনও দেওয়া হইয়াছে। জালালি সে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করিয়াছেন তাহাই নহে, ইরানের এভিল কারাগারে বন্দিদশায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাঁহার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনশনও করিয়াছেন। ইটালির বিশ্ববিদ্যালয়ে জালালির সহযোগী বিজ্ঞানী লুকা রাগাজ্জোনি বলিয়াছেন, তাঁহারা যে গবেষণায় লিপ্ত তাহাতে গোপনীয় তথ্য আবিষ্কৃত হয় না, আবিষ্কৃত তথ্যাদির সহিত ইজরায়েল সরকার কোনও ভাবে যুক্ত নহে এবং গবেষণায় অনুদানও ইজরায়েল হইতে আসে না। গবেষণাটি চলে ইউরোপীয়ন কমিশনের অর্থ সাহায্যে।
তাহা হইলে সত্য ঘটনা কী? তবে কি কারাগারে বন্দি জালালি এক বছর (ইরান সরকারের ভয়ে যিনি স্বনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূত মারফত) ধরিয়া যে বিবৃতি প্রচার করিয়াছেন, তাহাই সত্য? ওই বিবৃতিতে জালালি বলিয়াছেন, ইরানের তরফে তাঁহাকে বলা হইয়াছিল গুপ্তচর হিসাবে ইউরোপের নানা গবেষণাগারে গবেষণার খবর ইরানে পাচার করিতে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইরান প্রশাসন তাঁহাকে গ্রেফতার করিয়াছে। ইরানি শাসন ব্যবস্থার কথা ভাবিলে জালালির অভিযোগকে অসত্য বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy