Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: প্রথা ভাঙার কী দরকার?

জীবনের সঙ্গে যৌনতা থাকবেই, কিন্তু সেটাই কি সব? সন্তানের পাশে থাকা, বৃদ্ধ বাবা-মা’কে দেখভাল করা, এগুলোর প্রয়োজন নেই! সিঁদুরের সঙ্গে পাশ্চাত্যের জীবনধারাকে মিলিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

তিলোত্তমা মজুমদার ‘এ বার শুরু হোক সিঁদুর দিয়ে খেলা ভাঙার খেলা’ (রবিবাসরীয়, ২১-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে কী ভাবে আবহমান কাল থেকে চলে আসা দেবীবরণের পর এয়োতি মেয়েদের সিঁথিতে সিঁদুর ছুঁইয়ে দেওয়ার রীতিকে সফল যৌনসুখভোগের প্রদর্শন বলে দেগে দিলেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। অন্য আর সব কিছুর মতো দীর্ঘ কাল ধরে চলে আসা এই প্রথাও আজ বাজারের একটা পণ্য হয়ে উঠেছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের মা, কাকিমা, ঠাকুমারা এবং বর্তমান প্রজন্ম এই রীতিকে একটা সফল যৌনসুখভোগের প্রদর্শন বলে মনে করতেন বা করেন, এটা কিছুতেই মানা যায় না। বরং, এটা এক ধরনের সামাজিক মিলন উৎসব, যেখানে খুব গরিব ঘরের গৃহিণী নিঃসঙ্কোচে ধনী ঘরের গৃহিণীর সিঁথিতে সিঁদুর ছুঁইয়ে দেন। কোনও সামাজিক ভেদাভেদ সেখানে কাজ করে না। নতুন আলাপ পরিচয় ঘটে। বর্তমান সময়ে যেটার আরও বেশি করে প্রয়োজন।

জীবনের সঙ্গে যৌনতা থাকবেই, কিন্তু সেটাই কি সব? সন্তানের পাশে থাকা, বৃদ্ধ বাবা-মা’কে দেখভাল করা, এগুলোর প্রয়োজন নেই! সিঁদুরের সঙ্গে পাশ্চাত্যের জীবনধারাকে মিলিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? দু’জন পূর্ণবয়স্ক নর-নারী যখন বিবাহ নামক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক নতুন জীবনে প্রবেশ করেন, তখন সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া, শাঁখা-পলা পরা সবই নারীর দাসত্বের প্রতীক, এটাও মানা যায় না।

সিঁদুরে রাসায়নিক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অন্য যে সমস্ত প্রসাধনী ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলির কোনওটিতে রাসায়নিক নেই?

দীর্ঘ দিন সংসার করার পর স্বামীর মৃত্যু হলে, স্ত্রীদের কি ইচ্ছা থাকে সিঁদুর খেলায় যোগ দিতে? শোক বলে তো একটা অনুভূতি আছে। এটাও তো দেখা যায়, স্ত্রীর মৃত্যুর পর অনেক পুরুষ নিজেদের সব কিছু থেকে গুটিয়ে নেন।

যদি নতুন ভাল কিছু তৈরি না হয়, তবে যেটা আমাদের সংস্কৃতির একটা অঙ্গ— যাতে ক্ষতি কারও হচ্ছে না, চলুক না, ভাঙার কী দরকার। আর একান্তই যদি বিবাহিত পুরুষদের চিহ্নিত করার দরকার হয়, তবে বর্তমান সামাজিক যা পরিস্থিতি, তাতে পুরুষদের গলায় একটা বকলস সব চেয়ে উপযোগী অলঙ্কার হবে।

দেবাশীষ ভট্টাচার্য

ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

কণ্ঠরোধ কেন

‘শিক্ষকদের মুখ বন্ধে চালু নয়া ফরমান’ (২৩-১০) শীর্ষক সংবাদ পড়ে জানা গেল, ইউজিসি-র নির্দেশে এখন থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন না, এমনকি কোনও বিষয়েই স্বাধীন মতামত দিতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করব যেখানে আমি প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। ঘটনার স্থান: আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার সান্টা বারবারা ক্যাম্পাস এবং কাল: ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাস। বছর তিনেক হল এক আমন্ত্রিত বিদেশি শিক্ষক হিসাবে ওই ক্যাম্পাসে পড়াচ্ছি। শীতকালীন সেশন চলাকালীন ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (সিনিয়র) ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ‘অপারেশন ডেজ়ার্ট স্টর্ম’ আরম্ভ করেন। ইরাকের অপরাধ, ইরাক কিছু দিন ধরে তেলসমৃদ্ধ কুয়েত দখল করে রেখেছে। যুদ্ধ আরম্ভের দিন ক্লাসে গিয়ে বললাম, আজ আমেরিকার বোমার আঘাতে ইরাকের যে নিরীহ মানুষেরা মারা গিয়েছেন এবং যুদ্ধের কারণে ভবিষ্যতে মারা যাবেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনায় ও যুদ্ধের প্রতিবাদে নির্ধারিত পাঠ্যসূচি নিয়ে কোনও আলোচনাই করব না। পরিবর্তে আজ এই যুদ্ধ বিষয়ে আমার নিজস্ব মতামত জানাব এবং তোমাদের বিভিন্ন মত শুনব।

এই ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসে গিয়ে না পড়ানো, কিংবা শিক্ষকদের ধর্মঘট অবশ্যই এক বড় মাপের ব্যতিক্রমী ঘটনা। এখানে প্রতি সেশনে প্রায় সমস্ত ক্লাস রুটিনমাফিক হয়। নোবেল পুরস্কার পাওয়া শিক্ষকও সময়ে ক্লাসে আসেন, বিনা নোটিসে ক্লাস কামাই করেন না। যা-ই হোক, যুদ্ধের প্রতিবাদে আমার সে দিনকার বক্তব্যে ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সরকারের তীব্র সমালোচনা। ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই মনে হল যুদ্ধের বিরোধী। তবে ক্লাসে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বিশাল হওয়ায় যুদ্ধ সমর্থনকারীদের সংখ্যাটাও নেহাত কম ছিল না। তারাও কিন্তু শান্ত ভাবে আমার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনল। কেউ কেউ যুক্তির ধার দিয়ে সেই বক্তব্য খণ্ডন করার চেষ্টা করল। সে দিন কেউই উত্তেজিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়নি— ‘গো ব্যাক টু ইন্ডিয়া’। সে দিন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু শিক্ষক যুদ্ধের প্রতিবাদে ক্লাসে গিয়ে পড়াননি। স্বাভাবিক ভাবেই এঁদের মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ছিল নগণ্য।

ওই ঘটনার দু’তিন দিন বাদে ইউনিভার্সিটির ‘অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যান্ড স্কলারস’ থেকে একটা চিঠি পেলাম। সামান্য শঙ্কিত হয়ে চিঠি খুলে বুঝলাম, সব বিদেশির কাছেই এই চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং তাতে জানানো হয়েছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশি ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও শিক্ষকরা যেন কোনও ভাবেই মনে না করেন যে তাঁদের মতামত ও বক্তব্যে লাগাম টেনে চলতে হবে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া চায়, ক্যাম্পাসের সকলেই অসঙ্কোচে ও নির্ভয়ে নিজের নিজের মতামত প্রকাশ করুন। চিঠিতে বিশেষ জোর দিয়ে যে কথা বলা হয়েছে তা হল, ইউনিভার্সিটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার অর্থ শিক্ষার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করা। আরও বলা হয়েছে, এক অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে শিক্ষার স্বার্থেই ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া কারও মতামতেই লাগাম টানতে চায় না।

পরবর্তী প্রায় তিন দশকের বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ক্লাসে সে দেশের সরকার-বিরোধী বিভিন্ন মতামত নির্দ্বিধায় প্রকাশ করেছি। এই বছরের গ্রীষ্মকালীন সেশনে ‘মানবজাতির কার্যকলাপ ও বিশ্বপরিবেশ’ শীর্ষক পরিবেশবিদ্যার এক ক্লাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবেশনীতির কঠোর সমালোচনা করার দরুন সম্পূর্ণ বিদেশি এই শিক্ষককে কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষুর সম্মুখীন হতে হয়নি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া মূলত সরকারের টাকায় চলা এক পাবলিক ইউনিভার্সিটি। এর শিক্ষার মান বোঝাতে যে তথ্যটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য তা হল এর দশটি ক্যাম্পাসে এ যাবৎ নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের সংখ্যা চৌষট্টি। যাঁদের মধ্যে আছেন লিনাস পাউলিং, হার্বার্ট ক্রোমার, সুজি নাকামুরা। শেষোক্ত দু’জন আছেন সান্টা বারবারা ক্যাম্পাসেই। প্রশ্ন হল, এমন এক ইউনিভার্সিটির শিক্ষা-দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে হেঁটে ইউজিসি কোন মহার্ঘ লাভ করতে চাইছে? মনে এ প্রশ্নও জাগে যে এক গণতান্ত্রিক দেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ামক সংস্থা হঠাৎ কেন স্বৈরতান্ত্রিক কিংবা কমিউনিস্ট শাসকের মতোই বিরুদ্ধ সমালোচনা, অপছন্দের চিন্তা ইত্যাদির কণ্ঠরোধ করতে চাইছে?

মানসেন্দু কুণ্ডু

সামার ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

সভায় আপত্তি

আইনশৃঙ্খলার অবনতির অজুহাতে বিষ্ণুপুরে বিজেপিকে ইনডোর সভা করতে দেয়নি পুলিশ। পর দিন দুর্গাপুরেও বিজেপির সভা করায় আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। সামনের সারিতে পুলিশ থাকলেও কে বা কারা এমন নির্দেশের পিছনে আছে তা বোধ হয় কারও অজানা নয়। আমরা সবাই জানি, যে বই ছাপার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ছাড়পত্র পেলে সেই বই সব চেয়ে বেশি বাজার পেয়ে যায়। যে সিনেমা সেন্সর বোর্ডের অনু্মোদন না পেয়ে হলে প্রদর্শিত হতে পারে না সেই সিনেমা যখন সেন্সর বোর্ডের কাঁচি চালানোর পর ছাড়পত্র পায় তখন সে-ই সব চেয়ে বেশি টাকার ব্যবসা করে। যাঁরা এমন হাস্যকর কারণ দেখিয়ে সভা আটকানোর ব্যবস্থা করছেন তাঁরা কি এটা জানেন না?

কৃষ্ণা কারফা

বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sindur Khela Tradition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE