আর তাঁর সেই কল্কেকাশি?
শিবরাম চক্রবর্তী (১৯০৩-১৯৮০) প্রসঙ্গে লেখক (‘চকরবর্তি’, পত্রিকা, ৯-৭) হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনেই সীমাবদ্ধ থাকলেন। গোয়েন্দা ‘কল্কেকাশি’র স্রষ্টাকে একটি বারও সামনে আনা হল না। বাস্তব জীবনে তাঁর পিস্তল হাতে নেওয়ার সেই আগুনে দিনগুলির একটা ছায়া কোথাও এসে পড়েছিল পরবর্তী সময়ে তাঁর এই গোয়েন্দা কাহিনিগুলোতে। অনেকটা তাঁর সমসাময়িক সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের গোয়েন্দা-চরিত্র ‘হুকাকাশি’র আদলে শিবরাম গড়ে তুলেছিলেন তাঁর মজার কোরিয়ান গোয়েন্দা কল্কেকাশিকে। তাঁর ভাষায় তপ্ত কল্কের মতো গনগনে আর কাঁসির মতো খনখনে দাপট কল্কেকাশির।
‘টিকটিকির ল্যাজের দিক’ গল্পের শুরুতে শিবরাম বলেই দেন তাঁর কল্কেকাশি হল হুঁকাকাশির ভায়রাভাই (চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহারটা লক্ষণীয়)। অবাঙালি কল্কেকাশির বাড়ি ডায়মন্ড হারবার রোডে। কল্কেকাশিকে নিয়ে তাঁর গল্পগুলির মধ্যে ‘কল্কেকাশির কাণ্ড’, ‘কল্কেকাশির অবাক কাণ্ড’, ‘ইতরবিশেষ’, ‘সূত্র’ অন্যতম। কল্কেকাশির অবাক কাণ্ডতে আবার হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনকেও হাজির করিয়েছিলেন শিবরাম।
কল্কেকাশি ছাড়াও তাঁর কিশোর পাঠ্য ‘গদাইয়ের গোয়েন্দাগিরি’ গল্পে গোয়েন্দা গদাই, ‘অমলের গোয়েন্দাগিরি’ গল্পে শার্লক হোমসের ভক্ত গোয়েন্দা অমল, ‘এক মেয়ে ব্যোমকেশের কাহিনি’তে ঊর্বশীকেও রহস্য সমাধান করতে দেখা গিয়েছিল। এর বাইরেও ‘বার্মার মামা’ এবং ‘কে হত্যাকারী’? ও ‘নারী রহস্যময়ী’ উপন্যাস দুটিতে পেশায় সাংবাদিক কান্তি মিত্রকে খুনের রহস্য তদন্ত করতে দেখা গিয়েছিল।
তবে এ-সবের মধ্যেই কোথাও না কোথাও ঠিক খুঁজে পাওয়া যেত সেই অতুলনীয় ও অকৃত্রিম শিব্রামি রসিকতার ছোঁয়া।
শুভায়ু সাহা। খাগড়া, মুর্শিদাবাদ
বেতনের প্রতিভা
সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ‘বেতনের প্রতিভা’ (১-৭) একাধারে যুক্তিপূর্ণ এবং বিতর্কিত। প্রথম দু’টি অনুচ্ছেদ নিজ যুক্তিতে যথেষ্ট বলীয়ান, কিন্তু শেষ অনুচ্ছেদটির বিশ্লেষণ একেবারে অসম্পূর্ণ। যতটুকু লেখা আছে, তার মধ্যে একটা যুক্তি আছে। কিন্তু ঘটনা হল, সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও কিছু সর্বভারতীয় আইনের তীব্র অনুশাসন অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এমন কিছু কাজ করতে বাধ্য করা হয়, যা প্রায় কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীকে করতে হয় না। যেমন, কোনও ছুটি ছাড়াই দুই থেকে আড়াই মাস দিন-রাত এক করে লোকসভা, বিধানসভা ইত্যাদি নির্বাচনের প্রস্তুতি, নানা কেন্দ্রীয় সমীক্ষা, জনগণনা, সারা বছর ভোটার তালিকা তৈরির কাজ।
উপরোক্ত কাজগুলি সব কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কিত কাজ, এবং করানো হয় নামমাত্র টিফিন-ভাতা, রবিবার অথবা এন আই অ্যাক্টের ছুটির দিন ৫০ টাকা বা খুব কম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। আবার, এই সব কাজ যে সমস্ত প্রশাসনিক কর্তাদের তত্ত্বাবধানে করানো হয়, তাঁদের একটা বড় অংশ সর্বভারতীয় চাকুরির নিয়মে থাকায় নিম্নবর্গীয় রাজ্য সরকারি কর্মীদের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার আকাশপাতাল ফারাক।
সংবিধানের নিয়ম, সম কাজে সম বেতন ও আর্থিক দায়িত্বের নৈতিকতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে ওই সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো যায় কি? রাজ্য সরকারি কর্মীরা শুধু রাজ্য সরকারের কাজ করলে আর সম বেতন ভাতার প্রশ্ন উঠবে না।
প্রসঙ্গক্রমে অভিরূপ সরকারের মহার্ঘ ভাতা এবং উন্নয়ন সম্পর্কে একটি সাম্প্রতিক রচনাও যথেষ্ট বিতর্কিত। ওই রচনার সারমর্ম হল, রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার তহবিল থেকে উন্নয়ন চালিয়ে গিয়ে ভালই হচ্ছে। যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্য কোনও রাজ্য সরকারও ওই পথে উন্নয়ন বজায় রাখে না, তাই আমার বিনীত জিজ্ঞাসা: তাঁর সমমতাবলম্বী উচ্চপদস্থ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা নিজেরা কি বেতন-ভাতার অতিরিক্ত কিছু অর্থ কোনও উন্নয়ন তহবিলে দান করে থাকেন? কথাটা বলছি, কারণ, আপনি আচরি ধর্ম...।
আশীষ ঘোষ। উত্তরপাড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy