Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: খেলতে খেলতে...

এক দেশের খেলোয়াড়ের অন্য দেশের হয়ে খেলার ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু বাহরিন আর কাতারের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্য। এরা খাতায়-কলমে খেলোয়াড়দের নাগরিকত্ব দিলেও, এক প্রকার তাঁদের কিনেই নেয়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২১
Share: Save:

১৫ সোনা, ২৪ রুপো আর ৩০ ব্রোঞ্জ— সব মিলিয়ে ৬৯ পদক। এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফল ভারতের। খুব সহজেই এটা ‘আরও ভাল’ হতে পারত। কিন্তু হল না। সৌজন্যে আফ্রিকায় জন্মানো আর বেড়ে ওঠা কিছু বাহরিন আর কাতারের ‘নাগরিক’। ভারতের অন্তত আটটা রুপো— মহম্মদ আনাস (৪০০ মিটার), দ্যুতি চাঁদ (১০০ মিটার ও ২০০ মিটার), হিমা দাস (৪০০ মিটার), সুধা সিংহ (স্টিপলচেজ়), ধারুন আয়াস্বামী (৪০০ মিটার হার্ডলস), ৪×৪০০ মিটার মিক্সড রিলে আর ৪×৪০০ মিটার মেনস রিলে— সোনার পদক হতে পারত। কিন্তু এগুলিতে সোনা জিতেছেন যথাক্রমে আবেদাল্লা হাসান (জন্ম, বেড়ে ওঠা আর প্রাথমিক প্রতিষ্ঠা সুদানে), এডিডং অডিয়ং (ছবিতে)(নাইজিরিয়া), সালবা নাসির (নাইজিরিয়া), উইনফ্রেড জাভি (কেনিয়া), আবদেরহমান সাম্বা (মারিতেনিয়া), টিম বাহরিন এবং টিম কাতার। আবেদাল্লা হাসান এবং আবদেরহমান সাম্বা বর্তমানে কাতারের হয়ে খেলেন ও বাকিরা বাহরিনের। আর কাতার ও বাহরিন রিলে দলের কম করে তিন জন করে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আফ্রিকান দেশে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা।

আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক ঘটনা। এক দেশের খেলোয়াড়ের অন্য দেশের হয়ে খেলার ঘটনাও বিরল নয়। কিন্তু বাহরিন আর কাতারের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্য। এরা খাতায়-কলমে খেলোয়াড়দের নাগরিকত্ব দিলেও, এক প্রকার তাঁদের কিনেই নেয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ অবধি যত জন আফ্রিকান অ্যাথলিট নাগরিকত্ব বদলে অন্য দেশের হয়ে খেলার আবেদন করেছেন, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠই যেতে চেয়েছেন বাহরিন, কাতার, তুরস্কের মতো দেশে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, শেষ এশিয়ান গেমসে বাহরিনের সমস্ত সোনার পদক আর কাতারের একটা বাদে সব সোনা আফ্রিকা থেকে আসা অ্যাথলিটদের সৌজন্যে। একই প্রবণতা অলিম্পিকেও। সেখানেও এই দুই দেশের প্রায় সব পদকের পিছনে আফ্রিকায় জন্মানো অ্যাথলিটরা। প্রশ্ন, কেন এই প্রবণতা?

প্রধান কারণ অবশ্যই আফ্রিকান দেশগুলোর নিদারুণ আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয় বিশ্ব ক্রীড়া নিয়ামক সংস্থা এআইআইএফ-এর অস্বচ্ছ ও দুর্বল ক্রীড়ানীতি। ২০১৬-র অলিম্পিকের পরে অবস্থা এমন শোচনীয় হয়ে যায়, বিভিন্ন আফ্রিকান আর ইউরোপিয়ান দেশ নালিশ ঠুকতে শুরু করে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বিরুদ্ধে। চাপে পড়ে, তিন বছরের ‘কম্পালসারি ওয়েটিং পিরিয়ড’ চালু করে এআইআইএফ। যদিও নজরদারির অভাব বুঝে সে নিয়মের তোয়াক্কাই করে না এই দেশগুলো।

কিন্তু যা ঘটে এই খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতা। প্রথমে তাঁদের ভাল মাইনে, বাড়ি-গাড়ির স্বপ্ন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ি-বাড়ি তো আজ-কাল করে মেলেই না, প্রস্তাবিত মাইনেও আসে না সময়ে, বা এলেও কম আসে। তার পর শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই চলতে থাকে বিভিন্ন ওষুধের অতিরিক্ত এবং অবৈজ্ঞানিক প্রয়োগ। আপত্তির কোনও জায়গাই নেই, কারণ বোঝার উপায়ই রাখা হয় না কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা ক্ষতিকর। অভিযোগ এমনও আছে, মহিলা অ্যাথলিটকে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ইঞ্জেকশন দিয়ে মাঠে নামানো হয়। যাক, এর পর মেডেল আসে। সময়ের নিয়মে আসে চোটও। যদিও চোট থাকলেও বিরতির কোনও জায়গাই নেই,

প্রতিযোগিতায় নামতে ওঁরা বাধ্য। ওঁদের পাসপোর্ট জমা থাকে সরকারের কাছে। ওঁদের দোকান যাওয়া মানা, সিনেমা দেখা মানা। আর শরীরের ক্ষমতা যখন ফুরিয়ে আসে তখন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাটাও মানা। ড্রাগ বা বন্দুক ধরিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় অপরাধের জগতে— এক বার যে দুনিয়ায় ঢুকে গেলে বেরিয়ে আসা কঠিন।

বিভিন্ন অ্যাথলিট (যেমন আজ়ারবাইজানের হয়ে খেলা ইথিয়োপিয়ান দৌড়বিদ লিলি আবদুল্লায়াবা), যাঁরা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এই নারকীয় পরিস্থিতি থেকে, কখনও বলেছেন নির্যাতনের কাহিনি। মানবতাবাদী থেকে রাষ্ট্রকর্তা সবাই শুনেছেন। কিন্তু কেউ কিচ্ছু বলেননি। হয়তো পেট্রোডলারের সামনে সবার মুখ বন্ধ।

অভিরূপ ঘোষ

ধাপধাড়া, পূর্ব বর্ধমান

অভিধান

প্রদীপ বসুর ‘বাংলা এখনও জ্ঞানচর্চার ভাষা হিসেবে গড়ে ওঠেনি’ (রবিবাসরীয়, ২৬-৮) পড়ে এই চিঠি। লেখক বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার ব্যাপারে বাঙালির উদ্যম-উৎসাহের অভাবকেই পরিভাষা সৃষ্টির পথে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেছেন। বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার ফলে পরিভাষার চাহিদা তৈরি হতে পারে। বিক্ষিপ্ত ভাবে, একান্তই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় স্বল্পসংখ্যক পরিভাষাও সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু যে হেতু জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রগুলি ক্রমেই প্রসারিত হয়, তাই যে ধারাবাহিক প্রয়াস এই উদ্যোগকে কালজয়ী করতে পারে, তা প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা ব্যতীত সম্ভব নয়। অবাক হতে হয়, আজও বাংলা ভাষার মুষ্টিমেয় উৎকৃষ্ট মানের অভিধানগুলির প্রায় সবই ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রণীত। গত ৩০ বছর বা ততোধিক কাল ধরে এর প্রায় কোনওটির নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়নি, পুরনো সংস্করণের পুনর্মুদ্রণ হয়ে থাকতে পারে। এর কারণ সহজেই অনুমেয়। বাংলা ভাষায় জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত যে পারিভাষিক অভিধানগুলি বিগত কয়েক দশকে প্রকাশিত হয়েছে, তারও অধিকাংশই ব্যক্তিগত প্রয়াস। অভিধান প্রণেতাদের অবর্তমানে এই উদ্যোগগুলিরই বা ভবিষ্যৎ কী? আমার মাস্টারমশাই এবং একটি অতি উৎকৃষ্ট ইংরেজি-বাংলা অভিধানের প্রধান সম্পাদকের
মুখে শুনেছি, অভিধানটির বিপুল চাহিদা সত্ত্বেও প্রকাশক সংশোধিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশে একান্তই অনাগ্রহী। একটু বাইরের দিকে তাকালে বোঝা যায়, যে সব জাতি অথবা ভাষাগোষ্ঠী তাদের নিজেদের ভাষায় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় উদ্যমী, তারা ধারাবাহিক ভাবে এই দায়িত্ব পালন করার প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পেরেছে। ইংরেজি অথবা ফরাসি ভাষায় সাধারণ ও পারিভাষিক অভিধান প্রণয়ন এবং অনবরত সেগুলির সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের দায়িত্ব পালন করে চলেছে কতকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অথবা বড় বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা অথবা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা তাদের প্রকাশনা সংস্থা অথবা আকাদেমি ফ্রঁসেজ-এর মতো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত প্রতিষ্ঠান, বা ল্য রোবের (Le Robert)-এর মতো একান্তই অভিধান প্রকাশনায় নিয়োজিত প্রকাশনা সংস্থার মুষ্টিমেয় উল্লেখই এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে বাংলা ভাষার দুর্বলতার দিকটি সহজেই অনুধাবন করায়। সুতরাং বাংলা ভাষায় পরিভাষা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা না থাকার মূল কারণ প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা।

শুভময় রায়
কলকাতা–৪৭

ধাঁধা

গোটা দেশে ১০০ দিনের কাজে বাংলা প্রথম। পর পর তিন বছর! তা নিয়ে শাসক দলের গর্বের অন্ত নেই। কিন্তু ১০০ দিনের কাজে শ্রেষ্ঠ হওয়া মানে তো ২৬৫ দিনের বেকারত্বেও শ্রেষ্ঠ হওয়া, তাই নয় কি?

আশিস সিট
কলকাতা-৯৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘পথে পুলিশ না থাকলেই দাপটে অটো-রাজ’ (কলকাতা, পৃ ১৩, ২১-৯) শীর্ষক খবরে ভুল করে ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার লেখা হয়েছে।। সুমিতবাবু বর্তমানে উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার। আর প্রতিবেদনে ডিসি (ট্রাফিক) দক্ষিণ সূর্যপ্রতাপ যাদবের মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sports Athletes Africa Bahrin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE