—ফাইল চিত্র।
বোমা এসেছে হাতে। সে বোমা বিধ্বংসী হয়ে উঠবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে। দাবি কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর। উপযুক্ত স্থানে, উপযুক্ত সন্ধিক্ষণে বোমা নিক্ষিপ্ত হবে, ইঙ্গিত বিরোধী নেতার। সংসদকেই যে এ বিস্ফোরণের উপযুক্ত স্থান বলে মনে করছেন তিনি, সে ইঙ্গিতও মিলল। আর ইঙ্গিত মিলতেই জাতীয় রাজনীতির দুই যুযুধান শিবিরে আশা-আশঙ্কার শিরশিরে দোলাচল তৈরি হয়ে গেল।
রাহুল গাঁধী লুক্কায়িত ব্রহ্মাস্ত্রের ইঙ্গিত দেওয়া মাত্রই প্রতিস্পর্ধা দেখানো শুরু হয়েছে। শাসক সদর্পে আহ্বান জানিয়েছেন, বোমা থাকলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেখান রাহুল। কংগ্রেস-বিজেপি থেকে সমদূরত্বের নীতিতে বিশ্বাসী অরবিন্দ কেজরীবালের মতো নেতা অন্যতর সুরে একই আহ্বান জানিয়ে বলেছেন— বোমা যদি থেকেই থাকে তা হলে সংসদের ভিতরে তার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করার দরকার কী? বাইরেই বিস্ফোরণ ঘটানো হোক। কংগ্রেস বলছে, সংসদ চলাকালীন সংসদই উপযুক্ত মঞ্চ। সে যুক্তি ফেলে দেওয়ার নয়। কিন্তু ‘আতঙ্কিত’ শাসক সংসদে বিরোধীকে বলতে দিচ্ছেন না বলে যে অভিযোগ রাহুল গাঁধী করছেন, তা যদি সত্যি হয়, তা হলে তো সংসদের বাইরেই শেষ পর্যন্ত নিক্ষেপ করতে হবে বোমাটা। সে প্রস্তুতি রাহুল গাঁধীরা নিচ্ছেন তো?
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ লগ্নে উপনীত। সরকার পক্ষ যদি এত দিন রাহুল গাঁধীকে বলার সুযোগ না দিয়ে থাকে, তা হলে অন্তিম লগ্নেও সে সুযোগ মিলবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু সংসদে বিস্ফোরণ ঘটানোর সুযোগ মিলল না বলে, বোমাটাই আর নিক্ষিপ্ত হবে না, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় কিন্তু রাহুল গাঁধী বা তাঁর দলের হাতে আর নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, প্রথম বার উঠেছে, বিষয় অত্যন্ত গুরুতর। অবশ্যই ধরে নিতে হবে, রাহুল গাঁধী বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করার পরই তা নিয়ে মুখ খুলেছেন। অতএব, রাহুল গাঁধী পিছিয়ে আসবেন না, এও ধরে নিতে হবে। তাই সংসদে হোক বা বাইরে, আজ হোক বা কাল, বোমাটা সম্ভবত নিক্ষিপ্ত হচ্ছেই। প্রশ্ন হল, বোমার গর্ভে বিস্ফোরক কতখানি রয়েছে? প্রশ্ন হল, বিস্ফোরণের অভিঘাতটা কতটা তীব্র হতে চলেছে?
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি সংক্রান্ত যে তথ্য হাতে এসেছে বলে রাহুল গাঁধী দাবি করছেন, সে তথ্য যদি সত্যিই সারগর্ভ হয়, তা হলে কঠিন দিন অপেক্ষায় নরেন্দ্র মোদীদের জন্য। অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়ে যাবে সে জল। শাসক শিবির তাই যতই প্রত্যয় দেখাক জন-পরিসরে, অস্বস্তির খচখচে কাঁটা কিন্তু নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে সেখানে।
কিন্তু যদি উল্টোটা হয়? যদি উপযুক্ত মাত্রায় বিস্ফোরক মজুত না থাকে রাহুল গাঁধীর বোমায়? সে ক্ষেত্রে কিন্তু বিপদ রয়েছে কংগ্রেসের। ভারতীয় রাজনীতির এক অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে কিন্তু রাহুল গাঁধী নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি এখনও। সে প্রতিষ্ঠা অর্জন করার সুযোগ যখন এসেছে, ভাবমূর্তি তৈরির ক্ষেত্র যখন প্রস্তুত, তখনও যদি প্রমাণ করতে না পারেন সারগর্ভতা, তা হলে কিন্তু আরও কণ্টকাকীর্ণ হবে সামনের সড়ক। ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইটাকে আবার শূন্য থেকেও শুরু করতে হতে পারে কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে। সে কথা মাথায় রেখে স্নায়ুতন্ত্রে শিরশিরে স্রোত আজ কংগ্রেসেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy