প্রবাদ বহু ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যায়। যেমন ‘পেন ইজ় মাইটিয়ার দ্যান সোর্ড’। বড়সড় কিছু ঘটলে বোঝা যায়, কেন সেগুলি প্রবাদ, কেন চিরন্তন। যাওয়া যাক কুয়েতের গল্পে। ‘দ্য লিটল মারমেড’, ‘নাইন্টিন এইটি-ফোর’, এমনকী এনসাইক্লোপিডিয়া— ইদানীং কোনও বই-ই কুয়েতের সেন্সরের বেড়া ডিঙোতে পারছে না। কারণ বিবিধ। যেমন জ্ঞানকোষে মিকেলেঞ্জেলো সংক্রান্ত একটি এন্ট্রি ছিল। ইতালীয় ভাস্করের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি ডেভিডের ভাস্কর্যের একটি ছবি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডেভিড নিরাবরণ। অতএব, চলবে না। মৎস্যকন্যারা অর্ধেক বিকিনি পরলে, সে-ও চলবে না। আর জর্জ অরওয়েলে কেন নিষেধ, কেউ জানেন না।
বহু দিন ধরেই কুয়েতের পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্যরা বিভিন্ন বই নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সুর চড়াচ্ছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই দাবিকে বেশ গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে কুয়েত সরকার। তাই ২০১৪ থেকে ৪৩৯০টি বই নিষিদ্ধ হয়েছে আরব উপদ্বীপের ছোট্ট দেশটিতে। যে বারো সদস্যের কমিটি (ছ’জন করে আরবি ও ইংরেজি পাঠক) নিরন্তর এই কঠিন কাজটি করে চলেছে, তাদের ব্যাখ্যা চমকপ্রদ। যেমন, ‘হোয়াই উই রাইট’ বলে একটি কাব্যগ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ সঙ্কলক মেরিডিথ মারান তাঁর বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন। বই প্রকাশ আটকে দেওয়ার এর চেয়ে যথার্থ কারণ আর কী-ই বা হতে পারে! পুরস্কার পেলেও রক্ষা নেই, বরং বিপদ বেশি। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ়ের ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড’-এর কাহিনির এক দৃশ্যে স্বামীকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখছেন তাঁর স্ত্রী— যতই নোবেল জিতুক, ও সব কি পড়া উচিত?
এ বড় কঠিন ছাঁকনি। যা দিয়ে প্রায় কিছুই গলে না। সুকঠিন পরীক্ষায় যদি কোনও সাহিত্য উতরে যায়, তবেই তা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ বই লেখার পর বরং পুলিশের কাছে যাওয়া যেতে পারে। সেখানে অগ্নিপরীক্ষার বন্দোবস্ত থাকতে পারে। অবশ্য, মহৎ সাহিত্য চির দিনই রাষ্ট্রকে অস্বস্তিতে ফেলে। অন্যান্য দেশেও নিষেধ বা মামলার মুখে পড়েছে ‘নাইন্টিন এইটি-ফোর’।