Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: দলিত ও সংহিতা

মনুসংহিতা ও ব্রাহ্মণ্যবাদকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই। এটাকে তৎকালীন বৈদিক আর্য সমাজ ও প্রচলিত হিন্দু সমাজের অবশ্যপালনীয় পবিত্র সংবিধান বা জীবনাচরণবিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১২টি অধ্যায়ে প্রায় ২৭০০ শ্লোকের মাধ্যমে ধর্মীয় বিধান দেওয়া আছে।

বিহারে দলিত মহিলাদের পরিচালিত একটি ব্যান্ড। —ফাইল ছবি

বিহারে দলিত মহিলাদের পরিচালিত একটি ব্যান্ড। —ফাইল ছবি

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০০:০৫
Share: Save:

ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের। সম্প্রতি ফেসবুকে ব্রাহ্মণ্যবাদ-বিরোধী লেখা পোস্ট করার জন্য এক দলিত অধ্যাপককে স্থানীয় নেতার পা ধরে ক্ষমা চাইতে হল। নেতাটি অধ্যাপকের লেখার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে এলে, থানার অফিসার অধ্যাপককে থানায় ডেকে এই শর্টকাট পদ্ধতিতে বিচার সেরে ফেললেন। আইনের পথে হাঁটার প্রয়োজনও মনে করলেন না। অধ্যাপক যদি লেখাটির মাধ্যমে কোনও অপরাধ করে থাকেন, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু দলিত মানুষটির জন্য অত পরিশ্রম আর সময় নষ্ট করার কী দরকার? কাজেই পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে মিটমাট। দলিত অধ্যাপকের সমস্ত মর্যাদাকে পা দিয়ে বেশ দলে দেওয়া হল। ব্রাহ্মণ্যবাদ অবশ্য ওই নেতাকে এই অধিকার দিয়ে রেখেছে।

মনুসংহিতা ও ব্রাহ্মণ্যবাদকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই। এটাকে তৎকালীন বৈদিক আর্য সমাজ ও প্রচলিত হিন্দু সমাজের অবশ্যপালনীয় পবিত্র সংবিধান বা জীবনাচরণবিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১২টি অধ্যায়ে প্রায় ২৭০০ শ্লোকের মাধ্যমে ধর্মীয় বিধান দেওয়া আছে।

একটি শ্লোকে বলা হয়েছে— প্রভু ব্রহ্মা শূদ্রের জন্য একটি কাজই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা হল কোনও অসূয়া অর্থাৎ নিন্দা না করে (অকপট ভাবে) এই তিন বর্ণের অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের শুশ্রূষা করা।

মনুসংহিতার পরতে পরতে উচ্চবর্ণ ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব ও ক্ষমতা প্রদান আর নিম্নবর্ণ শূদ্রের নীচত্ব ও তাকে বঞ্চনা করার কৌশল বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন, বলা হয়েছে, রাজকার্যে ও বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় ক্রিয়া-অনুষ্ঠানে সবাইকে উদ্ধারের নিমিত্তে ক্ষমতাসীন পরামর্শক ব্রাহ্মণের উপস্থিতি আবশ্যিক। প্রয়োজনীয় গুণ ও যোগ্যতা থাকুক বা না-থাকুক, ব্রাহ্মণ হলেই হল। কিন্তু যত যোগ্যতা বা গুণের আধার হোন, শূদ্রকে কিছুতেই সে মর্যাদা দেওয়া যাবে না।

কাজেই এক জন শূদ্র লোক অধ্যাপনা করবেন আবার ব্রাহ্মণ্যবাদের সমালোচনা করবেন, এ আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়। তাই এই শাস্তি। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা অবশ্য কথায় কথায় ‘অখণ্ড ভারত’-এর কথা বলেন। কিন্তু অখণ্ড বলে তো কিছু নেই, সব ‘অখণ্ড’ই বহু খণ্ডাংশের যোগফল। দুর্বল শ্রেণিকে পায়ের তলায় রেখে কি অখণ্ড ভারত সম্ভব? রাজনীতির ‘দলিতায়ন’ খুব দ্রুত গতিতে ঘটছে। সারা দেশেই দলিত সম্প্রদায় ক্রমশ সংগঠিত হচ্ছে। ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদকে খুব কড়া চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দলিত অধ্যাপকের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই উচ্চবর্ণীয় অসহিষ্ণুতা তারই প্রকাশমাত্র।

সুজনকুমার দাস, শ্রীপৎ সিং কলেজ, মুর্শিদাবাদ

জয়পুরিয়া

‘জেনারেল কোর্স তুলে দিল জয়পুরিয়া’ (একনজরে, ২-৭) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে প্রতিবাদ জানাই। এক, এ বছর থেকে বিএ, বিকম, জেনারেল পড়ানো বন্ধ হয়নি জয়পুরিয়া কলেজে। দুই, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পরিকাঠামোয় অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও অনার্স ও জেনারেল কোর্স একই সঙ্গে এই কলেজে চালু আছে। তিন, ফর্ম পূরণের সমস্ত তথ্য কলেজের ওয়েবসাইটে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অশোক মুখোপাধ্যায়, অধ্যক্ষ, শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ

প্রতিবেদকের উত্তর: ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ থেকে জেনারেল কোর্স তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ওই কলেজের বর্তমান এবং প্রাক্তন পড়ুয়ারা। সেই উদ্ভূত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, কলেজের পড়ুয়া, এক জন শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা (কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ডিং রয়েছে) বলে গত ২ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘জেনারেল কোর্স তুলে দিল জয়পুরিয়া’ শীর্ষক খবর। ওই দিনই জয়পুরিয়া কলেজে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অধ্যক্ষকে তিনি খবরটির বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। তার পরেই অধ্যক্ষ সংবাদটি ভুল দাবি করে চিঠি পাঠিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষকে ফোন করা হলে বলেন, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে বোঝেনই তো! চিঠিটা পাঠাতেই হত।’’ (রেকর্ডিং রয়েছে)। তবে কি শিক্ষামন্ত্রীর চাপেই ঠিক খবরকে ভুল বলছেন অধ্যক্ষ? কলেজের ওয়েবসাইট ঘেঁটেও জেনারেলে ভর্তির কোনও বিজ্ঞপ্তি দেখা গেল না। জেনারেল কোর্সের কোনও ‘মেরিট লিস্ট’ও নেই সেখানে। চলতি সপ্তাহেই জয়পুরিয়া কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে। জেনারেল কোর্সে কত জন পড়ুয়া ভর্তি হলেন বা আদৌ হলেন কি না, তা তখনই পরিষ্কার হবে। আপাতত খবর, ‘জেনারেল কোর্স তুলে দিল জয়পুরিয়া’।

আরও নিয়ন্ত্রণ

‘শিক্ষা কমিশনে নিয়ন্ত্রণ বাড়বে, মত শিক্ষকদের’ (২৯-৬) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিক্রিয়া। ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণনের সুপারিশে সংসদীয় আইনের বলে ১৯৫৬ সালে স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে গঠিত হয়েছিল ইউজিসি। সমগ্র দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান নির্ধারণ, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, আর্থিক অনুদান প্রদান প্রভৃতি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তার উপর। সুদীর্ঘ ৫২ বছরের ঐতিহ্যসম্পন্ন এমন ইউজিসিকে অবলুপ্ত করে, হায়ার এডুকেশন কমিশন অব ইন্ডিয়া গঠন করার মাধ্যমে, কেন্দ্রীয় সরকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সমেত সমগ্র উচ্চশিক্ষার উপর আরও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে।

ক্রমাগত সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে ইউজিসি ইদানীং বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরে পরিণত হয়ে পড়েছিল— তা যেমন ঠিক, কিন্তু তার পরিবর্তে নতুন আইনের মাধ্যমে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হতে চলেছে, তার স্বাধীন ভাবে কাজ করার কোনও অধিকারই থাকবে না। কারণ নতুন আইনের বলে কেন্দ্রীয় সরকার— কমিশনের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সমেত সকল সদস্যকে পদচ্যুত করতে পারবে, যদি তাঁদের কাজ সরকারের (পড়ুন শাসক দলের) অপছন্দ হয়। অথচ বর্তমান আইন কেন্দ্রীয় সরকারকে ইউজিসির কোনও সদস্যকে বরখাস্ত করার অধিকার দেয়নি।

এই কমিশনের হাতে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া, শিক্ষা ও গবেষণার মান যাচাই করা প্রভৃতি থাকলেও আর্থিক অনুদান প্রদানের কোনও ক্ষমতা থাকবে না, যা বর্তাবে সরকারের উপর। ফলে আর্থিক অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার তথা শাসক দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই প্রাধান্য পাবে। তদুপরি এই নতুন আইনের বলে সরকার মানের নিম্নতার অজুহাতে যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে পারবে। ফলে এই আইন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সরকারের নাক গলানোর অধিকার শুধু দেবে না, শিক্ষা সঙ্কোচনের অবাধ সুযোগ করে দেবে।

তরুণকান্তি নস্কর, কলকাতা-৩২

‘বিশ্ব’ নয়

আনন্দবাজারের দিনপঞ্জিকাতে ১-৭ তারিখটিকে ‘বিশ্ব চিকিৎসক দিবস’ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। দিনটি ভারতে ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের স্মৃতিতে ‘জাতীয় চিকিৎসক দিবস’ হিসাবে উদ্‌যাপিত হয়। অন্যান্য দেশে অন্য তারিখে ‘চিকিৎসক দিবস’ পালন করা হয়, যেমন আমেরিকাতে ৩০ মার্চ।

সমর কর, ই-মেল মারফত

কোয়ার্টার্স

‘কোয়ার্টারে তালা’ শীর্ষক খবর (৪-৭) প্রসঙ্গে জানাই, ইংরেজি কোয়ার্টার শব্দটির অর্থ এক চতুর্থাংশ (১/৪)। সংবাদটি যে প্রসঙ্গে তাতে ‘কোয়ার্টার্স’ লিখতে হবে।

ওঙ্কারপ্রসাদ রায়, কলকাতা-৪৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Dalit Professor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE