Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: তাঁকেও ফিরিয়ে নিন

সিপিআই(এম) দলের গঠনে-বৃদ্ধিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যে অবদান এবং বিনিময়ে তাঁর যা প্রাপ্তি, তার চাইতে সিএমএসআই (সিটু)-র গঠন ও বৃদ্ধিতে হারাধন রায়ের অবদান অনেক বেশি।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৩
Share: Save:

যদি এক চরম ক্রান্তিকালে পার্টির নির্দেশ অমান্য করার জন্য বহিষ্কৃত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের সিপিআই(এম)-এর এত হাঁকুপাঁকু, তবে রানিগঞ্জে ভারতের কলিয়ারি মজদুর সভা (সিটু)-র সদর দফতর ‘কয়লা শ্রমিক ভবন’-এ বহিষ্কৃত এবং মৃত হারাধন রায়ের মূর্তি বসবে না কেন? সিপিআই(এম) দলের গঠনে-বৃদ্ধিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যে অবদান এবং বিনিময়ে তাঁর যা প্রাপ্তি, তার চাইতে সিএমএসআই (সিটু)-র গঠন ও বৃদ্ধিতে হারাধন রায়ের অবদান অনেক বেশি। রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলের খনি শ্রমিকদের অধিকার এবং দাবি আদায়ের জন্য শুধু নয়, রানিগঞ্জ কয়লা ক্ষেত্রের বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের জন্য হারাধন রায়ের যে আন্তরিক প্রচেষ্টা তার কোনও তুলনা নেই। সিএমএসআই (সিটু) হারাধন রায়কে অস্বীকার করতে পারে না।

পি আর বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-১২১

মানবিক বিদ্যা

শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত রচিতযাদবপুর ও তার প্রথম উপাচার্য’ (-) প্রবন্ধের একটি তথ্যের ভ্রান্তি উল্লেখ করে আমার মূল বক্তব্যে যেতে চাই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৫, প্রবন্ধটিতে যা ১৯৫৬ সাল হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে। কেন যাদবপুর মানবিক বিদ্যা চর্চার উপর প্রভূত জোর দিয়েছিল, তার কারণ নিহিত আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের মধ্যে। ১৯০৪ সালে বড়লাট লর্ড কার্জনের উদ্যোগে ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট তৈরি হয়েছিল, এর ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট ও সিন্ডিকেটে শ্বেতকায়দের প্রভূত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ব্রিটিশ শাসকদের নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্য থেকেই ওই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের উপর এটাই হয়তো প্রথম পরিকল্পিত আক্রমণ। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কার্জন সাহেব পরের বছরই বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করেন। অগ্নিতে ঘৃতাহুতি হয়। বিশেষ করে ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রবল উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। বিদেশি দ্রব্যের সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বর্জনের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

স্বদেশি আন্দোলনের এই উত্তাল পরিবেশে ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিপরীতে জাতীয় শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাতীয় নেতাদের মধ্যে তীব্র হয়। ১৯০৫ সালের নভেম্বরে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে একটি সভা হয়, সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষ, রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, রাসবিহারী ঘোষ প্রমুখ। ওই সভায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয় এবং পরের বছর ১১ মার্চ সুবোধচন্দ্র মল্লিক-সহ আরও কয়েক জনের আর্থিক আনুকূল্যে বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ বা জাতীয় বিদ্যালয় ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়— যে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণে এগিয়ে আসেন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ।

ব্রিটিশ সরকার প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি রবীন্দ্রনাথের কখনওই আস্থা ছিল না। তিনি মনে করতেন, “দেশের এই ভয়ানক দুর্গতি দূর করিবার জন্য জাতীয় বিদ্যালয় আবশ্যক।’’ তাই সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে নিজেকে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত করলেন। দেশের ছাত্রদের উদ্দেশে তাঁর উদাত্ত আহ্বান ছিল, “গৌরবে সমুদয় হৃদয় পরিপূর্ণ করিয়া স্বদেশের বিদ্যামন্দিরে প্রবেশ করো।অধ্যক্ষ হিসাবে অরবিন্দ ঘোষ ছাত্রদের উদ্দেশে উপদেশ দিয়েছিলেন, “নিজের কথা নয়, দেশের কথা ভাব; তোমাদের শরীর, মন ও আত্মাকে দেশ মাতৃকার সেবার জন্য গড়ে তোল।’’ প্রসঙ্গত অরবিন্দ ঘোষ তখনও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা, ঋষির জীবন গ্রহণ করেননি।

জাতীয় বিদ্যালয় কিছু দিন পরে অবলুপ্ত হলেও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কাজ চলতে থাকে। ১৯২৮ সালে তার নাম পরিবর্তন করে হয় কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। এই কলেজই ১৯৫৫ সালে রূপান্তরিত হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাতীয় বিদ্যালয় বা বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটকে প্রতিষ্ঠাতারা জাতীয় আন্দোলনের পরিপূরক চারিত্রিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ সৃষ্টির আঁতুড়ঘর হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই কলেজের সঙ্গে যুক্ত মহান শিক্ষকরা বুঝেছিলেন, পড়ুয়াদের কেবল কারিগরি শিক্ষা প্রদানের দ্বারা তা সম্ভব নয়। অবিমিশ্র কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়, উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়া যায়, কিন্তু মানবিক গুণ অর্জন করা যায় না। ছাত্রছাত্রীদের মনের সুকুমার বৃত্তিগুলির বিকাশ ঘটিয়ে সমাজ সচেতন মানুষ সৃষ্টি করতে গেলে প্রযুক্তিবিদ্যা পাঠের সঙ্গে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, মূল্যবোধ শিক্ষা ও মনীষীদের জীবনী চর্চার প্রয়োজন তাঁরা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই এই সমস্ত পাঠ সেখানে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

পঠন-পাঠনের বিষয়বস্তু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠিত শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের থেকে যাদবপুর সম্পূর্ণ ভিন্ন পথের পথিক ছিল। বিপিনচন্দ্র পাল এই প্রসঙ্গে ১৯০৭ সালে তাঁর মাদ্রাজ ভাষণে বলেছিলেন, “আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে আমরা কেবল অর্থ উপার্জনের কাজে লাগাতে দিতে পারি না।’’

অর্থাৎ এক মহৎ উদ্দেশ্যবোধ থেকে তাঁরা জাতীয় বিদ্যালয়ের পাঠ্যবস্তু নির্বাচন করতেন। তাঁদের এই প্রয়াস অনেকটা সফল হয়েছিল। ক্ষুদিরামের আত্মবলিদানের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত সুশীল সেন ছিলেন জাতীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র; নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তথা এম এন রায় ছিলেন বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র, স্বাধীনতা আন্দোলনের আরও অনেক নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ এখান থেকে হয়েছিল।

১৯৭০-এর দশকে প্রযুক্তিবিদ্যার ছাত্র হিসাবে ভর্তি হয়ে এই পত্রলেখকেরও বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি, সমাজবিদ্যার পাঠের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য, কারিগরি ফ্যাকাল্টিতে মানবিক বিদ্যাচর্চার ওই গুরুত্ব আজ আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। প্রশ্ন জাগে, যে সামাজিক প্রয়োজনবোধ থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে পরিচালিত হত তা কি নিঃশেষিত? বর্তমানে চূড়ান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার যুগে তার কি কোনও প্রয়োজন নেই?

তরুণকান্তি নস্কর

শিক্ষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুলে পাঁচিল

‘পাঁচিল নেই, সন্ধ্যায় স্কুলেই বসে নেশার আসর’ (৬-৮) শীর্ষক সংবাদ পড়লাম। একই সমস্যায় জর্জরিত রাজ্যের বহু স্কুল। স্কুল চত্বর গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। তাদের বিষ্ঠার গন্ধে অতিষ্ঠ শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিলের উচ্ছিষ্টের লোভে ছুটে আসে কুকুরের দল। সন্ধ্যায় স্কুলের বারান্দায় চলা তাসের আসর রূপ পাল্টে নেশার আসরও হয়ে যায়। চত্বরে গড়াগড়ি খায় মদের খালি বোতল, গেলাস, বিড়ির টুকরো, খাবারের অংশ। কারা আড্ডা দেয়, কারা মদের আসর বসায়, সবই এলাকার মানুষের জানার কথা। তাঁরা দায়িত্ব এড়িয়ে যান, কারণ কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে। স্কুলে পাঁচিল থাকা তো খুবই জরুরি, তার সঙ্গে স্কুলের প্রতি এলাকার মানুষের নজর রাখাটাও জরুরি।

সত্যকিংকর প্রতিহার

যমুনা, বাঁকুড়া

একপেশে

বিজন মজুমদারের চিঠি (‘মুঘলসরাই’, ৯-৮) একপেশে। এর আগে কলকাতার প্রায় সমস্ত রাস্তার নাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুছে দিয়েছিল, এবং সেগুলিও ঐতিহাসিক ছিল। তখন তো কেউ টুঁ শব্দটিও করেনি! বিরোধিতা ভাল, কিন্তু ‘কেষ্টা বেটাই চোর’ এই প্রবণতা সমর্থনযোগ্য নয়।

সুব্রত মুখোপাধ্যায়

আসানসোল

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CITU Somnath Chatterjee Haradhan Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE