Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনিবার্য

কলিকাতায় বাস এখনও ডিজ়েলেই চলে। ছোট-বড় ট্রাকেরও জ্বালানি ডিজ়েলই। দুর্জনে বলিবে, খাস শহরে না হইলেও শহরতলিতে কাটা তেলে চলা অটোরও অভাব নাই। অবস্থাপন্ন নাগরিকের বাজির ফুর্তি হইতে গরিবের প্লাস্টিক জ্বালাইয়া আগুন পোহানো, এবং পরিবহণ— প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কলিকাতা ভারতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করিতে পারিয়াছে। একটি উৎসব করিলে হয় না?

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

এক নম্বরে কলিকাতা। দিল্লিকেও পিছনে ফেলিয়া শীর্ষস্থানটি ছিনাইয়া লইয়াছে এই শহর। বায়ুদূষণের প্রতিযোগিতায়। গত সোমবার, ১২ নভেম্বর, কলিকাতার একটি অঞ্চলে বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ১০ কণার উপস্থিতি ছিল ১২৪৪ মাইক্রোগ্রাম। প্রতি ঘনমিটারে ৫০০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ১০ কণা থাকিলেই তাহা ‘মারাত্মক’ হিসাবে গণ্য। সেই স্তরকে শহর কলিকাতা বলিয়া বলিয়া টপকাইতেছে। দিল্লির তবু অজুহাত আছে— সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার খেতে ফসল কাটিবার পর প়ড়িয়া থাকা খড় ইত্যাদিকে কৃষকরা মাঠেই জ্বালাইয়া দেন। প্রতি অক্টোবর-নভেম্বরে সেই দূষণ শহরকে ঢাকিয়া দেয়। কলিকাতার ক্ষেত্রে তেমন কথা বলিবারও উপায় নাই। তাহা হইলে, এই প্রবল দূষণের কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে ইদানীং জঞ্জাল পুড়াইবার প্রবণতা বাড়িতেছে। শীত আসিলে তাহা আরও বাড়ে— লোকে আঁচ পোহাইতে চাহে। দীপাবলি-ছট পূজায় আদালত ও নাগরিক সমাজের যাবতীয় বাধানিষেধ ও আপত্তিকে উড়াইয়া দেদার বাজিও পুড়িয়াছে। মানুষের আনন্দ হইয়াছে, ফলে দূষণের কথাটি কাহারও স্মরণে ছিল না বলিয়াই অনুমান করা চলে। আরও বড় সমস্যা ডিজ়েলচালিত পরিবহণে। কলিকাতায় বাস এখনও ডিজ়েলেই চলে। ছোট-বড় ট্রাকেরও জ্বালানি ডিজ়েলই। দুর্জনে বলিবে, খাস শহরে না হইলেও শহরতলিতে কাটা তেলে চলা অটোরও অভাব নাই। অবস্থাপন্ন নাগরিকের বাজির ফুর্তি হইতে গরিবের প্লাস্টিক জ্বালাইয়া আগুন পোহানো, এবং পরিবহণ— প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কলিকাতা ভারতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করিতে পারিয়াছে। একটি উৎসব করিলে হয় না?

অঙ্গুলিনির্দেশ করিতে হইলে তাহা কোন দিকে করা বিধেয়? তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের দিকে, যাঁহারা প্রাণপণে বাজি পুড়াইয়াছেন? ফুটপাতে আগুন পোহাইতে বসা গরিবদের দিকে? জঞ্জাল পুড়াইয়া দায় সারিয়া ফেলিতে তৎপর সাফাইকর্মীদের দিকে? বাস-ট্রাক মালিকদের দিকে? না। আঙুলটি উঠিবে মুখ্যত সরকারের দিকে, প্রশাসনের দিকে। যে কারণগুলিতে শহরের বায়ু প্রাণঘাতী হইয়া উঠিয়াছে, তাহার কোনওটিই অনিবার্য ছিল না। তবুও দূষণ মারাত্মক হইয়াছে, কারণ সরকার তাহা ঠেকাইতে চেষ্টা করে নাই। গণপরিবহণে সিএনজি ব্যবহারের নীতি প্রণয়ন করিয়া উঠিতে পারে নাই। বাজি পোড়ানো বন্ধ করিতে পারে নাই, কাটা তেলের দৌরাত্ম্য ঠেকাইতে পারে নাই। তাহারও অধিক, আইন ভাঙিয়া পরিবেশের ক্ষতি করিলে প্রশাসন যে রেয়াত করিবে না, এই কথাটি প্রতিষ্ঠা করিবার কোনও চেষ্টাই করে নাই। সাম্প্রতিক দীপাবলি ও ছট পূজা দেখাইয়া দিয়াছে, এই রাজ্যে আদালতের নিষেধাজ্ঞারও মূল্য নাই— সবার উপরে ফুর্তি সত্য। রাজ্যে কোনও ক্ষেত্রেই আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত, এমন দাবি করা মুশকিল। পরিবেশের ক্ষেত্রে সমস্যাটি আরও এককাঠি বাড়া, কারণ পরিবেশের কোনও ব্যক্তিমালিকানা নাই। ফলে, তাহার ক্ষতিতে ভোটের ক্ষতি হওয়ার প্রত্যক্ষ সম্ভাবনা ক্ষীণ। সরকারের আরও বড় ব্যর্থতা, পরিবেশের প্রশ্নটির গুরুত্বই বুঝিতে না পারা। পরিবেশের জন্য পৃথক মন্ত্রক গঠনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগণ্য ছিল। সেই রাজ্যই আজ অবধি পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করিতে পারিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Air Pollution Kolkata Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE