কংগ্রেস দল ও ধর্ম
কংগ্রেস একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল— এ কথা কি নিঃসংশয়ে বলা যায়? উত্তর হল, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে মেনে চলা এবং একই সঙ্গে কখনও কখনও সে আদর্শকে লঙ্ঘন করা— দুই ব্যাপারেই এই দল শামিল। নেহরু ধর্মকে কখনওই আমল দেননি। গাঁধীকে চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘Religion is not familiar ground for me...’ কিন্তু গাঁধী তো আবার নেহরুকে লেখেন, ‘...I cannot leave religion and therefore Hinduism ’।
ইন্দিরা গাঁধী তাঁর জমানায় আরএসএস সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, আবার ধর্মীয় নেতা স্বামী ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারী ছিলেন তাঁর ব্যাকরুম পলিটিশিয়ান। রাজীব গাঁধীর জমানায় ধর্মনিরপেক্ষতার ঘোষিত নীতি বদলায়নি, আবার তাঁরই জমানায় শাহবানু মামলার ঘটনা ঘটে, ‘মুসলিম মহিলা বিল’ লোকসভায় পাশ হয়। আর রাহুল গাঁধীকে এ সময় যে সোমনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে গুজরাত সফরে নামতে হল, তা-ও আমরা লক্ষ করলাম।
কংগ্রেস দলের সেকুলার চরিত্র নিয়ে কংগ্রেস নেতাদেরই কেউ কেউ অনেক সময় প্রশ্ন তোলেন। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এ কে অ্যান্টনি ২০১৪ সালের মাঝামাঝি জানিয়েছিলেন, সংখ্যালঘুদের প্রতি আপাত-নৈকট্য প্রদর্শনের দরুন দলের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে।
‘দরজা খুলেও দ্বিধা, বিতর্ক সিপিআইয়ে’ শীর্ষক সংবাদ (২৯-১২) পড়ে মনে হল, ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতার আহ্বান জানানোটা সিপিআইয়ের পক্ষে সহজ নয়। কারণ, মুসলিম-তোষণ কিংবা কখনও নরম হিন্দুত্ব জাহিরের দোষে কংগ্রেস দুষ্ট, এ সমালোচনা কি কংগ্রেসের পক্ষে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব?
আবার, সাম্প্রদায়িকতা প্রধান বিপদ হলে সিপিআই-কে (বা সিপিএম-কে) কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা গড়তেই হবে।
এ মুহূর্তে অন্য বিকল্প নেই।
শিবাশিস দত্ত কলকাতা-৮৪
তাঁরা বলেছেন
ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধান থেকে মুছে দিতে চেয়ে বিজেপি মন্ত্রীর হুংকারের পর, বিজেপি নেতাদের নীরবতা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এতে তাঁরা খারাপ কিছু দেখেন না। বিজেপি নেতারা বোধহয় বোঝেন না, ধর্মনিরপেক্ষতা আর ধর্ম–বিরোধিতা এক জিনিস নয়। বরং ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্ম-বিরোধিতারই বিরোধিতা করে। তা বলে, ধর্মাচরণটা ব্যক্তিগত বিষয়।
একটি যথার্থ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যক্তির ধর্মবিশ্বাস, রীতিনীতি ও ধর্মীয় প্রচারকে যেমন কোনও ভাবে উৎসাহ দেয় না, তেমনই প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে না। উলটো দিকে, ধর্মে বিশ্বাসী জনসাধারণ এবং কোনও ধর্মেই বিশ্বাস করে না এমন জনসাধারণ— উভয়েরই সমান অধিকারের নীতিকে স্বীকার করে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে গাঁধীজি নিজে চলতেন হিন্দু সন্ন্যাসীর মতো। কংগ্রেসের নেতৃত্বে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বও মূলত উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতেই থেকে গিয়েছিল। ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলে জনসাধারণকে ধর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করে সমাজের গণতন্ত্রীকরণের কাজগুলি সম্পূর্ণ হল না, বিভিন্ন ভাষাভাষী উপজাতি এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়গুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজটিও সম্পূর্ণ হয়নি। এর ফলে স্বাধীনতার পর ভারতবাসী রাজনৈতিক ভাবে একটি জাতিতে পরিণত হল বটে, কিন্তু ধর্ম–বর্ণ–জাতিগত কারণে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক সম্প্রদায় হিসাবেই থেকে গেল৷
সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে গাঁধীজির যে নীতিগত ফারাক, ধর্ম সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি তার অন্যতম উপাদান। সুভাষ বলেছিলেন, ‘ধর্মকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া উচিত। ধর্ম ব্যক্তিবিশেষের বিষয় হওয়া উচিত, ব্যক্তি হিসাবে মানুষ যে ধর্ম পছন্দ করে তাহা অনুসরণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকিবে। কিন্তু ধর্মীয় কিংবা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের দ্বারা রাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত নয়। ইহা পরিচালিত হওয়া উচিত শুধু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক বিচারবুদ্ধির দ্বারা।’
তাই হিন্দুমহাসভা যখন হিন্দুত্ব নিয়ে রাজনীতি শুরু করল, তিনি তীব্র বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ‘সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদেরকে ত্রিশূল হাতে হিন্দু মহাসভা ভোট ভিক্ষায় পাঠিয়েছেন। ত্রিশূল আর গেরুয়া বসন দেখলে হিন্দুমাত্রই শির নত করে। ধর্মের সুযোগ নিয়ে, ধর্মকে কলুষিত করে হিন্দু মহাসভা রাজনীতির ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে। ...এই বিশ্বাসঘাতকদেরকে আপনারা রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে সরিয়ে দিন, তাদের কথা কেউ শুনবেন না।’ আরও বলেছিলেন, ‘...হিন্দুরা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়া ‘হিন্দুরাজের’ ধ্বনি শোনা যায়৷ এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা। ...হিন্দু ও মুসলমানের স্বার্থ পৃথক— ইহার চেয়ে মিথ্যা বাক্য আর কিছু হইতে পারে না। বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মড়ক ইত্যাদি বিপর্যয় তো কাউকে রেহাই দেয় না।’
রবীন্দ্রনাথও রাজনীতিতে ধর্মকে আনার বিরুদ্ধতা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘যে দেশে প্রধানত ধর্মের মিলেই মানুষকে মেলায়, অন্য কোনও বাঁধনে তাকে বাঁধতে পারে না, সে দেশ হতভাগ্য। সে দেশ স্বয়ং ধর্মকে দিয়ে যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেইটে সকলের চেয়ে সর্বনেশে বিভেদ।’ অন্য কোনও বাঁধন বলতে তিনি ধর্মের বাইরের বাঁধনের কথাই বলেছেন। তা শিক্ষার বাঁধন, উন্নত চিন্তার বাঁধন, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অবশ্যই গণতান্ত্রিক চিন্তার বাঁধন, যা আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া আর কিছু নয়।
শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, ‘আদর্শের উল্লেখ যখন করবো, তখনই বৃহৎ আদর্শ, কল্যাণের আদর্শ, গৌরবের আদর্শের কথাই স্মরণ করবো। কেবল মহামানবের আদর্শ গ্রহণ করবো, তাকে ভারতের আদর্শ, এশিয়ার আদর্শ, হিন্দুর আদর্শ এদিক দিয়ে কিছুতেই বিচার করবো না। ...বড়
বড় ঈশ্বরবিশ্বাসী ভক্তের দলই এযাবৎ দেশের পলিটিক্স নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে। যাদের হওয়া উচিত ছিল সন্ন্যাসী, তারা হলেন পলিটিসিয়ান। তাই ভারত পলিটিক্সে এতবড় দুর্গত।’
সমর মিত্র কলকাতা–১৩
‘সাদরে’ নিরস্ত?
দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ব্যতিক্রম নয়’ (১০-১২) নিবন্ধের বিরুদ্ধে ধ্রুবজ্যোতি বাগচী তাঁর ‘পুরুষ ভিলেন’ শীর্ষক চিঠিতে (২৩-১২) লিখছেন, ‘তিনি কি এমন অজস্র স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে পরিচিত নন, যেখানে সাদরে তাঁরা বাড়ির বউকে চাকরি করা থেকে নিরস্ত করেন? ...সেই বউটিকে যে শ্বশুর-শাশুড়ি অত্যন্ত আদরে তাঁদের নয়নের মণি করে রাখতে চান,...এই স্পর্শকাতর দিকটা নারীবাদীদের চোখে পড়ে না।’
প্রশ্ন হল, ‘সাদরে’, ‘নিরস্ত’ করা কি সম্ভব ? তার থেকেও বড় কথা, বাস্তবে জোর করে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনা যে ‘সাদরে’ চাকরি করা থেকে নিরস্ত করার ঘটনার থেকে অনেক বেশি, এ কথা কি সকলেরই জানা নয়? উনি বলেছেন, বউটিকে শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁদের নয়নের মণি করে রাখতে চান, তাই ‘আদর করে’, চাকরি করতে দেন না। নিজের ছেলেও তো তাঁদের নয়নের মণি, তার ক্ষেত্রে ‘চাকরি না করার’ প্রশ্ন তো কখনও ওঠে না!
আরও একটা কথা: মানুষকে মানুষ না ভেবে, শুধুমাত্র ‘নয়নের মণি’ মনে করাটা কি খুব স্বাস্থ্যকর? বরং পুত্রবধূকে নয়নের মণি না ভেবে, মানুষ হিসেবে মর্যাদাটুকু দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ভাল।
প্রত্যয় অধিকারী নিউ ইয়র্ক
শীতকাতুরে
শীত সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের ধরনটা এমন, যেন শীত ভাল করে পড়াটা সব সময়ই খুব অভিপ্রেত। কোনও কারণে জমিয়ে শীত না পড়লে, তা যেন সকলের কাছেই খুব হতাশার। কিন্তু যাঁরা শীতকাতুরে, অল্পেই সর্দি-জ্বর-হাঁপানিতে ভোগেন, শীত পড়তে না পড়তে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, তাঁরা কি আপনাদের পাঠক নন?
স্যমন্তক ভট্টাচার্য বালিগঞ্জ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy