Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

এ বার শ্রমিক

প্রধানত তিনটি দাবি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হইয়াছিল। এক, ন্যূনতম মজুরি কেমন করিয়া নির্দিষ্ট হইবে, তাহার স্বচ্ছ ও কার্যকর পদ্ধতি নির্দিষ্ট করিতে হইবে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share: Save:

কৃষক রুষ্ট হইয়াছে। এ বার শ্রমিকও মুখ ফিরাইল। কেন্দ্রীয় শ্রম ও নিয়োগ মন্ত্রক আয়োজিত জাতীয় শ্রমিক সম্মেলনে যোগদানে নারাজ শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাহাদের বিরোধিতা প্রকাশ্যে আসিবার পর কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রক কোনও কারণ না দর্শাইয়া সম্মেলনটি পিছাইয়া দিয়াছে। জাতীয় শ্রমিক সম্মেলনের সাড়ে চার দশকের ইতিহাসে এমন ঘটিল এই প্রথম। সংঘ পরিবারভুক্ত ভারতীয় মজদুর সংঘ হইতে বাম-সমর্থিত সিটু, সকল শ্রমিক সংগঠনের এই সরকার-বিরোধী অবস্থান নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতি এক অশনি সংকেত। ছেচল্লিশতম শ্রমিক সম্মেলনটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করিয়াছিলেন। সাতচল্লিশতম সম্মেলনটি বয়কট করা হইবে, বিএমএস-এর এমন অবস্থানে মোদী পিছু হটিলেন। অথচ এই সম্মেলনের গুরুত্ব কম নহে। ইহা একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক যাহা সরকারকে শ্রমনীতি এবং শ্রমকল্যাণ বিষয়ে সুপারিশ করে। ভারতের বারোটি প্রধান শ্রমিক সংগঠন, নিয়োগকারী সংস্থাগুলির সংগঠন, এবং সরকারের পক্ষ হইতে রাজ্য ও কেন্দ্রের শ্রম দফতরের প্রতিনিধিরা ইহাতে উপস্থিত থাকেন। বিএমএস-এর দাবি, শ্রমিকদের জন্য মোদী সরকার তাহার সাম্প্রতিক বাজেটে কিছুই রাখে নাই। অপরপক্ষে সিটুসহ দশটি প্রধান শ্রমিক সংগঠনের বক্তব্য, ইতিপূর্বে সম্মেলন হইতে যে দাবিগুলি উঠিয়াছে, মোদী সরকার তাহাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়াছে।

প্রধানত তিনটি দাবি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হইয়াছিল। এক, ন্যূনতম মজুরি কেমন করিয়া নির্দিষ্ট হইবে, তাহার স্বচ্ছ ও কার্যকর পদ্ধতি নির্দিষ্ট করিতে হইবে। দুই, চুক্তি-মজুরদের সমান কাজের জন্য নিয়মিত কর্মীদের সমান বেতন দিতে হইবে। এবং তিন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সরকারি নানা প্রকল্পে কর্মরত অন্যান্য কর্মীদের ন্যূনতম বেতন দিতে হইবে, তাহাদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইবে। পরপর চারটি জাতীয় সম্মেলন হইতে এই দাবিগুলি উঠিয়াছে। এই দাবিগুলির ন্যায্যতা লইয়া কেন্দ্র বিতর্ক করিতে পারে। কিন্তু নীরবে এড়াইতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং যে সম্মেলনের উদ্বোধন করিয়াছেন, তাহাতে গৃহীত সুপারিশ তাঁহার সরকারই যদি উপেক্ষা করে, তবে সম্মেলনকে ‘প্রহসন’ মনে করিলে শ্রমিক নেতাদের দোষ কোথায়?

মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানে বৃদ্ধিকে এ বৎসর আর্থিক সমীক্ষা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়াছে। কিন্তু বাজেটে তাহার প্রতিফলন নাই। ভারতে সরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের বড় অংশ অঙ্গনওয়া়ড়ি, আশাকর্মী প্রভৃতি সরকারি প্রকল্পে নিযুক্ত। তাহাদের জন্য কোনও বাড়তি সুবিধা ঘোষিত হয় নাই, এমনকী ওই প্রকল্পগুলিতেও বরাদ্দ তেমন বাড়ে নাই। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অধিকাংশ শ্রমিক মহিলা। সেই প্রকল্পে বরাদ্দ গত বৎসরের চাইতে সাত হাজার কোটি টাকা বাড়িয়াছে বটে, কিন্তু এগারো হাজার কোটি টাকা বকেয়া মিটাইতে খরচ হইবে। নিয়োগের প্রসঙ্গ উঠিলেই সরকার মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য ঋণ বাড়াইবার ঘোষণা করে। কিন্তু কী করিয়া সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়মিত কাজের সংখ্যা বাড়িবে, তাহার হদিশ মেলে নাই। বরং ‘নিয়োগ ও ছাঁটাই’ পদ্ধতিকে বস্ত্রশিল্প হইতে সকল শিল্পে বিস্তৃত করিবার ঘোষণা সংগঠিত ক্ষেত্রের ভিতর অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াইবে, আশঙ্কা শ্রমিক সংগঠনগুলির। অপর দিকে, সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োগ বাড়াইতে গত বৎসর ‘প্রধানমন্ত্রী রোজগার প্রোৎসাহন যোজনা’ ঘোষিত হইয়াছিল। কিন্তু বরাদ্দের অর্ধেক খরচ হয় নাই, যাহা নিয়োগবৃদ্ধিতে ব্যর্থতার প্রমাণ। ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ কিংবা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া,’ কোনওটিই নিয়োগ বা রোজগার বা়ড়াইতে পারে নাই। শ্রমিকের ক্ষোভের কারণ যথেষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Labour Conference Labours
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE