রঙের উৎসব যেন রঙিন থাকছে না আর। কালচে হয়ে আসছে ক্রমশ। প্রতীকী ছবি।
উৎসবে নিশ্চয়ই উচ্ছ্বাসের অবকাশ থাকে। কিন্তু, উচ্ছ্বাসের অর্থ কী? উচ্ছ্বাসে কি অবাধ লাম্পট্য এবং ‘যা ইচ্ছে তাই’ করার অবকাশ থাকে? প্রশ্নচিহ্নটা খুব বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে দিনে দিনে।
হোলি উপলক্ষে ডিটারজেন্ট উৎপাদক সংস্থার বিজ্ঞাপনেও সামাজিক ক্লেদের প্রতিফলন। দুই তরুণীকে দেখে অশালীন উচ্ছ্বাসের উদ্রেক দুই যুবকের মধ্যে। রং লাগানোর অছিলায় অসদুদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা। তরুণীর ছুড়ে দেওয়া প্রশ্ন— জামাকাপড়ের ময়লা তো ডিটারজেন্টে ধুয়ে যাবে, মনের ময়লা দূর হবে কীসে?
এই বিজ্ঞাপন কোনও মনগড়া পরিস্থিতি নয়। আমাদের আশেপাশে রোজ যা ঘটে চলেছে, তা থেকে জন্ম নেওয়া উদ্বেগের প্রতিফলন রয়েছে এই বিজ্ঞাপনে। অবক্ষয় কতটা সাঙ্ঘাতিক চেহারা নিলে সামাজিক উদ্বেগের প্রতিফলনটা এত দূর ছড়িয়ে যায়!
উত্তর ভারতে রঙের উৎসব যেন রঙিন থাকছে না আর। কালচে হয়ে আসছে ক্রমশ। প্রথমে অভিযোগ উঠল, দুই তরুণীর গায়ে বীর্যে পূর্ণ বেলুন ছুড়ে মারার। তার পর অভিযোগ উঠল, মেয়েদের গায়ে প্রস্রাব ভরা বেলুন ছুড়ে মারার। লুকিয়ে-চুরিয়ে নয়, প্রকাশ্যে ঘটানো হল এই ঘটনা। বীর্য বা প্রস্রাবে ভরা বেলুন যাঁদের গায়ে ছুড়ে মারা হল, তাঁদের আশপাশে অন্য অনেকেই ছিলেন। সকলের সামনেই ঘটল ঘটনাগুলো। কেউ প্রতিবাদ তো করলেনই না, উল্টে কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন— বুরা না মানো, হোলি হ্যায়।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যে যুবকরা ওই কদর্য কাণ্ড ঘটাল, অবক্ষয় কি শুধু তাদের? যাঁরা নীরব দর্শক হয়ে রইলেন এবং যাঁরা প্রশ্রয়ের বার্তা দিলেন, তাঁদের বোধবুদ্ধি সুস্থ রয়েছে তো?
প্রতিবাদ কি কেউ করেন না? করেন। অনর্থক হিংসার প্রতিবাদ করতে এক যুবক এগিয়ে গেলেন ওই দিল্লির বুকেই। হোলির মরসুমে পিচকিরি থেকে জল বা রং ছুড়ে দেওয়ার ‘অপরাধে’ একটি শিশুর উপর তাণ্ডব শুরু করতে দেখা গিয়েছিল কয়েক জনকে। এক যুবক প্রতিবাদ করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই দলবল জুটিয়ে এনে হামলা করা হয় ওই যুবকের উপরে। সর্বসমক্ষে রড দিয়ে বেধড়ক মারধর। তার পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক কোপ। কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসেননি। কেউ কেউ পুলিশে নাকি খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশও সময় মতো পৌঁছয়নি।
আরও পড়ুন
বীর্যের পর প্রস্রাব ভরা বেলুন, দিল্লিতে আক্রান্ত একের পর এক ছাত্রী
ছবিটা কী রকম দাঁড়াল তা হলে? উৎসবের নামে অবাধ লাম্পট্য, বেপরোয়া দুরাচার চলবে। কেউ প্রতিবাদ করবেন না, কেউ কেউ প্রশ্রয় দেবেন বরং। আর যে নিখাদ উৎসবে মাততে চেয়েছিল, তার উপর তাণ্ডব দেখে কেউ প্রতিবাদে এগিয়ে যাবেন এবং সর্বসমক্ষে পঞ্চাশবার ছুরিকাহত হবেন। কেউ আটকাতে আসবে না।
এই সমাজে বাস করছি আমরা! এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে আশপাশটা আমাদের! শুধু দিল্লিতে নয়, শুধু উত্তর ভারতেও নয়। ঘরের উঠোনে, এই বাংলাতেও একই প্রবণতা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি আমরা। বিসর্জন শোভাযাত্রার নামে ‘যা ইচ্ছে তাই’ করার প্রবণতা এ বাংলাতে বাড়ছে দিন দিন।
স্তম্ভিত হয়ে ভাবতে হচ্ছে— এত দুর্দিন এল আমাদের? অবক্ষয়ে, বেপরোয়া অসামাজিকতায় এবং অবাধ লাম্পট্যে উৎসব খুঁজতে হচ্ছে আজ?
এই মুহূর্তে রুখে দাঁড়ানো দরকার। না হলে অদূর ভবিষ্যতেই আরও বড় বিপর্যয় কিন্তু অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy