কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলে, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি কতটা অবজ্ঞা থাকলে, এমন ঘটনা ঘটানো যায়?
ক্ষণে ক্ষণে চমকে উঠছি আমরা। বিস্মিত হচ্ছি। এমন একটা অভিযোগ নানা পাটেকরের নামে উঠল! অলোক নাথও এ রকম ঘটাতে পারেন! কাকে বিশ্বাস করা যাবে, আর কাকে করা যাবে না, তা ভাবতে গিয়ে হয়তো অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। #মিটু নামক যে ঝড়টা উঠেছে, তার প্রতি সমর্থন বাড়ছে। লজ্জায় হোক, সঙ্কোচে হোক, জীবনের প্রতি ঘৃণায় হোক বা বিতৃষ্ণায়— দীর্ঘ-দীর্ঘ সময় বুকের ভিতরে দুঃসহ কোনও বাষ্প জমিয়ে রেখেছিলেন যাঁরা, তাঁরা এক নিঃশ্বাসে সব উগরে দিচ্ছেন। ঝড়টা আড়ে-বহরে-প্রাবল্যে-তীব্রতায় বেড়ে যাচ্ছে। ঝড়টায় তারুণ্যের উদ্বেল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কে দোষী, কে নির্দোষ, সে সব নিয়ে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আবহটাকে নেতিবাচক বলা যাচ্ছে না কিছুতেই। কারণ আবহে একটা বিদ্রোহের আঘ্রাণ রয়েছে, বাঁধন ছিঁড়ে দেওয়ার আভাস রয়েছে। এমন নানান সাত-পাঁচ এবং যোগ-ভাগ বিচার করে যখন মনে হল যে, তারুণ্যের গন্ধ মাখা এই ঝড়টার কাছে আত্মসমর্পণ করা যেতেই পারে কিছু সময়ের জন্য, ঠিক তখনই ধাক্কাটা লাগল। তারুণ্যের মাঝ থেকেই আঘাতটা এল।
কলকাতা মেট্রো আরও একবার স্তম্ভিত করল। মেট্রোর কামরায় যুগলের আচরণকে ‘অশালীন’ আখ্যা দিয়ে আইনের রক্ষক হয়ে উঠেছিলেন কিছু স্বঘোষিত নীতি-পুলিশ মাস পাঁচেক আগে। এ বার মেট্রোর কামরায় ১০ যুবক মিলে অকথ্য হেনস্থার মুখে ফেললেন এক যুবতীকে।
মঙ্গলবার বিকেলে কবি সুভাষগামী মেট্রোর কামরায় এক যুবতীর সঙ্গে ১০ যুবক যে ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তেমন অভিযোগের মুখোমুখি কলকাতা স্মরণাতীত কালে হয়নি। ব্যস্ত বিকেল, মেট্রোর জমজমাট কামরা। সেখানে সর্বসমক্ষে ১০ জনে মিলে অকথ্য ভাষা ছুড়ে দিচ্ছেন এক তরুণীর দিকে, গায়ের উপরে ঢলে পড়ছেন ইচ্ছাকৃত, অনবরত অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে যাচ্ছেন, মেট্রো থেকে নামার রাস্তা আটকে দিচ্ছেন, হাতের ব্যাগটাও টেনে ধরছেন, অথচ প্রায় কেউ কোনও প্রতিবাদ করছেন না— অভিযোগটা এমনই। পরিস্থিতিটার কথা ভাবলেই তাই শিউরে উঠতে হচ্ছে বার বার।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
প্রথম প্রশ্ন হল, কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলে, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি কতটা অবজ্ঞা থাকলে, এমন ঘটনা ঘটানো যায়?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেও মেট্রোর প্রায় গোটা কামরা নীরব-নিশ্চুপ রইল কী ভাবে?
মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য দ্রুত পদক্ষেপ করেছেন। ১০ অভিযুক্তকেই প্রথমে আটকে দিয়েছেন তাঁরা, তার পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের এই তৎপরতা প্রশংসনীয়। পুলিশও প্রশংসনীয় ভূমিকাই নেবে, এমনটা ধরে নেওয়া যাক আপাতত। কিন্তু তাতে সামাজিক গ্লানিটা একটুও কমছে না।
আরও পড়ুন: ‘বললাম, সুস্থ ভাবে দাঁড়াতে পারছ না? ওরা বলল, এটা মেট্রো, হতেই পারে...’
কলকাতাকে নিয়ে বহুবিধ গর্ব তার নাগরিকদের। কলকাতা কারও কারও কাছে সম্ভবত একটা পৃথক জীবনবোধ, একটা অনন্য অনুভূতি। সেই কলকাতায় এমনটা ঘটতে পারল কী ভাবে? যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য তো হতে হচ্ছেই। মেট্রোর ওই কামরার অন্য যাত্রীদের কথা ভাবলেও বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চাইছে না।
যে ঘটনার অভিযোগ উঠেছে, তা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা হলে মেট্রোর ওই কামরার অধিকাংশ যাত্রীকে অপরাধী তকমা দিতে হবে। ঘৃণ্য কার্যকলাপে ১০ যুবক যেমন অভিযুক্ত, ঠিক তেমন ভাবেই অভিযোগের আঙুল তোলা উচিত প্রত্যক্ষদর্শীদের অধিকাংশের দিকেও। আইনের চোখে তাঁরা অপরাধী বা অভিযুক্ত হয়তো নন। কিন্তু সমাজের চোখে তাঁরা অবশ্যই অপরাধী।
এ লজ্জা কলকাতা সইবে কী ভাবে! ভাবার চেষ্টা করলে চিন্তাশক্তি স্থবির হয়ে আসতে চায় যেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy