রক্তদান জীবনদান, সকলেই জানি। কিন্তু ইদানীং এটি আর কেবল সামাজিক জনহিতকর কাজেই সীমাবদ্ধ নেই, হয়ে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারের মাধ্যম। যে-দিন মূল রক্তদানের আয়োজন হয়, তার অন্তত দু’তিন দিন আগে থেকে মাইক, লাউডস্পিকার লাগিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রচার চলে। যেন রক্তদান গৌণ, দলের প্রচারই আসল। সেখানে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তার চেয়ে, রাজনৈতিক দলের কোন কোন নেতা উপস্থিত থাকবেন— সেটা জানানো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
তা ছাড়া অনুষ্ঠানের দিন পার্টির লোকজনদের মাংস-ভাত সহযোগে ভূরিভোজও বেশ দৃষ্টিকটু। কোথাও বসছে চটুল নাচগানের আসর। এর জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা আদায় করা হচ্ছে এলাকার প্রোমোটার, ব্যবসায়ীদের ধমকে-চমকে। পরীক্ষা চলছে, কিন্তু তার তোয়াক্কা না করে পাড়ায় পাড়ায় জোরে মাইক বাজানো হচ্ছে।
রক্তদানের মতো মহৎ কাজকে যত ছড়িয়ে দেওয়া যায়, ততই ভাল। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, এটি যেন রাজনৈতিক দল বা বিভিন্ন গোষ্ঠীর ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গা না হয়ে ওঠে। রক্তদান উৎসব আর রসগোল্লা উৎসব যে এক নয়, তা বোধগম্য হলেই সমাজের মঙ্গল।
শান্তপ্রিয় চক্রবর্তী কলকাতা-১০৯
হিজাব ও খবর
ভাষাদিবস প্রসঙ্গে ‘একুশের ঢাকায় কোনও আবরণ নেই হিজাবের’ (২২-২) শিরোনামে প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই এই চিঠি। লেখা হয়েছে, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষ খালি পায়ে এগিয়ে চললেন শহিদ মিনারের দিকে। হাতে ফুল, পরনে কালো পাঞ্জাবি বা শাড়ি। কণ্ঠে একুশের উচ্চারণ। বোরখা বা হিজাবধারী এক জন মেয়েও চোখে পড়েনি। অথচ দিনে ঢাকার রাস্তা যেন বোরখা আর হিজাবময়।’ এই শিরোনামের প্রতিবাদ জানাই। আসলে ভাষা শহিদদের সম্মান প্রদর্শন নয়, ওই শিরোনামেই স্পষ্ট লেখাটির মুখ্য উদ্দেশ্য। ও-পারের অন্য নিউজগুলিতে দেখা গিয়েছে হিজাব ও বোরখা পরিহিতা অনেকেই শহিদ মিনারে জড়ো হয়েছেন। অথচ একুশের ঢাকায় প্রতিবেদক কোনও হিজাব দেখলেন না!
কাউকে আঘাত করা কোনও খবরের কাজ হতে পারে না। হিজাব না পরা কোনও প্রগতিশীলতা নয়। হিজাব পরা কোনও প্রতিক্রিয়াশীলতাও নয়। একুশের পবিত্র দিনেও এ-ধরনের প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষ আর কত দিন চলবে?
রেবাউল মণ্ডল গমাখালী, করিমপুর, নদিয়া
প্রতিবেদকের উত্তর:
প্রতিবেদনের যে অংশটির উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রলেখক আক্রমণ শানিয়েছেন, তাতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে একুশের স্মরণ অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নটির কথাই বলা হয়েছে। সেই সময়ে যে-মানুষেরা খালি পায়ে মিছিল করে এসে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তাঁদের সকলেরই পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি বা শাড়ি। এই পোশাক বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গ, যা মাতৃভাষা দিবসের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সে জন্যই তা উল্লেখযোগ্য। বোরখা বা হিজাব প্রগতিশীল না প্রতিক্রিয়াশীল— তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এই আরবি পোশাক যে বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গ নয়, সে-বিষয়টি বিতর্কের ঊর্ধ্বে। একুশের সারা দিনেও অজস্র মানুষ শহিদ মিনারে ফুল দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বোরখা বা হিজাব পরা নারীরাও যেমন ছিলেন, ছিলেন প্যান্ট-শার্ট পরা পুরুষেরাও। কিন্তু প্রথম প্রহরের ছবিটা ছিল ভিন্ন। কোনও বিদ্বেষ থেকে, কাউকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা হয়নি। একুশের প্রথম প্রহরের একটি টুকরো ছবি পাঠকের কাছে তুলে ধরতে চাওয়া হয়েছে মাত্র।
রূপশ্রীর ইন্ধন
শক্তিশঙ্কর সামন্ত ‘রূপশ্রী খারাপ?’ (২২-২) শীর্ষক চিঠিতে লিখেছেন, যে-কোনও লেখা লেখার আগে বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা সংগ্রহ জরুরি। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো এটিই যে এখনও সমাজে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে বেশির ভাগ বাবা-মা হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিতে এই চিত্র আরও প্রবল। ‘রূপশ্রী’ কিছুটা হলেও সেখানে ইন্ধন জোগাল। শুধুমাত্র স্কুলের গণ্ডি পার করিয়ে দিলেই সরকারের দায়িত্ব ফুরিয়ে যায় না। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের কথাও ভাবা দরকার এবং বিয়ের সাহায্যের চেয়ে বেশি ভাবা দরকার। সরকার থেকে মেয়ের বিয়ের জন্য আর্থিক অনুদান যে পাত্রপক্ষের পণের চাহিদাকে প্রশয় দেবে না, তা কে বলতে পারে? যেখানে নারীর ক্ষমতায়নের কথা সর্বদা বলা হয়, সেখানে বিয়েতে সরকারের আর্থিক সাহায্য তো এক ভাবে আঠারো পার করেই বিয়ে দেওয়ার উত্সাহ দেবে। স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে তা অন্তরায়। মেয়েরা যদি রোজগার করে দুটো টাকা বাড়িতে আনতে পারে, তা হলে অন্তত তাদের বাবা-মা’দের মেয়ের বিয়ের খরচের জন্য ‘মাথার চুল ছিঁড়তে’ হবে না।
অর্পিতা ঘোষাল শিলিগুড়ি
বরং ‘বরশ্রী’
‘রূপশ্রী খারাপ’ শীর্ষক চিঠিটি (২২-২) পড়ে জানা গেল, পাত্রপক্ষের বাড়ির হাজার ফর্দ, পুরোহিতের চিরাচরিত ফতোয়া, পাত পেড়ে খাওয়ানোর জোগাড় সামলাতেই মূলত সরকারের এই ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প সহায়ক হবে। তা হলে এই প্রকল্পে কন্যার রূপের শ্রীবৃদ্ধি তেমন হল কোথায়? তবে কন্যার বরের শ্রীবৃদ্ধি নিশ্চিত। কেননা কন্যাশ্রী প্রকল্পের কল্যাণে স্বয়ম্ভর হওয়া কন্যাটির বিয়ে নামক স্বয়ংবর সভার খরচ-খরচা মেটাতে আদতে তার বরেরই শ্রীবৃদ্ধি হওয়ার কথা। তাই প্রকল্পটির নাম ‘রূপশ্রী’ না হয়ে ‘বরশ্রী’ হওয়াটাই মানানসই।
দেবব্রত সেনগুপ্ত কোন্নগর, হুগলি
পলাশির তারিখ
দমদম বিমানবন্দরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশ্ব বাংলার ‘এক্সপেরিয়েন্স বেঙ্গল’-এর স্টলটি দেখে খুব ভাল লাগল। রাজ্যের পর্যটনশিল্পে গতি আনতে রাজ্য সরকারের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়। স্টলটিতে জেলাভিত্তিক পর্যটনস্থানগুলি চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট প্রচার-প্যামফ্লেটও রয়েছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার প্যামফ্লেটটিতে লেখা, পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৭-র ২৩ জুলাই হয়েছিল। আসলে হয়েছিল ২৩ জুন। বাকিগুলোতেও একই ভুল চোখে পড়ল। অন্যান্য জেলার প্রচার-প্যামফ্লেটেও কমবেশি তথ্যগত ভুল রয়েছে।
দীপাঞ্জন দে নগেন্দ্রনগর, কৃষ্ণনগর
আশি বছরের
‘মুক্তি পাচ্ছে ধূমকেতু’ (আনন্দ প্লাস, ২৭-২) শীর্ষক লেখায় পড়লাম, অভিনেতা দেব মন্তব্য করেছেন, ‘আশি বছরের এক বৃদ্ধকে নিয়ে ছবি কি বাংলায় হয়েছে?’ জানাই, আশি বছরের বৃদ্ধকে নিয়ে খুব জনপ্রিয় একটি সিনেমা ‘৮০তে আসিও না’। আশি বছরের বৃদ্ধ এবং যুবক— উভয় ভূমিকাতেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অসামান্য অভিনয় করেছিলেন। এবং আশি বছরের বৃদ্ধের মেক-আপও ছিল তখনকার দিনের নিরিখে বেশ নজরকাড়া।
শোভন মণ্ডল কলকাতা-১৫২
অনিবার্য কারণে
‘কলকাতার কড়চা’য় (১৯-২) প্রকাশিত ‘প্রয়াণ’ শীর্ষক রচনা প্রসঙ্গে জানাই, ‘আদম’ পত্রিকার উদ্যোগে প্রয়াত মণীন্দ্র গুপ্তের যে স্মরণসভা ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, অনিবার্য কারণে সেটি ৫ মার্চের পরিবর্তে ২৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় মহাবোধি সোসাইটি সভাঘরে আয়োজিত হবে।
গৌতম মণ্ডল সম্পাদক: আদম
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy