Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: দেবকীর মুনশিয়ানা

‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’তে তাঁর চরিত্রটি নিজে দৃষ্টিহীন হয়েও যেন এক দর্পণ, যাতে প্রতিবিম্বিত হয় চৈতন্যলীলার নানা রং।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৭
Share: Save:

‘তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার আচার্য...’ (পত্রিকা, ৬-৪) পড়ে কিছু কথা। দেবকীকুমার বসুর বৈষ্ণব-ভাবধারায় নির্মিত ‘ত্রয়ী’ বা ‘ট্রিলজি’র প্রথম ছবি ‘চণ্ডীদাস’ (১৯৩২)। বিষয়বস্তু, দেশজ উপাদান, আবহসঙ্গীত, সুপারইম্পোজ়িশন শটের ব্যবহার, মনকাড়া কাব্যময় সংলাপ— এ সবের পাশাপাশি এক বড় প্রাপ্তি গায়ক কৃষ্ণচন্দ্রকে অভিনেতা হিসেবেও ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত। এই নির্বাচন যে দেবকীবাবুর পরিচালক-সত্তার কাছে কেবল পরীক্ষামূলক ছিল না, তার পরিচয় মেলে, যখন ‘বিদ্যাপতি’ এবং ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ ছবিতেও তিনি বিশেষ করে কৃষ্ণচন্দ্র দে-র জন্যই চরিত্র সৃষ্টি করেন।

‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’তে তাঁর চরিত্রটি নিজে দৃষ্টিহীন হয়েও যেন এক দর্পণ, যাতে প্রতিবিম্বিত হয় চৈতন্যলীলার নানা রং।

‘বিদ্যাপতি’ (১৯৩৭) ছবিটি কাজী নজরুলের লেখা নাটকের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। নাটকের ভাষাকে কী ভাবে চলচ্চিত্রের ভাষায় বদলে নিতে হয়, দেবকীকুমার তা দেখিয়েছিলেন। রানি লছমি (ছায়াদেবী) ভরা সভার মাঝে বিদ্যাপতির জন্য পাঠিয়ে দেন নিজের গলার মালা, রাজা শিব সিংহের (দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়) অভিব্যক্তি বোঝাতে পরিচালক ব্যবহার করেন আলোছায়ার অদ্ভুত বিন্যাস— পর পর কয়েকটি ক্লোজ়-আপের সাহায্যে। ত্রিমুখী সম্পর্কের টানে গড়ে ওঠা তীব্র মানসিক সংঘাতের মুহূর্তগুলি ধরা দেয় আলোকসম্পাত ও দৃশ্যায়নের মুনশিয়ানায়। রানির মৃত্যুদৃশ্যে আবার সেই আলোছায়ার খেলা যখন মানুষী প্রেম আর ভগবদ্‌প্রেমকে একাকার করে দেয়, বৈষ্ণব চলচ্চিত্রের নান্দনিক দিকটিও যেন কথা বলে ওঠে।

‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ ছবিতে পরিচালক নাটকীয়তা বা অতিলৌকিকতা যথাসাধ্য বাদ দিলেন, অভিনয়ে এল সহজ গতি। নিমাইয়ের গৃহত্যাগের মুহূর্তে হাহাকারের বদলে ধরা দেয় এক শান্ত বিষাদ; মায়ের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে অচেতন বিষ্ণুপ্রিয়ার সামনেও গৌরাঙ্গের করজোড়ে প্রণামের ভঙ্গিটুকু মনে দাগ কেটে যায়। শ্রীচৈতন্য-চরিত্রে বসন্ত চৌধুরীর সংযত অথচ ভাবময় অভিব্যক্তি, গভীর চাহনি আর অসাধারণ কণ্ঠসম্পদকে ব্যবহার করে তিনি উপহার দিলেন এক নতুন ধরনের বাচনভঙ্গি, যা একই সঙ্গে কাব্যিক, শ্রুতিমধুর অথচ স্পষ্ট এবং স্বাভাবিক। আবার, এর পাশাপাশি বিষ্ণুপ্রিয়ার ভূমিকায় সুচিত্রা সেনের সংলাপে তিনি নিয়ে এলেন এক দিকে ঘরোয়া মাধুর্য, আর অন্য দিকে শ্রীরাধার মরমিয়া অনুষঙ্গ।

দেবকীবাবু চিত্রনাট্য লিখতেন নিজেই। ‘চণ্ডীদাস’ ও ‘বিদ্যাপতি’র ক্ষেত্রে লোককথা ও কিংবদন্তির আশ্রয় নেওয়া সহজ, কিন্তু একাধিক ‘প্রামাণ্য’ চৈতন্যজীবনীগ্রন্থ থেকে দু’ঘণ্টার উপযোগী চলচ্চিত্র-কাহিনি নির্মাণ করা কঠিন। তাই শুধু মূল কাহিনিসূত্র এবং তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে ছবির গল্প সাজিয়েছেন অনেক ক্ষেত্রেই নিজের কল্পনা, গান-স্তোত্রপাঠের কাব্যময়তা দিয়ে, অথচ কোথাও অসঙ্গতি বা বিকৃতি ঘটেছে বলে মনে হতে দেননি।

বাংলায় বৈষ্ণবসংস্কৃতির একটি বড় দিক হল জাতিভেদ আর ব্রাহ্মণ্যবাদী শোষণের প্রতিবাদে প্রেম ও মানবতার প্রচার— যার চলচ্চিত্র-রূপায়ণ ‘চণ্ডীদাস’ ছবিতে শুরু হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ ছবিতে। চলচ্চিত্রকার হিসেবে এই সামাজিক বার্তা দেওয়ার দায়কে সচেতন ভাবেই শৈল্পিক বোধের অঙ্গীভূত করতে পেরেছিলেন দেবকীকুমার বসু।

পৃথা কুণ্ডু

কলকাতা-৩৫

বদভ্যাস?

‘অভাব ও অভ্যাস’ (সম্পাদকীয়, ৯-৪) প্রসঙ্গে এই চিঠি। গ্রামীণ গরিব ও কৃষক পরিবারের মহিলারা সরকারের দেওয়া ও সহজে পাওয়া উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস ব্যবহার করছেন না বলে আক্ষেপ করা হয়েছে। সেখানে শুধু অভাব নয়, অভ্যাসের কথা আলোচনা করা হয়েছে। পরিবারের জ্বালানি নাকি মহিলারাই সংগ্রহ করেন এবং গৃহস্থ তা বিনামূল্যে পান! এ সবই সত্যি। কিন্তু গ্রামের যে বাস্তবতাটা এখানে ধরা পড়েনি, তা হল কৃষক বা গরিব পরিবারের নিজস্ব কিছু সহজলভ্য জ্বালানি আছে, যা একদম বিনামূল্যে এবং বিনাশ্রমে পাওয়া যায়। হ্যাঁ, এর মধ্যে কৃষি-অবশেষ অবশ্যই আছে। কৃষকবধূ তিলের গাছ, সরষের গাছ, আখের ছিবড়ে, অন্যান্য ফসলের গাছ পুড়িয়ে রান্না করেন। তিনি না পোড়ালে ওগুলো আবর্জনা তৈরি করবে আর তাঁদের স্বামীরা মাঠেই ওগুলো পোড়াবেন। তাতেও পরিবেশ দূষণ ঘটবে। সুতরাং সব কিছু বদভ্যাস বলে চিহ্নিত না করে, প্রাপ্ত নতুন ধোঁয়াহীন জ্বালানির সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে আপাতত রান্নাটা চলুক। পরে অভ্যাস আস্তে আস্তে বদলে যাবে।

তপোময় ঘোষ

কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

অস্ত্র নয়, বই দিন

রামনবমী উপলক্ষে অস্ত্র হাতে মিছিলের ভয়াবহ দৃশ্যটি দেখে চমকে উঠলাম। বর্ধমানের দৃশ্যটি তো আরও বেদনাদায়ক যেখানে রামনবমীর মিছিলে যোগ দেওয়া সুকুমারমতি বালকদের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে শাণিত অস্ত্র। অথচ, মাত্র কয়েক বছর আগেও রামনবমীকে কেন্দ্র করে এমন ধর্মীয় উন্মাদনা দেখা যায়নি। অন্তত এ রাজ্যে। দেখা যায়নি এমন বিপুল অস্ত্রের ঝঙ্কারও। হঠাৎ কী এমন ঘটল যে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলে শিশু কিশোরদেরও অস্ত্র হাতে নামাতে হল?

রবীন্দ্রনাথ ধর্মোন্মাদদের কাণ্ড কারখানা দেখে লিখেছিলেন— ‘‘ধর্মের নামে মোহ এসে যারে ধরে, অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।’’ একটি রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় দাপাদাপি দেখে সেই আশঙ্কাই মনে জাগে। ধর্মের কারবারিরা ভেবে দেখুন, শিশুকিশোরদের হাতে যদি দিতেই হয়, তা হলে শাণিত অস্ত্র নয়, বই তুলে দিন যাতে ওরা জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হতে পারে। মানুষের প্রতি কোনও ঘৃণা নয়, বিদ্বেষ নয়, সঙ্কীর্ণ ধর্মীয় গোঁড়ামি নয়, ওরা যেন মানবতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। পৃথিবীটা যেন ওদের কাছে বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে এটা দেখা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব।

সমীর কুমার ঘোষ

কলকাতা-৬৫

তথ্যের ত্রুটি

‘পরিক্রমণ’ (রবিবাসরীয়, ১৪-৪) ধারাবাহিক উপন্যাসে বিসিএস পাশ করে পিয়াসের সাউথ বেঙ্গল পোস্টিংয়ের অপশন এবং ট্রেনি বিডিও হিসেবে একটি ব্লকে জয়েনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, এই চাকরিতে পোস্টিং পছন্দ করার কোনও সুযোগ নেই এবং চাকরিতে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে কাউকে ট্রেনি বিডিও করে ব্লকে পাঠানো হয় না।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা

কলকাতা-১০৭

খেলার স্পিরিট

‘ঠিকই করেছেন’ (১৫-৪) চিঠিতে অশ্বিনের ‘মাঁকড়ীয় আউট’কে নৈতিকতার ঊর্ধ্বে নিয়মের যুক্তি খাড়া করা হয়েছে। কিন্তু, নিয়মের কথা ভাবতে গিয়ে যেন খেলার ‘স্পিরিট’-এর কথা ভুলে না যাই। অশ্বিন খেলার ‘রুলস’ প্রয়োগ করেছেন, ‘স্পিরিট’ পালন করেননি। নন-স্ট্রাইকারকে আউট করার পর অশ্বিন যদি তাঁকে আবার ক্রিজ়ে ফিরিয়ে আনতেন, তা হলে নিয়ম লঙ্ঘনকারীকে যেমন নিয়মের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হত, পাশাপাশি, খেলার ‘স্পিরিট’ও বজায় থাকত।

অরুণ মালাকার

কলকাতা-১০৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘ক্ষমতার জন্ম’ শীর্ষক সম্পাদকীয়’তে (পৃ ৪, ১৮-৪) প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনকে ভুলক্রমে ‘প্রয়াত’ লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা
দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debaki Kumar Bose Film Director
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE