প্রতীকী ছবি।
গত দিনে সামাজিক মাধ্যমের অন্যতর একটা মুখ চর্চায় এসেছিল— নেতির মুখ, উগ্রতার মুখ। আজ উঠে এল আর একটা মুখ। এই মুখটা অনেকটা ইতিবাচক, আদ্যন্ত গণতান্ত্রিক এবং অসীম শক্তিধর।
এক প্রত্যন্ত সীমান্তে, দুর্গম পারিপার্শ্বিকতায় কর্তব্যরত এক সেনা জওয়ান। খাবারের মান নিয়ে তাঁর অভিযোগ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সেই প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে উঠে এসে তাঁর অভিযোগটা নাড়িয়ে দিল গোটা দেশকে। নড়েচড়ে বসল দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা দফায় দফায় গোটা দেশকে আশ্বস্ত করতে বাধ্য হলেন যে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই খতিয়ে দেখা হবে অভিযোগটি।
তেজবাহাদুর যাদব যে অভিযোগ করেছেন, তার সত্যাসত্য এখনও বিচার্য। সীমান্তরক্ষী জওয়ান সত্যটাকে তুলে ধরেছেন, নাকি ভিত্তিহীন চাঞ্চল্য ছড়িয়েছেন, তা তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু অভিযোগটা যদি সত্য হয়, তা হলে অবশ্যই তিনি গোটা ব্যবস্থাকে একটা বাঁকের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগের সত্যতা যদি প্রমাণিত হয়, তা হলে দায়বদ্ধ সবক’টি পক্ষকে ফল তো পেতে হবেই। দীর্ঘ দিনের চেনা পথটাও একটা নতুন মোড় নিয়ে নেবে।
তেজবাহাদুর যাদবের অভিযোগের সত্যতা যদি প্রমাণিত না হয়, তা হলে কী হবে? তা হলে তেজবাহাদুরকে হয়তো এক বিরূপ ফলের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সমাজে এবং রাষ্ট্রে দীর্ঘ দিন ধরে চালু নানা বদ অভ্যাসের উপর একটা আঘাত তিনি রেখে যাবেন। এ দেশে প্রচলিত বন্দোবস্তে ক্লেদ যা কিছু রয়েছে, সে সব ছিল-আছে-থাকবে এবং এই বন্দোবস্ত মেনে নিয়েই চলতে হবে— এই মানসিকতাকে তিনি বড়সড় ধাক্কা দিয়ে যাবেন।
নিয়ন্ত্রণরেখায় বা অন্য অনেক সীমান্তে অভাবনীয় প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হয় আমাদের সেনাবাহিনীকে। প্রশাসনিক অকর্মণ্যতার কারণে সেই বাহিনীর বুনিয়াদি চাহিদাগুলোও যদি পূরণ করা না যায়, তা হলে সে সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক! বিএসএফ জওয়ানের পোস্ট করা ভিডিওটাকে তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখতেই হচ্ছে। সত্যটা খুঁজে বার করার উপর জোর দিতেই হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম এখানেই তার সাফল্যের ছাপটা রেখে দিল। গণতান্ত্রিক সংবিধান, গণতান্ত্রিক শাসন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া— সবই রয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। কিন্তু প্রত্যেক নাগরিকের বক্তব্যকেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে রাষ্ট্র যে বাধ্য, তা আমরা অনুধাবন করতে পারিনি অনেকেই। তেজবাহাদুর যাদব আজ এক উপলক্ষ মাত্র। তাঁর দৃষ্টান্তকে কেন্দ্র করে আসলে সোশ্যাল মিডিয়া বুঝিয়ে দিল নিজের শক্তিটা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আজ দেশের প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে এক সাধারণ নাগরিকের তোলা একটা অভিযোগ অত্যন্ত দ্রুত গুরুতর আকার নিয়ে যে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার ক্ষমতা রাখে, তা বেশ বোঝা গেল।
বোঝা গেল সোশ্যাল মিডিয়া আজ গণতন্ত্রের বাহন হতেও প্রস্তুত। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা স্তরে যা কিছু নেতি এত দিন ধরে চালু, আপত্তিকর যা কিছু রোজ চলছে, অপছন্দের এবং অস্বস্তির বিষয় হলেও নাগরিক সে সব চালু বদ অভ্যাস মেনে নিতে বাধ্য, তেমনটা আর নয়। অস্বস্তি ছিল এবং আছে যখন, তখন থাকবেই এবং অসহায় ভাবে মেনে নিতে হবেই, এমনটা আর নয়। সামাজিক মাধ্যমের হাত ধরে গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর যদি এ ভাবে আরও দৃঢ় হয়, উচ্চকিত হয়, তা হলে বলতেই হচ্ছে— সাধু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy