Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: সত্যিই স্বাধীন তো?

অতঃপর সেই শুভক্ষণ আসে ১৫ অগস্ট, যে দিন ব্রিটিশ শক্তিকে মাথা নোওয়াতে হয়েছিল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের পর ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এ স্বাধীনতা নিছক ঘরে বসে পাওয়া যায়নি। পেতে হয়েছে দীর্ঘ লড়াই করে। হারাতে হয়েছে অনেক ভারতমাতার বীর সন্তানকে।

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ০১:০৮
Share: Save:

“তুমি আসবে ব’লে হে স্বাধীনতা/ সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল,/ সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।/ তুমি আসবে ব’লে হে স্বাধীনতা।”

কত শত সাকিনা, হরিদাসীর কপাল ভাঙল তার কোনও ইয়ত্তা নেই। অবশেষে স্বাধীনতা মিলল ১৫ই অগস্ট, ১৯৪৭ সালে। ব্রিটিশরাজ কায়েম হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে।

যদি প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়, তা হলে দেখা যাবে ১৭০০ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বণিকরা ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। ১৮০০ শতাব্দীতে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির বলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থানীয় রাজ্যগুলিকে পরাজিত করে ভারতে নিজেদের শাসন কায়েম করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর, ভারত শাসন আইন ১৮৫৮ সালে পাশ হয় এবং ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয়। তার পর থেকে শুরু হয় শাসন ও শোষণ।

অতঃপর সেই শুভক্ষণ আসে ১৫ অগস্ট, যে দিন ব্রিটিশ শক্তিকে মাথা নোওয়াতে হয়েছিল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের পর ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এ স্বাধীনতা নিছক ঘরে বসে পাওয়া যায়নি। পেতে হয়েছে দীর্ঘ লড়াই করে। হারাতে হয়েছে অনেক ভারতমাতার বীর সন্তানকে।

দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে রক্ষা করতে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন সেই সিরাজদ্দৌলা, তার পর তিতুমির, সেখান থেকে মঙ্গল পান্ডে, সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরো, এর পর নেতাজি, গাঁধীজি, আব্দুল গফফর খান, মাস্টারদা সূর্য সেন, যতীনদাস, ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব, বিনয়-বাদল-দীনেশ, আরও অনেকে। ইংরেজ শাসনের শৃঙ্খলে যতই তাঁদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, ততই তাঁরা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ ২০০ বছরের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে লড়াই করে গিয়েছেন। কত বীর শহিদ হয়েছেন হাসিমুখে। ফাঁসির দড়ি গলায় তুলে নিয়েছেন।

এ লড়াই ছিল দেশের জন্য, দশের জন্য,স্বাধীনতার জন্য। এ লড়াইয়ে না ছিল ধর্মের ভেদাভেদ, না ছিল জাতিহিংসা। ইংরেজরা যতই জালিয়ানওয়ালাবাগের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাক, যতই বঙ্গভঙ্গের ডাক দিক, মানুষ সর্বদা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই অতীত ভারতকে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এখন নতুন করে শুরু হয়েছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। চলছে অধিকার হনন, স্বাধীনতা খর্ব করার প্রয়াস। কোনও এক রাজনৈতিক দল সর্বদা মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলছে ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে।

আজ আবার সেই ঐতিহাসিক ১৫ অগস্ট। লাল কেল্লায় উঠবে জাতীয় পতাকা, রাজধানী থেকে শুরু করে গোটা দেশে চলবে কুচকাওয়াজ, দেশাত্মবোধক গান। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। শোনাবেন বীর শহিদদের ইতিহাস। কিন্তু তাঁদের আদর্শে চলার মানসিকতায় কোথাও যেন ছেদ পড়ছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদ কায়েম করার নামে দেশের ঐতিহ্য খর্ব করা হচ্ছে। পাল্টে ফেলা হচ্ছে মুসলিম নামধারী ঐতিহ্যজ্ঞাপক স্থাপত্য ও অন্যান্য স্মরণীয় সব কিছু। বাক্‌স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার রাজনীতি চলছে। হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে ব্যক্তিস্বাধীনতায়।

ইংরেজ শাসনকালের মতোই, দেশে অন্যায় অবিচার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তৈরি হচ্ছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ‘স্বাধীনতা’ শব্দের অবমাননা করা হচ্ছে। বাইরের কেউ যখন মানুষকে তার নিজের ইচ্ছা অনুভূতির বিরুদ্ধে চলতে বাধ্য করে, তখন সেই মানুষটি পরাধীন। আজকের ভারতবর্ষের মাটিতে সেই দুর্যোগের ঘনঘটা।

ধর্মীয় মেরুকরণের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি, আর মৌলিক অধিকার হনন বর্তমান ভারতবর্ষকে আবারও সেই ইংরেজ শাসনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসের দিনে সন্দেহ হয়, সত্যিই আমরা ‘স্বাধীন’ তো?

মেহেদি হাসান মোল্লা

বটতলী, গোসাবা, দ: ২৪ পরগনা

বড় বেদনার

রমাপদ চৌধুরীর প্রয়াণ খুবই বেদনাদায়ক। তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই বাংলা সাহিত্য থেকে অপসারণ করেছিলেন— প্রথমে লেখা বন্ধ করে, তার পরে সাহিত্যপাঠ বন্ধ করে— দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়ার দরুন, তবে সংবাদপত্রের বড় হরফ পড়তে পারতেন। শেষের দিকে বেশি সময় শুয়েই থাকতেন। এই দশার কষ্ট এই দশাতে পৌঁছলেই বোঝা যায়। তিনি বহু কাল থেকে সাহিত্যে অনুপস্থিত, কলকাতার সমাজে থেকেও বিস্মৃত। একদা তাঁর অমৃত ব্যানার্জি ও নকুলেশ্বর ভট্টাচার্য লেনের বাড়ি বন্ধু-ভক্তদের সমাগমে গমগম করত। তার পর তিনি চলে যান গল্ফ গ্রিনে, তার পর হরিপদ দত্ত লেনে। জনজীবন থেকে ক্রমশ দূরে চলে যান। কিছুটা নিঃসঙ্গ। লেখা বন্ধ, সাহিত্যপাঠ বন্ধ, বন্ধুভক্তদের আর ভিড় নেই। এই পরিস্থিতির কষ্ট, তার পরে ক্রমশ বর্ধমান নিশ্বাসের কষ্ট— ফোনে বলেছিলেন, ‘‘বার্ধক্য যে এমন ভয়ঙ্কর হয় জানতাম না।’’

ছোট মেয়ে মহারাষ্ট্রে, বড় মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে, নাতনি কর্মজীবনে খুবই সফল, তাঁর গর্ব ছিল, কিন্তু দুঃখ ছিল সে বিয়ে করতে চায় না। অনেক রকম দুঃখকষ্টে ভরা ছিল তাঁর শেষ জীবন। দেহের কষ্ট, মনের কষ্ট— সব কষ্টের থেকে অব্যাহতি পেলেন। কষ্ট তাঁদের, থেকে গেলেন যাঁরা। বিশেষত সুষমাবৌদির। মেয়েদের ও নাতনির। আর আমার মতো পঙ্গু ও অন্য রাজ্যবাসীর, স্মৃতিজর্জরিতর।

সুরজিৎ দাশগুপ্ত

মীরা রোড, মহারাষ্ট্র

মানবিক নয়

মহীদাস ভট্টাচার্য তাঁর চিঠিতে লিখেছেন (সম্পাদক সমীপেষু, ৮-৮), আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নিরিখে অনুপ্রবেশের মূলে প্রশাসনিক দুর্বলতা ছিল। তার চেয়েও বেশি ছিল অপরের পাশে দাঁড়ানোর সংস্কৃতি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কেউই নিষ্ঠুর হতে পারেনি অসহায় মানুষের প্রতি। এই সরল যুক্তি আমাদের দেশের অনেক জটিল, কুটিল, হিংসাপরায়ণ মানুষের কাছে অযৌক্তিক ও দেশবিদ্বেষী মনে হতে পারে। কিন্তু আমাদের নেতাদের যদি এতই ‘দেশভক্তি’, তবে কেন অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকানোর কার্যকর উপযুক্ত প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই?

এক প্রকার বিনা দোষে স্ত্রী, শিশু পুত্রকন্যা ও বৃদ্ধ পিতামাতা নিয়ে রাতারাতি কাউকে বেঘর করা, কোনও যুক্তিতেই নৈতিক হতে পারে না, মানবিক তো দূর। শুধু অসম নয়, উত্তর-পূর্ব তথা সারা ভারত ও অনেক দেশই এই সমস্যায় আক্রান্ত। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রচেতনা এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী। এই সে দিনও সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত তথা অসম, বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ইত্যাদি ভূমি মিলেমিশে একাকার হয়ে ছিল। ভারতের তথা রাজ্যের সীমানা যুগে-যুগে পাল্টেছে। মানবজাতির মিশ্রণ ঘটেছে। এই সত্যিটা কোনও যুক্তিতেই মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না।

সর্ব কালে সর্ব দেশে সাধারণ নাগরিকদের জীবন মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মানুষের অসৎ উদ্দেশ্যের স্বীকার হয়েছে। সে রাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক যে যুগই হোক না কেন। রাজা-মহারাজা বা জনপ্রতিনিধি-সরকার তাদের কুমতলবকে বাস্তবায়িত করতে সব সময় মানুষের হিংসা, বিদ্বেষ প্রভৃতি সহজাত প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়েছে। মানুষও নির্বিবেচকের মতো রাষ্ট্রের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সাহায্য করেছে বা বাধ্য হয়েছে।

সমরেশ কুমার দাস

সেন্ট্রাল এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, মিজোরাম

স্বাধীনতার ছবি

রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা জাতীয় পতাকা ফেরি করছে। কাতর কণ্ঠে বলছে, ‘‘একটা নিন না।’’ গাড়িবাবুরা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন। এই তো আমাদের স্বাধীনতার ছবি!

সহদেব বিশ্বাস

কলকাতা-৩১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Independence Day India 72nd Independence Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE