Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আন্দোলন #মিটু

অজানা, অখ্যাত আর্তের জন্য লক্ষ টাকার তহবিল গড়ে ওঠে, তাৎক্ষণিক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঘটিয়ে জন আন্দোলন সংঘটিত করে তোলে। যেমন দেখা গিয়েছিল ‘আরব বসন্ত’, ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’, ঢাকার ‘শাহবাগ আন্দোলন’ বা যাদবপুরের ‘হোক কলরব’ আন্দোলন পর্বে।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ থাকলেও এর এক উল্লেখযোগ্য সামাজিক উপযোগিতা রয়েছে। মুহূর্তে জনমত তৈরি করতে এর জুড়ি মেলা ভার। অজানা, অখ্যাত আর্তের জন্য লক্ষ টাকার তহবিল গড়ে ওঠে, তাৎক্ষণিক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঘটিয়ে জন আন্দোলন সংঘটিত করে তোলে। যেমন দেখা গিয়েছিল ‘আরব বসন্ত’, ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’, ঢাকার ‘শাহবাগ আন্দোলন’ বা যাদবপুরের ‘হোক কলরব’ আন্দোলন পর্বে। সে রকমই এক টর্নেডো পশ্চিম থেকে প্রাচ্যে আছড়ে পড়েছে #মিটু আন্দোলনের মাধ্যমে। মাত্র দু’অক্ষর বিশিষ্ট এই শব্দের ধার ও ভার যে শক্তিশালী পুরুষতন্ত্রের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। পদ ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে যাঁরা গোপন পাপ এ যাবৎ লুকিয়ে এসেছেন তাঁদের হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে, কেউ কেউ ‘ঠাকুর ঘরে কে’ হাঁক পাড়ার আগেই আগাম ক্ষমা প্রার্থনা (যেমন আর্নল্ড শোয়ার্তজ়েনেগার, চেতন ভগত) করে নিচ্ছেন।

বছরখানেক আগে হলিউডের প্রতাপশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টাইনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন একাধিক অভিনেত্রী। #মিটু আন্দোলনের সূত্রপাত সেখান থেকে। প্রথামাফিক অস্বীকার করেও হার্ভি পার পাননি, তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ একাধিক, পর্নস্টারকেও মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। বিনোদন জগতে মহিলাদের কী ভাবে ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে বলিউড সিনেমা ‘পেজ থ্রি’ হয়ে গিয়েছে। আশ্চর্যের কথা, ছবির পরিচালক মধুর ভান্ডারকরের বিরুদ্ধেই এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। সাহিত্যে তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী বহু লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাহিত্যিকের মুখোশ খুলে দেয়। স্টিং অপারেশন ‘তহলকা’ খ্যাত তরুণ তেজপাল অভিযুক্ত হন। আইপিএস রুপান বাজাজের অভিযোগের ভিত্তিতে অপারেশন খলিস্তানখ্যাত পঞ্জাবের তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে ভর্ৎসিত হতে হয়। এ সবই ছিল ব্যক্তিগত স্তরে নথিবদ্ধ অভিযোগ। খোদ আইনসভায় কাস্টিং কাউচ-এর চল আছে বলে মত প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ রেণুকা চৌধুরি। আর থিসিস লিখতে গিয়ে কত শত স্কলার যে প্রতিনিয়ত গাইডের লালসার শিকার হয়ে চলেছেন, তা প্রকাশ্যে এলে সমাজে বিশ্বাস বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

নানা পটেকরের বিরুদ্ধে প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত সম্প্রতি এ দেশে #মিটু আন্দোলনের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছেন। ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে সুভাষ ঘাই, সাজিদ খান, অনু মালিক, অলোক নাথ প্রমুখ নক্ষত্রের নাম।

কর্মজগতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ার সঙ্গে অানুপাতিক হারে যৌন হেনস্থা বাড়তে থাকে। পুরুষদের একচেটিয়া আধিপত্য ও ক্ষমতার কাছে সদ্য স্ব-স্ব জগতে পা রাখা মেয়েরা ভয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। কিন্তু অপমান বয়ে নিয়ে চলা মেয়েরা যে কখনও মুখ খুলতে পারেন তা ছিল পুরুষদের ভাবনার অতীত। সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্ল্যাটফর্ম যে আগল খুলে দিতে পারে তা-ই বা কে ভেবেছিল! ডিজিটাল মাধ্যমের এই বেয়াড়াপনা আগে জানা থাকলে ‘রিপু দমন করা যেত’ বলে অনেকে আজ হাত কামড়াচ্ছেন।

মানহানির মামলা দায়ের করে প্রায় একশো জন আইনজীবী দাঁড় করিয়েও জনমতের চাপে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপদে ইস্তফা দিতে হয়েছে সম্পাদক ও সাংসদ এম জে আকবরকে। এখন দেখার, কোনও জোলো অভিযোগের ভিত্তিতে যেন #মিটু আন্দোলন আকস্মিক ভাবে জনভিত্তি না হারায়। অপব্যবহার যেন অপব্যবহার দিয়ে কাটাকুটি না হয়ে যায়।

সরিৎশেখর দাস

নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর

মদ নিষিদ্ধ হোক

রাজ্য সরকারের প্রতিটি জেলায় মদের দোকান খুলে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের সংবাদ পড়ে কিছু জানানোর তাগিদ অনুভব করছি। বঙ্গসংস্কৃতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই মদ জাঁকিয়ে বসেছে। এক সময়ে বিহারকে আমরা পিছনের সারিতে রেখেছিলাম কিন্তু সাহসের সঙ্গে মদ বিক্রি বন্ধ করে বিহার প্রমাণ করে দিয়েছে যে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে তারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না।

আর আমাদের রাজ্যে মদ এখন কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে জনকল্যাণের নামে হাজার হাজার মদের দোকান খুলে মানুষের সর্বনাশ করার মতলব আমরা কি ধরতে পারছি না? না সব জেনেশুনে উন্নয়নের চালাকির ফাঁদে পড়ে নিজেদের ভালমন্দের বিচার করতে চাইছি না? আমরা যখন চোখের সামনে মদের কুফল প্রত্যক্ষ করছি, তিলে তিলে সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে দেখছি, তখন কেন তার প্রতিবাদ করছি না? এই তো কিছু দিন আগেই তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যায় দু’দিনে পাঁচ কোটি টাকার বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সমর্পণের পরিবর্তে বাঙালি পূজাপার্বণ ও উৎসবের আমেজ এখন মদের নেশায় করতে চাইছে। আর সরকার কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের নেশায় বুঁদ হয়ে চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে সমাজের এই অনাচার সহ্য করে যাচ্ছে।

আমরা কি পারি না সজ্জন শক্তি ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সমবেত হয়ে মদের ঢালাও লাইসেন্স দেওয়ার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে? গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে এই রাজ্য থেকে মদ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাই।

তরুণ কুমার পণ্ডিত

কাঞ্চন তার, মালদহ

ক্ষয়িষ্ণু সমাজ

মাঝে মাঝে বিভিন্ন জেলার সংবাদপত্রের ছবিতে দেখি, গ্রামের মহিলারা বীরাঙ্গনার মূর্তি ধরে লাঠিঝাঁটা নিয়ে মদের ভাটি ভেঙে ফেলেছেন। তাঁরাই বুঝিয়ে দেন মদ কী ভাবে পরিবারে অশান্তি ডেকে আনছে। কিংবা মদের নেশায় তাঁদের আপনজনকে অকালে হারানোর যন্ত্রণা কতটা গভীর। বিহার যখন মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করে, তখন অনেক শুভানুধ্যায়ী অপেক্ষা করেছিলেন আমাদের রাজ্যে কবে এমন ঘোষণা হবে। কিন্তু অবাক লাগে আমাদের রাজ্যে রাজ্য সরকারের সমর্থন নিয়েই ওয়েস্ট বেঙ্গল বেভারেজ কর্পোরেশন (বেভকো) গ্রামে গ্রামে মদের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম ধাপে দু’হাজারটি মদের দোকান খোলা হবে। এতে রাজ্যের কোষাগারে কুড়ি হাজার কোটি টাকা আয় হবে। টাকা রোজগারের এ এক অদ্ভুত পন্থা, পরিবার সমাজ সংস্কৃতি ধ্বংসের এক অসাধারণ পথ। মধ্য যুগের কবি বৃন্দাবন দাস ক্ষয়িষ্ণু সমাজ ব্যবস্থা তুলে ধরতে লিখেছিলেন— ‘‘মদ মাংস দিয়া কেহ যক্ষ পূজা করে।’’(চৈতন্য ভাগবত)। আমরা কি সেই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের দিকে এগোচ্ছি? গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা ধ্বংস করার দিকে এ এক অসাধারণ পদক্ষেপ বটে।

শ্রীমন্ত কুমার দাস

বামনাসাই, পশ্চিম মেদিনীপুর

ভুললে চলবে না

সারিধরম হাঁসদার ‘ক্ষণস্থায়ী কিছু সাঁওতালি পত্রিকা মননশীল পাঠক গড়ে’ (৪-৯) শীর্ষক লেখাটি ভাল। এতে অনেক পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম রয়েছে। তবে জানাই যে, সারিধরমবাবুর বাড়ির অনতিদূরে কামারবান্দি গ্রামের বাসিন্দা কলকাতা পুলিশের কর্মী (বর্তমানে প্রয়াত) রামদুলাল মুর্মুর সম্পাদনায় ‘হুদিশ’ নামে একটি সাঁওতালি পত্রিকা প্রকাশিত হত। সে সময় আনন্দবাজার পত্রিকার ‘কলকাতার কড়চা’য় রামদুলালকে নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটিতে ওই পত্রিকার উল্লেখ না দেখে অবাক হলাম।

গোকুলানন্দ লাহা

শিলদা, ঝাড়গ্রাম

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

লন্ডন ডায়েরি-র (পৃ ৪, ২৮-১০) ছবি-পরিচিতিতে ‘শান্তনু সেন’-এর পরিবর্তে ‘শান্তনু দাস’ হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Article Protest Metoo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE