‘রাত জেগে পড়তেন...’ (রবিবাসরীয়, ২৪-৩) শীর্ষকে লেখা হয়েছে মাস্টারদা সূর্য সেন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও তিনি আমৃত্যু কৌমার্যব্রত পালন করেছিলেন। এর কারণ কৌমার্যব্রত পালন ছিল বিপ্লবীদের কঠোর অনুশাসন। বস্তুতপক্ষে বিয়ের সময় মাস্টারদা কিছুটা মানসিক দোলাচলের মধ্যে ছিলেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না থাকায় মাস্টারদার উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় খরচ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বহন করেছিলেন তাঁর ভাবী শ্বশুরমশাই। মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি এ পরীক্ষা দিয়ে মাস্টারদা দেশে ফিরে এলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে আত্মীয়রা পুষ্পকুন্তলার সঙ্গে তাঁর বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে ফেলেছিলেন। তার আগেই মাস্টারদা দেশের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বিপ্লবী দলে যোগদানে মনস্থির করে ফেলেন। কিন্তু ভাবী শ্বশুরের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত এই বিয়েতে অস্বীকৃত হতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হন। যদিও বিয়ের রাতেই তিনি নববধূ পুষ্পকুন্তলাকে তাঁর মনোবাসনার কথা জানান এবং পর দিনই চট্টেশ্বরী দেবীর মন্দিরে শপথ নিয়ে বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে সংসারত্যাগী হন।
ফাঁসির দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত মাস্টারদার উপর চট্টগ্রাম কারাগারে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে না দেওয়ায় এবং মৃতদেহের সৎকারের বিষয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের নীরবতার কারণে তাঁর শেষ পরিণতি বিষয়ে কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের উপর নির্ভর করতে হয়। মাস্টারদার সহযোগী যোদ্ধা আনন্দ প্রসাদ গুপ্ত তাঁর গ্রন্থে (‘চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নায়ক সূর্য সেন’) বিবরণ দিয়েছেন ফাঁসির আগে কারাগারের কয়েক জন ব্রিটিশ পুলিশ মাস্টারদার উপর প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। চিৎকার শুনে পাশের কুঠুরিতে মাস্টারদার বিপ্লবী সহযোদ্ধা ফাঁসির দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত তারকেশ্বর দস্তিদার প্রবল প্রতিবাদ করলে তাঁর উপরেও নেমে আসে নির্যাতনের কঠোর শাস্তি। মাস্টারদার প্রায় সমস্ত দাঁতই উপরে ফেলা হয়। শেষে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ফাঁসি দেওয়া হয় এই দুই মহান বিপ্লবীকে। কিন্তু তাঁদের মৃতদেহের পরিণতির বিষয়ে সঠিক কিছু জানা যায় না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহ-অধ্যাপক হায়াত হুসেন মাস্টারদার ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আশির দশকে, যা তিনি বাংলাদেশে সূর্য সেন শতবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি প্রকাশিত (১৯৯৩-৯৪) স্মারকগ্রন্থে উল্লেখ করেন। মৃত্যুর পর মাস্টারদার মৃতদেহের যে কী করুণ পরিণতি হয়, তার বর্ণনা পাওয়া যায় প্রত্যক্ষদর্শী ব্রজেন সেন ও পটিয়ার মাস্টারদার গ্রামের অধিবাসী নূর আহমেদের সাক্ষাৎকারে। উভয়েই বলেছেন মাস্টারদার মৃতদেহ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নূর ১৯২৮ সালে কনস্টেবল পদে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান মাস্টারদার ফাঁসির দিন প্রায় পঞ্চাশ জন পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছিল কারাগারের ফটকের সামনে। ফাঁসির পরে একটি ট্রাকে করে সূর্য সেন ও তাঁর বিপ্লবী সাথি তারকেশ্বর দস্তিদারের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চার নম্বর জেটির কাছে। সেখানে তখন একটি জলযান নিয়ে হাজির আরও কিছু সশস্ত্রবাহিনী ও অফিসারের দল। জলযানে তুলে দেহ দু’টি বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা শুরু করলে কয়েক জন ব্রিটিশ মৃতদেহ দু’টিতে পদাঘাত করতে শুরু করে। এই অমানবিক দৃশ্যে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ব্রিটিশরা নিবৃত্ত হয়।
দেহ দু’টিকে পৃথক ভাবে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে ছুড়ে ফেলা হয় বঙ্গোপসাগরের অতলে।
রাহুল বড়ুয়া
কলকাতা-৭৪
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বেনজির বিক্ষোভ
এ বার যে ভাবে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্র ভোটকর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার স্বার্থে সকল বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হচ্ছে তা সারা দেশে সম্ভবত এর আগে কোনও দিন কোথাও হয়নি। রাজ্য পুলিশের প্রতি ভোটকর্মীদের আস্থা হারানো তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এত দিন কেবল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এমন প্রশ্ন তুলে এসেছে। এ বার সরাসরি কর্মচারী মহল থেকেও একই দাবি উঠল। এমন দাবি ওঠার কারণ অবশ্যই ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। নমিনেশন পর্ব থেকে যে ভাবে বিডিও অফিস, এসডিও অফিস, জেলাশাসকের অফিসে পুলিশের চোখের সামনে মাথায় ফেট্টি বেঁধে অথবা হেলমেট ঢেকে একদল গুন্ডাবাহিনী বিরোধীদের নোমিনেশন আটকে দিয়েছে, তা সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেননি। আর বুথে বুথে কি হয়েছে তা ভোটকর্মীরা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই সম্ভবত রাজ্য পুলিশের উপর অনাস্থা জানিয়ে এমন বেনজির বিক্ষোভ প্রদর্শন।
কৃষ্ণা কারফা
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
দৃষ্টির স্বাধীনতা
‘লিখন ভালই’ (৩১-৩) চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাই যে দেওয়াল কি শিল্পীর ক্যানভাস? প্রতিটি নির্বাচনের প্রচার পর্বে যত্রতত্র বিশৃঙ্খল ভাবে দেওয়াল লিখন ও ব্যানার, ফেস্টুন এবং কাট-আউট বোর্ড ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে ঘটছে দৃশ্যদূষণ। শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট গ্যালারির প্রয়োজন। তাই বলে নাগরিক জীবনের মুক্ত দৃষ্টিপটে জোর জবরদস্তি করে শিল্প ও রসসাহিত্যের প্রচার? যেটা কিনা বাস্তবে নাগরিকদের দৃষ্টির স্বাধীনতা হরণ এবং প্রকৃতপক্ষেই গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন ভোট যুদ্ধের প্রচার পর্বে আমাদের চোখের সামনে কী নান্দনিক সৌন্দর্যের পরিবেশ সৃষ্টি করছে! ভোট চলে যাওয়ার পরে কি সমস্ত রকমের ডিসপ্লে সরিয়ে নেওয়া হয়? দেওয়াল লিখন যে ভাবে মোছা হয় তাতে করে আরও বেশি নোংরা দেখায়। এ ছাড়াও ভোট প্রচারে ক্রমশ বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার। ঘটে চলেছে পরিবেশ দূষণ। শহর ও গ্রামের সৌন্দর্যায়ন এবং সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দায়বদ্ধ। তাই আওয়াজ উঠুক— দৃষ্টির স্বাধীনতা চাই।
আলোক রায়
কলকাতা-১১০
দশটি শ্মশান
প্রতি দিন কাগজে দেখতে পাই বিভিন্ন সাংসদের সাংসদ তহবিলের টাকায় করা গত পাঁচ বছরের কাজের ফিরিস্তি। অনেক খুঁজেও কিন্তু চোখে পড়ল না পশ্চিমবঙ্গের কোনও সাংসদের তহবিলের টাকায় নির্মিত হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য নতুন কোনও হাসপাতাল। চমকে গেলাম ৭-৪-১৯ তারিখে এক সেলেব্রিটি সাংসদের কাজের খতিয়ান দেখে (যাঁর সংসদে হাজিরা ১১%, বিতর্কে অংশগ্রহণ ২ বার আর সংসদে করা প্রশ্ন ৩টি!)। না, গত পাঁচ বছরে তিনিও কোনও হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারেননি, তবে তৈরি করেছেন ১০টি শ্মশান!
সমর গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা-৪৮
কী গর্জন
বাল্যকালের উত্তেজনাহীন গ্রাম্য জীবনে অর্ধশিক্ষিত মানুষজনের অভিনীত রামরাবণের যাত্রাভিনয় দেখে বেশ মজা পেতাম। পরবর্তী ক’দিন ধরে বাঁশের বাখারির তরোয়াল, ঝাঁটাকাঠির তিরধনুক, আর কাঁঠালভুতির গদা দিয়ে আমাদের সে কী যুদ্ধ! সত্তর বছর বাদে সেই যুদ্ধ আবার দেখলাম কলকাতার রাজপথে। তবে এ বারের অভিনেতারা ছিলেন ঘোষিত বয়স্ক ও স্বঘোষিত ভদ্রলোক। প্রশাসন-কমিশনকে ভেংচি কেটে গদা, তরোয়াল ঘুরিয়ে মহরমের শোভাযাত্রার অনুকরণে তাঁদের সে কী গর্জন, কী হম্বিতম্বি। বুলেটভিরু ভদ্রলোকদের সঙ্গে অসহায় নির্বাচন কমিশন লজ্জায় মুখ লুকোলেও বালকবালিকা আর শিক্ষাবিমুখ মূর্খদের মুখ গর্বে ঝলমল করল।
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy