Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: ফিকশন ও ফ্যান্টাসি

সায়েন্স ফিকশন এবং সায়েন্স ফ্যান্টাসির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ হলেও, এরা চরিত্রে আলাদা। বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ়াক আসিমভ-এর মতে, কল্পবিজ্ঞানের ভিত্তি বিজ্ঞান, তাই তা সম্ভব।

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কলকাতার কড়চায় (৪-৬) প্রফেসর শঙ্কুর কাহিনিগুলি প্রসঙ্গে সন্দীপ রায় বলেছেন, ‘‘শঙ্কু-র দুর্নিবার আকর্ষণ এখনও আমার কাছে। ...সায়েন্স ফিকশন বা ফ্যান্টাসি, যা-ই বলি না কেন, তত টেকনিক্যাল নয় গল্পগুলো, পড়ার মজাটা বজায় থাকে।...’’ শঙ্কুর কাহিনিগুলি সায়েন্স ফিকশন নয়, সায়েন্স ফ্যান্টাসি। সায়েন্স ফিকশন এবং সায়েন্স ফ্যান্টাসির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ হলেও, এরা চরিত্রে আলাদা। বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ়াক আসিমভ-এর মতে, কল্পবিজ্ঞানের ভিত্তি বিজ্ঞান, তাই তা সম্ভব। কিন্তু ফ্যান্টাসির ভিত্তি যে হেতু বিজ্ঞান নয়, তা বাস্তব জগতে ঘটা অসম্ভব।

সায়েন্স ফ্যান্টাসির জগতে কোনও বৈজ্ঞানিক নিয়ম খাটে না, যদিও বিভিন্ন ভ্রমাত্মক ব্যাখ্যা তাতে থাকতে পারে, যাকে অপবিজ্ঞান বা ‘সিউডো-সায়েন্স’ বলা যায়। সায়েন্স ফ্যান্টাসিতে আছে বিজ্ঞান এবং উদ্ভট কল্পনার এক জগাখিচুড়ি। রেড স্টার্লিং-এর মতে, ‘‘সায়েন্স ফিকশন ইজ় দি ইমপ্রোব্যাবল মেড পসিবল অ্যান্ড সায়েন্স ফ্যান্টাসি ইজ় দি ইমপসিবল মেড প্রোব্যাবল।’’ উদাহরণস্বরূপ, আর্থার সি ক্লার্কের মতে, ‘স্টার ট্রেক’ সায়েন্স ফিকশন নয়, ফ্যান্টাসি। কারণ এর মধ্যে বহু বিষয় আছে, যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অসম্ভব। অপর পক্ষে, জুল ভের্ন-এর ‘টোয়েন্টি থাউজ়্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ একটি সার্থক কল্পবিজ্ঞান, কারণ ‘নটিলাস’ নামক ডুবোজাহাজটির গঠন ও কর্মপদ্ধতি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক। এইচ জি ওয়েলস-এর ‘টাইম মেশিন’ও সায়েন্স ফ্যান্টাসি, কারণ এই যন্ত্রের কার্যপদ্ধতির কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই কাহিনিতে নেই।

ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস, কচ্ছপের ডিমের খোলা মিশিয়ে রকেট তৈরি (‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’), মন্ত্রবলে হাড় জুড়ে গিয়ে প্রাণীর সৃষ্টি (‘প্রফেসর শঙ্কু ও হাড়’), মানুষকে রাসায়নিক উপায়ে পুতুল বানিয়ে দেওয়া (‘প্রফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল’), নিয়ো স্পেকট্রোস্কোপ যন্ত্র— যা ভূত নামায় (‘প্রফেসর শঙ্কু ও ভূত’), পঞ্চাশ হাজার বছরের বুড়ো গুহামানব (‘প্রফেসর শঙ্কু ও কোচাবাম্বার গুহা’), জ্ঞান ভক্ষণ করে বেঁচে থাকা গাছপালা (‘স্বপ্নদ্বীপ’), ওষুধের সাহায্যে ছ’হাজার ফুট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট মানুষ সৃষ্টি (‘মরু রহস্য’), অপরসায়ন এবং অলৌকিকের সংমিশ্রণে অন্য ধাতু থেকে সোনা তৈরি (‘শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ’), ফ্লাস্কের মধ্যে লক্ষ কোটি বছরের বিবর্তনকে কয়েক দিনের মধ্যে চাক্ষুষ করা (‘আশ্চর্য প্রাণী’), ওষুধের মাধ্যমে বিবর্তনকে এগিয়ে পিছিয়ে আনা (‘শঙ্কু ও আদিম মানুষ’), টেলিপ্যাথি ও ক্লেয়ারভয়েন্সের আজব মিশ্রণ (‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’)— তালিকা দীর্ঘায়িত করে লাভ নেই— বিজ্ঞানের সঙ্গে নিঃসম্পর্ক এই গল্পগুলি কোনও মতেই সায়েন্স ফিকশন নয়, বরং ওগুলি সায়েন্স ফ্যান্টাসির পর্যায়ভুক্ত।

বাংলা ভাষায় সার্থক সায়েন্স ফিকশনের স্রষ্টা প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাঁর লেখা ‘শুক্রে যারা গিয়েছিল’ কাহিনি প্রসঙ্গে সুরজিৎ দাশগুপ্ত লিখেছেন, ‘‘হাউই-বারুদই যে ভাবী কালের মহাকাশ বিজয় সম্ভব করে তুলবে, এই নির্ভুল দূরদৃষ্টির কৃতিত্বটুকু বাংলা ভাষার গ্রহান্তর যাত্রা সম্বন্ধে প্রথম মৌলিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক এই উপন্যাসটি দাবি করতে পারে।’’ ‘স্প্যান’ পত্রিকার জুলাই ১৯৭৪ সংখ্যায় এ কে গঙ্গোপাধ্যায় লেখেন, ‘‘মিত্র কনসিভড অব দ্য আইডিয়া অব রকেট বম্বস সেভেন অর এইট ইয়ারস বিফোর দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার।’’

জুল েভর্ন যেখানে অতিকায় কামানের গোলার সাহায্যে চন্দ্রলোকে পাড়ি দেওয়ার কল্পনা করেন, এইচ জি ওয়েলস এক আজগুবি মাধ্যাকর্ষণ-রোধক প্রলেপের কথা বলেন, সেখানে প্রেমেন্দ্র হাউই-বারুদকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার যে কল্পনা করেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকে বৈপ্লবিক বললে কম বলা হয়।

শিবাজী ভাদুড়ী

সাঁতরাগাছি, হাওড়া

একই নিয়ম

রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজে ছুটির দিন বাড়িয়ে দেওয়া হল। গরমে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত। ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, আইসিডিএস (সুসংহত শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্প) প্রকল্পে— শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষাদান ও রান্না করা খাবার বসে খাওয়ানো হয়, এই দুধের বাচ্চাদের জন্য কেন ছুটি ধার্য হয় না? সকলের জন্য একই নিয়ম থাকুক।

জয়দেব দত্ত

কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য

এক টাকা করে বাস ভাড়া বাড়ুক, কিন্তু বাসে ন্যূনতম যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। জোড়া আসনের পরিসর দু’জন বসার পক্ষে যথেষ্ট নয়। অনেক বাসে, মাঝারি উচ্চতার যাত্রীদের পক্ষে, ওপরের হাতলগুলির নাগাল পাওয়া কষ্টকর। সর্বোপরি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোনও কোনও বাসের হতশ্রী চেহারা এবং সারা ক্ষণ কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। ‌এই সব অসুবিধা কমবেশি সরকারি বাসেও লক্ষ করা যায়।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা

কলকাতা-১০৭

ভিখারির জন্য

কেন্দ্রের ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন দফতর, দেশে ভিখারি ও নিরাশ্রয় মানুষের সমস্যার নিরসনে ‘পারসনস ইন ডেস্টিটিউশন (পারসনস, কেয়ার অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন)’ নামে একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব ‘মডেল বিল ২০১৬’-তে পেশ করেছিল। সার্বিক মতামতের উদ্দেশ্যে তা সব রাজ্যে পাঠানোও হয়। পরে ২০১৭ সালে ওই আইনের সংশোধনের প্রস্তাবটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এখন ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার সমাধানে কোনও কেন্দ্রীয় আইন নেই। উপযুক্ত ও কার্যকর নীতির অভাবেই ভিখারি সমস্যার অবনতি যে ঘটে চলেছে, এটা কি তা তুলে ধরে না?

সংবিধানের ২১ ও ২৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, বাঁচা ও বাসস্থান এবং শোষণমুক্ত জীবন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। ভিখারিদের যাতে এই অধিকারে ঠিক ভাবে ‘ক্লাসিফায়েড’ করা হয়— দেশের সর্বোচ্চ আদালত বার বার এই ‘রুলিং’ দিয়েও আসছে। এঁদের দুর্দশার মোচন বিধিসম্মত ভাবে কেন তবে করা হবে না?

কিছু কাল আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল আরবান লাইভলিহুড মিশন’ প্রকল্পে দেশের ভিখারি, গরিব ও নিরাশ্রয় লোকের স্বার্থে ৯ লক্ষ আশ্রয় শিবির করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ১০৭৮ কোটি টাকা। বিষয়টি শেষে বড় আর্থিক অনিয়মের জালে জড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টে দুই বিচারপতি এম বি মুকুর এবং ইউ ইউ ললিত গঠিত বেঞ্চে যায়। ২৪ এপ্রিল ২০১৫, সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘‘এটা একটা বিরাট কেলেঙ্কারি।... টাকা কোথায় গিয়েছে?’’ এটা কি প্রমাণ করে না, কেন্দ্রীয় সরকারের গরিবদরদি কান্না কুম্ভীরাশ্রু ছাড়া কিছু নয়?

সম্প্রতি তেলঙ্গানায় পুলিশ ও পুর কর্তৃপক্ষ মিলে ভিখারি, অসহায় ও নিরাশ্রয় মানুষের কল্যাণে ‘আনন্দ আশ্রম’ নামে উন্নয়ন প্রকল্প গড়ার কাজে হাত দিয়েছে। হায়দরাবাদ শহরকে বানানো হচ্ছে ‘ভিখারি-মুক্ত’ এলাকা। সরকারি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ভিখারির সংখ্যা যখন সব চেয়ে বেশি— এ রাজ্যে এমন মানবিক প্রকল্প কেন গড়ে উঠছে না?

পৃথ্বীশ মজুমদার

কোন্নগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

ভ্রম সংশোধন

‘প্রথম ম্যাচেই হার বিশ্বজয়ীর’ (১৮-৬, পৃ. ১) শীর্ষক সংবাদে লেখা হয়েছিল, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের বিশ্বকাপে সফল হয়নি ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বের কোনও দেশ’। তথ্যটি ঠিক নয়। পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের নজির রয়েছে ইটালিরও (১৯৩৪ ও ১৯৩৮)। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE