Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মহানুভব

দেশে তখন ‘জরুরি অবস্থা’ জারি ছিল। তাই আকাশবাণীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপরেও ভারত সরকার কর্তৃক অন্যায় কর্তৃত্ব জাহির করার দরুন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামক অনুষ্ঠানটি সে বছর বাদ দেওয়া হয়েছিল।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

‘বেতারের প্রাণপুরুষ, বাঙালির প্রাণনাথ’ (পত্রিকা, ৬-১০) শীর্ষক লেখায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সম্পর্কিত আলোচনা বিশেষ ভাবে মনোগ্রাহী। ১৯৭৬ সালের মহালয়ায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র পরিবর্তে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম্’ নামক গীতি আলেখ্য সম্পর্কে বীরেন ভদ্র মহাশয়ের আক্ষেপ সম্বন্ধে একটু তথ্য নিবেদন করতে চাই। দেশে তখন ‘জরুরি অবস্থা’ জারি ছিল। তাই আকাশবাণীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপরেও ভারত সরকার কর্তৃক অন্যায় কর্তৃত্ব জাহির করার দরুন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামক অনুষ্ঠানটি সে বছর বাদ দেওয়া হয়েছিল। এই সংবাদে ব্যথিত হয়ে আমি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আগরতলা থেকে এক পত্র লিখেছিলাম। তার উত্তরে তিনি আমাকে যে পত্র দিয়েছিলেন তার অংশবিশেষ এখানে উদ্ধৃত করছি: ‘‘...প্রায় বৎসরব্যাপী চণ্ডীপাঠ থেকে বেতারে জুতো সেলাই পর্যন্ত করে একে (অর্থাৎ ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটিকে) জনপ্রিয় করার ব্রত নিয়েছিলাম। সেটা করতে পেরেছি বলেই নিজেই আত্মপ্রসাদ লাভ করি। ... আমরা পুরাতন শিল্পী। সে জন্য বেতার কর্তৃপক্ষের নিকট আর পাংক্তেয় নই। অবশ্য সে কারণে ব্যক্তিগত ভাবে আমি দুঃখিত নই। কারণ নবীনরা হয়তো আমাদের চেয়ে অনেক কিছু নূতনত্ব করবেন। তাদের স্বাগত জানানো উচিত বলে দুঃখ পাই না।... কিন্তু এই তো সংসারের নিয়ম। আমাদের গত বছরের tape করা অনুষ্ঠানটি রইলো। হয়তো বিশ বছর পরে স্বাদ বদলের জন্য রেডিও ভবিষ্যতে বাজাতে পারেন পুরাতনের স্মৃতিচারণ করতে।’’

বেতারের প্রাণপুরুষের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই আমরা তাঁরা ঔদার্য ও মহানুভবতার পরিচয় পাচ্ছি। সুখের কথা যে, পরিবর্তিত অনুষ্ঠানটির শোচনীয় ব্যর্থতার পাশাপাশি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র অসাধারণ জনপ্রিয়তার দরুণ পরবর্তী বছর ১৯৭৭ সাল থেকে পুনরায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে আকাশবাণী থেকে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ প্রচারিত হয়ে আসছে। ফলে ভবিষ্যতেও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্মৃতি ও কৃতিত্ব বাঙালির অন্তরে চিরস্মরণীয়
হয়ে থাকবে।

সুবিমল ভট্টাচার্য

কলকাতা-৯৪

পাল্টালে ভাল

দীর্ঘ পনেরো বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাথমিকে পাঠ্যপুস্তকের কিছু কিছু পরিবর্তন আশু প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়েছে। প্রথমত, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ‘আমার বই’ পুস্তকটিতে একই সঙ্গে সমস্ত বিষয় তুলে ধরাতে তা বিপুলকায় হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক পড়ানোর ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে মাতৃভাষা, দ্বিতীয় ভাষা, অঙ্ক, বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান ও মরাল সায়েন্স (যেটি সরকারি স্কুলে মূলত স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষার বই) প্রতিটির আলাদা বই হওয়া একান্ত আবশ্যক। বইগুলিতে ওয়ার্ক শিট যেমন থাকবে, তেমনই আলাদা করে অনুশীলনও থাকবে। কারণ, বইতে এক বার ওয়ার্ক শিট করানোর পরে আর ওটা করানো যায় না। সে ক্ষেত্রে অনুশীলনীর জন্য আলাদা কিছু প্রশ্নপত্র করা থাকলে বার বার ওদের দিয়ে করানো যায়। দ্বিতীয়ত, খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি কারিকুলাম। এক-একটি গল্প অতি দীর্ঘ এবং তা প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। প্রাথমিকে ইংরেজি বা বাংলার কোনও স্তরেই হাতের লেখা, শ্রুতিলিখন নেই। ফলে এই দু’টিতে সরকারি স্কুলের ছেলেমেয়েরা খুবই দুর্বল। আমরা যখন পড়েছি তখন শিক্ষকরা এ সব করাতেন। কিন্তু এখন পাঠ্যপুস্তকের গল্পগুলি এত বড় বড় যে আলাদা করে শ্রুতিলিখন, ভোকাবুলারি, হাতের লেখা, গ্রামার— এই সবে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। আর কারসিভ রাইটিং তো সরকারি স্কুলের ছেলেমেয়েদের কোনও স্তরেই শেখার সুযোগ নেই, যদি কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শেখে তা আলাদা ব্যাপার। অনেকে খেদোক্তি করেন, ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েদের হাতের লেখা কী সুন্দর, অথচ আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতের লেখা দেখো, কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং!

তৃতীয়ত, প্রাথমিকে দুর্বলতম পাঠ্যক্রম হল পরিবেশ পরিচিতির। গোটা বই জুড়ে কোথাও অনুশীলনী নেই। কয়েকটি মাত্র কর্মপত্র রয়েছে। পুরো বইটাই গল্পের ছলে লেখা। বইটিতে যা পড়ানো হয় ও কর্মপত্রে যা প্রশ্ন দেওয়া রয়েছে, উভয়ের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নেই। ছেলেমেয়েরা পড়বে এক জিনিস অথচ উত্তর করতে বলা হয়েছে এমন কিছু প্রশ্নের যেগুলির বইয়ে উল্লেখই নেই। চতুর্থত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির গণিতের যা পাঠ্যক্রম রয়েছে তাতেও প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব। ওয়ার্ক শিট বেশি, অনুশীলনী প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে বইয়ে এক বার করানোর পর সেগুলোকে রিপিট করাতে হলে বোর্ডে লিখে দিতে হয়। গুণ, ভাগ তিন চার রকম ভাবে শেখানোর পরিবর্তে প্রচলিত প্রথাতেই তা শিখিয়ে বিভিন্ন সমস্যা তার উপর দেওয়া যেতে পারত। এতে ছাত্ররা একটা নিয়মই ভাল ভাবে শিখত। প্রাথমিকে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ঠিক ভাবে শিখে গেলে বাকি জিনিস এমনিই শিখে যেত। একই জিনিস মাতৃভাষা ও ইংরেজির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেখে দেখে আট-দশ লাইনের কি এক-দু’ পাতার গল্প পড়তে পারা এবং পড়ে বুঝতে পারা, গ্রামারের প্রাথমিক জিনিসগুলো জানা, শব্দের বানান না দেখে লিখতে পারা, অর্থ বুঝতে পারা ও শেষে কয়েক লাইনে প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারা প্রাথমিকে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। অথচ চার-পাঁচ পাতা জোড়া শক্ত শক্ত বিষয়ে কঠিন শব্দ ব্যবহার করে বিষয়ভিত্তিক লেখাতে লেখকের পাণ্ডিত্য জাহির হলেও ছোট ছোট পড়ুয়ারা তাতে ক্ষতিগ্রস্তই হয়।

সাধারণ জ্ঞানের বই নেই। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাতৃভাষার বই দু’টি, যার একটি সহজ পাঠ, যাতে কোনও অনুশীলন নেই— অথচ পরীক্ষায় সহজ পাঠ থেকে প্রশ্ন আসে। ‘আমার বই’-এ প্রচুর গল্প অথচ তুলনামূলক ভাবে অনুশীলন অনেক কম। ভাল হত কয়েকটি গল্প কম রেখে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মপত্র ও প্রশ্নাবলি যোগ হলে। প্রাথমিকের পাঠ্যবিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য উপযুক্ত শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে নতুন ভাবে সিলেবাস কমিটিতে পাঠানো হোক। যত দেরি হবে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সঙ্গে বাংলা মাধ্যমের স্কুলের ফারাক ততই বাড়বে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েরা।

কৌশিক সরকার

রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

বাস্তবচিত্র

অনেক আবেদন-নিবেদনের পর বিধাননগর কমিশনারেটের উদ্যোগে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে এয়ারপোর্ট সিটির সামনে ট্রাফিক সিগন্যাল এবং একটি বাস স্টপ হয়েছে। কিন্তু গত দু’মাসের অভিজ্ঞতা যে কথা বলছে: ১) দু’জন করে সিভিক ভলান্টিয়ার দুটো শিফ্‌ট-এর দায়িত্বে আছেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অধিকাংশ সময় এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার গুমটির মধ্যে বসে। সিগন্যাল ঠিক ভাবে কাজ করে না, ফলে বেশির ভাগ গাড়িই সিগন্যাল না মেনে চলে যায়। এমনও দেখা যায় যে গাড়িচালক সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করে করে শেষে তা না মেনেই চলে যায়। ব্যক্তিগত ভাবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি যে ওঁরা গা-ছাড়া ভাবে সিগন্যাল অপারেট করেন এবং বলেন যে কোনও গাড়িই সিগন্যাল মানে না। যখন বলা হয়, শুধু ঘরে বসে না থেকে রাস্তায় এক জন এবং পুলিশ চৌকিতে এক জন যদি ডিউটি করে তবে তো অনেক কাজে দেয়, তখন উত্তরে বলেন, দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে এই কাজ করা যায় না। ২) বাস স্টপ হওয়ায় সমস্যার সমাধান হয়েছে, কিন্তু রাত ন’টার সময়, যখন ট্রাক চলা শুরু হয়, তার কিছু আগে থেকেই পুরো বাস স্টপ জুড়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। যদিও এটা নো পার্কিং এরিয়া এবং এই সময় সিভিক ভলান্টিয়ারদের থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে সিভিক ভলান্টিয়াররা থাকেন না, থাকলেও কিছু করেন না। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সার্ভিস রোড নেই, বহু মানুষ এই রাস্তা ধরে যাতায়াত করেন। ট্রাকগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় খুবই অসুবিধা হয়।

সমীর বরণ সাহা

কলকাতা-৮১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahalaya Indian Playwright Birendra Krishna Bhadra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE