সুবীর সেন।
‘উজ্জ্বল স্মৃতি’ (কলকাতার কড়চা, ২৩-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে সুবীর সেনের প্রথম রেকর্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ওই উজ্জ্বল দিন’। তথ্যটি ঠিক নয়। সুবীর সেনের প্রথম রেকর্ড (GE24715) প্রকাশিত হয় কলম্বিয়া লেবেলে ১৯৫৪-র ফেব্রুয়ারিতে। গেয়েছিলেন শ্যামল গুপ্তের কথায় চিত্ত রায়ের সুরে ‘জীবন-বাতি নিভিয়ে যেদিন’ এবং ‘আর কত জানাব তোমায়’। ‘ওই উজ্জ্বল দিন’ শিল্পীর দ্বিতীয় রেকর্ড। এই দ্বিতীয় রেকর্ডের পরিচিতিদানে লেখাও হয়েছিল যে এই নবীন শিল্পীর গান আমরা রেকর্ডে আগেই শুনেছি। আসলে এই ভুলটির জন্য দায়ী স্বয়ং শিল্পী। সুবীর সেন সর্বত্রই বলতেন, ‘ওই উজ্জ্বল দিন’ তাঁর প্রথম রেকর্ড। এটা বলার কারণ এই যে, এই রেকর্ডটি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। আর প্রথম রেকর্ডটি একেবারেই চলেনি। কিন্তু জনাদর পায়নি বলে কোনও রেকর্ডকে তো অস্বীকার করা যায় না!
গ্রাম ও ডাক্তার
অমিতাভ গুপ্তের ‘সাম্য সুযোগের, অধিকারের’ (২৮-৭) লেখা বিষয়ে এই চিঠি। লেখায় যে ভর্তুকি ফেরতের কথা বলা হয়েছে, সেটি কি আদৌ বাস্তবোচিত পদ্ধতি? এ ভাবে কি গ্রামে ডাক্তারদের পাঠানো সম্ভব? যাঁরা ভর্তুকি ফেরত দিয়ে শহরে নিজের পেশায় নিযুক্ত হবেন বা বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করবেন, তাঁরা তো ওই ফেরত দেওয়া টাকা উসুল করার চেষ্টা করবেন এবং এখানেও এক দল মানুষকে বেশি খরচ করতে হবে! আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে উঠবে।
গ্রামে ডাক্তার না যাওয়ার কারণ হিসাবে কম রোজগারের এবং ওষুধ না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু এইগুলোই কারণ? সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ তো বড় বা মাঝারি শহরে অবস্থিত। ডাক্তারি পড়ার সময় ছাত্রেরা অনেক দিন এই সব জায়গায় থাকতে থাকতে একটা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, এর পর তাঁরা আর গ্রামে ফিরে যেতে চান না। আর, বর্তমানে কোনও গ্রামের ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে ওষুধের দোকান পাওয়া যায় (ব্যতিক্রম ছাড়া)।
বরং ডিগ্রি পাওয়ার পর বা উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর সবাইকে দু’বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রামে পাঠানো হোক। তার পর আর গ্রামে থাকতে বাধ্য করা যাবে না, যদি স্বেচ্ছায় কেউ চান তা হলে থাকবেন। প্রতি বছর এক দল ডাক্তার পাশ করে বেরোবেন এবং তাঁরাও ওই ভাবে গ্রামে দু’বছর থাকবেন। এতে আরও একটা সুবিধা হবে, পুরনো ও নতুন ডাক্তার এক বছর এক সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।
ডাক্তাররা ইচ্ছা করলে কাছাকাছি ছোট/মাঝারি শহরে থেকে যাতায়াত করে কাজ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে সরকারকে যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে অথবা তার জন্য কিছু অতিরিক্ত ভাতা ডাক্তাররা পেতে পারেন।
এতে গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবাও পাওয়া যাবে, আবার ডাক্তারদেরও সারা জীবন গ্রামে কাটাতে হবে না এবং হাতুড়েদের হাত থেকে রেহাই পাবেন গ্রামের মানুষ|
উত্তম কুমার দে
মাজিদা, পূর্ব বর্ধমান
কিছু প্রশ্ন
সম্পাদকীয় ‘পরিবর্তন’ (২৫-৭) কিছু প্রশ্ন নতুন করে তুলে ধরেছে। প্রথমত, ব্যক্তিগত মালিকানা পৃথিবীর কোনও অংশে, কখনও সম্পূর্ণ ভাবে বলবৎ থাকেনি। উদাহরণস্বরূপ, জমি সময়সীমা নির্দিষ্ট বন্ধক হিসেবে বিনিময় হতে থাকে। অনন্ত কাল মালিকানা থাকে না কারও হাতে। তেমনই অস্থাবর সম্পত্তি, যথা সোনার মতো ধাতুর মূল্য নির্ভর করে বাজার বহির্ভূত নানা কারণের উপর (উদাহরণ: ধর্মীয় সংগঠনের মজুতদারি)। যে অধিকার সর্বজনীন ও শর্তনিরপেক্ষ নয়, তাকে ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বেগ’ বাড়ার কারণ হিসেবে বা ‘অগ্রগতির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্ক’যুক্ত বলে চিহ্নিত করার যুক্তি কি? অগ্রগতির সোজাসাপ্টা মাপ হল আগের পরিস্থিতি ও বর্তমান পরিস্থিতির তফাত। গোড়ার অবস্থা যদি অসম হয়, অগ্রগতি না অধোগতি বোঝা যাবে কোন উপায়ে?
দ্বিতীয়ত, নব্য উদারবাদী অর্থনীতির বহুচর্চিত ‘ট্রিকল ডাউন’ তত্ত্বের শোচনীয় পরিণতিতে পৃথিবী জুড়ে আর্থিক অসাম্য বৃদ্ধি ও বহু মানুষের দারিদ্রসীমার নীচে নতুন করে তলিয়ে যাওয়া বুঝিয়ে দেয়, সম্পদহীনের কাছে সুফল পৌঁছনোর সম্ভাবনা দূর অস্ত্। ফলত ধর্ম-ভাষা-গায়ের রং-জাতি-লিঙ্গভিত্তিক পরিচিতি নির্ভর ভেদাভেদের নীতির মাধ্যমে সম্পদ করায়ত্তের প্রবণতা সুবিস্তৃত।
তার ওপর সাম্প্রতিক শুল্ক-যুদ্ধের পরিস্থিতি কি নব্য উদারনীতির প্রাথমিক স্বতঃসিদ্ধগুলির প্রতিযোগিতা-বিমুখতা সূচিত করছে না? উদাহরণস্বরূপ, উদারীকরণের পর ভারতে টেলিকম ক্ষেত্রে ৮-১০টি ছোটবড় সংস্থা প্রায় সমতুল পরিষেবা দিতে শুরু করলেও, সম্পদশালীদের মদতে উগ্র আগ্রাসনবাদী সরকার ক্ষমতায় এসে যে সব পদক্ষেপ করেছে, তার ফলে মূলত তিনটি অতিকায় সংস্থা বাজারে রয়েছে এবং গ্রাহক তাদের শর্তে নিজের পরিশ্রমার্জিত অর্থ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্রমেই প্রতিযোগী চরিত্রের ক্ষয় বাজারকে একচেটিয়া ও বড় পুঁজির যেমন-খুশি-সাজো অঞ্চল করে তুলছে না কি?
তৃতীয়ত, ‘‘ব্যক্তিগত সম্পত্তির জোরে কেহ যদি উপার্জন করিতে পারেন, আর সেই উপার্জনের ব্যবহার যদি সমাজের অনগ্রসর অংশটির উন্নতির কাজে ব্যবহার করা চলে’’, তবে সেই ব্যবহার হয় ব্যক্তিগত সম্পত্তির জোরে বলবান ব্যক্তি বা সংস্থার শর্তে ও স্বার্থে।
ধনতন্ত্রের মূল কথা হল মুনাফার পুনর্বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর ফের মুনাফা অর্জন। দান করা পুনর্বিনিয়োগের প্রকারভেদ মাত্র। যতটা দান করা হল, তা মুনাফাযুক্ত করে ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা থাকলে তবেই ধনবান ব্যক্তি বা সংস্থা তা করবেন। অর্থাৎ, দান পেয়ে ধন্য ব্যক্তি বা সমষ্টি, ধনবান ব্যক্তি বা সংস্থাটির কাছে একটি প্রক্রিয়ার যন্ত্রাংশ মাত্র, যা ভাল ‘ইল্ড’ (yield) দিতে সক্ষম। অন্য দিকে, দান পেতে সম্পদহীন ব্যক্তি বা সমষ্টিকে যে প্রতিদান দিতে হয় তা শর্তাধীন, যা স্থির করে দাতা। এই ব্যবস্থা সামন্ততন্ত্রের প্রথম ধাপ। এ ভাবে পিছনে চলতে থাকলে দাসপ্রথার ফেরত আসা কি সময়ের অপেক্ষামাত্র নয়?
চতুর্থত, শিল্পবিপ্লবের ‘ঐতিহ্যবাহী’ ধনতন্ত্রের মূলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের চেয়েও অনেক বেশি অবদান বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের। বিশুদ্ধ ধনতন্ত্র পৃথিবী এখনও চাক্ষুষ করেনি, মিশ্র অর্থনীতিই হাল ধরে রয়েছে সর্বত্র। তারই ভেতর অ্যাডাম স্মিথের ‘মুক্তবাজার’-এর থিয়োরির পরিবর্তে ‘একটু প্ররোচিত’ করা নাজ থিয়োরি এসে পড়েছে। জেমস ওয়াটের সঙ্গে অ্যাডাম স্মিথের বন্ধুত্বই কি তবে শিল্পবিপ্লব ও এই যুদ্ধ-দাঙ্গা-গণপিটুনি-অনাহার-সমৃদ্ধ ‘অগ্রসরিত’ পৃথিবীর একমাত্র সংযোগ সেতু হয়ে উঠল?
প্রশ্নগুলির উত্তরে সামাজিক মালিকানা ও প্রয়োজনভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা সর্বরোগহর নয়, আবার ‘অলীক খোয়াবের সফরনামা’ও নয়। কিউবার ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার কোনও উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ বয়ে আনলেও, চিনের বাজার অর্থনীতি উল্কা বেগে দৌড়লেও, সাব প্রাইম ক্রাইসিসের মতো নীতিসঞ্জাত আর্থিক সঙ্কট ধেয়ে এলেও (অথবা এগুলির কোনওটি ঘটে না থাকলেও), পৃথিবীর সমস্ত প্রাকৃতিক, উৎপাদন-লব্ধ ও তথ্যসম্পদের ওপর প্রত্যেক জীবিত এবং ভাবী মানুষের সমান, স্বাভাবিক, অনিবার্য এবং অখণ্ডনীয় অধিকারের পরিবর্তন ঘটবে না।
অরিজিৎ কুমার
শ্রীরামপুর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘সহমর্মী দেওয়াল ভাঙছে...’ (কলকাতা, পৃ ১১, ৬-৮) শীর্ষক খবরে সল্টলেকে উদারতা দেওয়ালের উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়ী বলা হয়েছে। এই ব্যক্তি আদতে অবসরপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy