Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: মূর্তি গড়ার চেয়ে...

হিমা ভারত তথা নিজ রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু মূর্তি বসানোর চেয়ে, রাজ্যের আনাচকানাচে হিমার মতো যে অসামান্য অ্যাথলিটরা লুকিয়ে আছেন, তাঁদের খুঁজে বার করে তাঁদের প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করাটাই আসল কাজ।

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

‘হিমা দাসের মূর্তি’ (২৯-৮) খবরটি পড়ে জানা গেল, অসমের জলসম্পদ মন্ত্রী হিমা দাসের মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এক শ্রেণির রাজনীতিকের এই এক সমস্যা, তাঁরা অপ্রয়োজনীয় চমক দিতে ভালবাসেন। হিমা ভারত তথা নিজ রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু মূর্তি বসানোর চেয়ে, রাজ্যের আনাচকানাচে হিমার মতো যে অসামান্য অ্যাথলিটরা লুকিয়ে আছেন, তাঁদের খুঁজে বার করে তাঁদের প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করাটাই আসল কাজ।

অরূপরতন আইচ, কোন্নগর, হুগলি

আমি শিকার

দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ঘরের গঞ্জনাও তো গার্হস্থ্য হিংসা’ (১১-৮) পড়ে অভিভূত হলাম। আমি নিজে এক জন সাধারণ গৃহবধূ। আমার স্বামী প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করতেন। আমি তাঁর সহধর্মিণী হিসেবে দীর্ঘ ৩০ বছর অতিক্রান্ত করে ফেলেছি নিদারুণ লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে। আমি পড়াশোনা করতে গিয়ে ‘ঘরের কাজ’-এ নিতান্তই অমনোযোগী কন্যা ছিলাম বলে বাবার হাতে নিত্য মার খেয়ে সারা শরীরে কালশিটে বহন করতাম। মা নিয়ত গঞ্জনা দিতেন ‘দেখতে খারাপ, কবে বিয়ে হবে’ এই চিন্তায়। বিবাহিত জীবনে আমার স্বাভাবিক অধিকারগুলো চলে যায় স্বামী বাহাদুরের এক্তিয়ারে। বহু মার, অশ্রাব্য কথার ফুলঝুরি, ‘বেঠিক’কে পথে আনবার বিবিধ রকমের কলাকৌশল... মাঝে মধ্যে আমি রান্নায় শর্টকাট করলে, এমনকি যখন আমি অসুস্থ তখনও মশলা বেটে ঝোলেঝালে রান্না করে না দিতে পারলে, গঞ্জনা। কোনও বোতলের মুখ কেন খোলা আছে, বঁটি রাখার অভূতপূর্ব কৌশল কেন আয়ত্ত করতে পারিনি, বেগুনভাজার তেল নিষ্ক্রমণের অভিনব পদ্ধতি কেন জানি না, বাসন মাজতে বসার ঠিক পদ্ধতি কী, বাচ্চার কাপড় কেমন ভাবে মেললে শিল্পসম্মত হয়, সমস্ত বিষয়ে অষ্টপ্রহর শুধু উপদেশ শুনেছি, আর তিরস্কার। এমনকি ভিখারি এলে তাকে কেমন ভাবে দূর দূর করে তাড়াতে হয়, তা কেন জানি না— এ নিয়েও বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে। নিজের ভাতের খানিকটা ভিখারিকে দিয়ে দিয়েছি বলে ‘জমিদার কন্যা’ ব্যঙ্গাত্মক আখ্যা পেয়েছি। মদ্যপ স্বামী যে মদ খেয়ে বা না খেয়ে শাসন-গর্জন চালাবেন, ভাত-কাপড় দেওয়ার শোধ তুলবেন— তা ভারতীয় ঘরে গৃহবধূ তথা চাকুরে বধূর কপালে প্রাত্যহিক রোজনামচা। আসলে আমি ও আমরা কন্যা তথা বধূ হওয়ার সঠিক শিক্ষা নিতে সারা জীবনে পুরুষের লৌহদৃপ্ত পদতলে বসি, এটুকু ভুলে গেলে চলবে কেন। আমি আমার আশেপাশে, বাপের বাড়িতে, এমনকি চাকুরে মা, কাকিমা, বান্ধবী, মাসিমা, সবাইকে বলতে শুনেছি, কোনও ক্ষেত্রে নিজে প্রত্যক্ষ করেছি, গার্হস্থ্য হিংসার অতীব বেদনাদায়ক রূপ। এ সব সহ্য করতে না পেরে যদি আমরা আত্মহত্যা করি, তখনই মা, বাবা, সমাজ আস্তিন গুটিয়ে আসবে প্রতিশোধ নেবে বলে। কিন্তু যত ক্ষণ বেঁচে আছি তত ক্ষণ কারও কোনও হেলদোল নেই। শুধু শুনতে হবে: ‘‘কী আর করা যাবে?’’ ‘‘কপালে ছিল।’’ ‘‘সংসারে একটু ও রকম হয়।’’ একমাত্র কন্যাসন্তান যখন সরকারি চাকরি আয়ত্ত করতে পেরেছে, তার মুখে শুনি— এই সব ‘ভূতের বেগার খাটার সংসার’ সে রচনা করবে না। তার অনেক বান্ধবীও নাকি এ রকম ভাবছে। যাক, কিছুটা হলেও সচেতনতার মৃদুমন্দ হিমেল বাতাস অনুভূত হচ্ছে।

বেবী চক্রবর্তী, গোলাপবাগ, মুর্শিদাবাদ

যৌথ খামার

‘কৃষির মূল সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই’ বলে সুগত মারজিৎ ‘কৃষিতে সমস্যা থাকলে লাভ’ (৮-৮) শীর্ষক নিবন্ধে যে মন্তব্য করেছেন তা যথার্থ। কিন্তু সেই তিমির বিনাশে তিনি যে আলোর সন্ধান দিয়েছেন তা নিতান্তই নিষ্প্রভ। বলেছেন, ১০০ দিনের কাজের দরুন গ্রামে কৃষিকাজে মজুর পাওয়ার সমস্যা, ফলে মজুরির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের সেই মজুরি দিতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অথচ, সেই অনুপাতে শস্যের বিক্রয়মূল্য বাড়ছে না। তাই ওই গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পটিকে তিনি কার্যত বাতিলের জন্য সওয়াল করেছেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য গরিব খেতমজুরদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে সমস্যার কোনও সুরাহা তো হবেই না, বরং, বিপুল সংখ্যক খেতমজুর আরও আর্থিক সঙ্কটে পড়বেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির আসল সমস্যা লুকিয়ে আছে নিবন্ধের শেষে উত্থাপিত তাঁর প্রশ্নমালার মধ্যেই, ‘‘কৃষিতে কাজ করা, উদ্যোগ করা, নতুন প্রযুক্তি আনা— এগুলোকে কি আদৌ জাতীয় স্তরে আকর্ষক করে তোলা হচ্ছে?’’ জাতীয় স্তরে না হলেও রাজ্য স্তরে যে কিছু চেষ্টা হচ্ছে, সন্দেহ নেই। সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যে প্রধান বাধা জোতের ক্ষুদ্রতা ও বিক্ষিপ্ততা। এর মূলে আছে বাম আমলের বহু বিঘোষিত ভূমি সংস্কার কর্মসূচি। ওই কর্মসূচির ফলে সাময়িক ভাবে উৎপাদন কিছু বাড়লেও, নব্বইয়ের দশকে তার অধোগতি শুরু হয়। বাম সরকারেরই ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদন, ২০০৪’-এ ধরা পড়েছে তার স্পষ্ট ছবি: ‘‘পাট্টাদারদের মধ্যে ক্রমাগত উদ্বৃত্ত জমি বণ্টন করা সত্ত্বেও গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে ভূমিহীনতার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। জমির অধিকার হারানো পাট্টাদারের শতকরা হার ১৩.২৩, এবং উচ্ছেদ হওয়া বর্গাদারদের শতকরা হার ১৪.৩৭। এই বাস্তব নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। জাতীয় নমুনা সমীক্ষার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে ভূমিহীনদের হার ৩৯.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৯৩-৯৪ সালে হয়েছে ৪১.৬ শতাংশ। আর ১৯৯৯-২০০০ সালের হিসেবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৮ শতাংশ। অন্য কথায়, গত দশকের শেষে গ্রামীণ পরিবারগুলির প্রায় অর্ধেকই ছিল ভূমিহীন। এর সঙ্গে তুলনায় সমস্ত গ্রামীণ ভারতে ওই হার ৪১ শতাংশ।’’

পরিণাম স্পষ্ট হওয়ার পরও বাম সরকারের পক্ষে জোতের সংযুক্তিকরণ করে বৃহৎ খামার গড়ায় চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হয়নি। কেননা, তাতে তাদের ভূমি সংস্কারের সাফল্যের অতিকল্প মিথ্যে হয়ে যেত। সেই অতিকল্প ধরে রাখার দায় তৃণমূল সরকারের নেই। তাই, তাদের উচিত হবে ভূমি সংস্কারের ভুল শুধরে নিয়ে বৃহৎ-ক্ষুদ্র নির্বিশেষে এক একটা মাঠের সকল জোতকে সংযুক্ত করে বৃহৎ খামার গড়ে তোলায় চাষিদের উৎসাহিত করা। জমির অনুপাতে চাষিরা পাবেন খামারের মালিকানা। তাঁরা মালিকও হবেন, আবার তাঁদের বাড়ির শিক্ষিত ছেলেরা ওই খামারে কাজও পাবেন। এই বৃহৎ খামারে লগ্নির দরজা খুলে যাওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটবে। ‘কৃষিতে কাজ করা, উদ্যোগ করা’ আকর্ষক হয়ে উঠবে।

এই আধুনিক প্রযুক্তির ফলে প্রাথমিক ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছু কমবে বটে, তবে ওই খামারেরই একাংশে কোল্ড স্টোরেজ, ওয়্যারহাউস, ফিশারি, গোটারি, পিগারি, পোল্ট্রি ফার্ম বা ফুড প্রসেসিং শিল্প গড়ে উঠলে, ওই উদ্বৃত্ত কর্মীদের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। মাঠে মাঠে এ রকম বড় বড় খামার গড়ে তুলতে পারলে কোনও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় জমিও সহজলভ্য হবে। একটা হাজার একর খামার থেকে পাওয়ার গ্রিডের জন্য ১৩ একর বা রেল প্রকল্পের জন্য পাঁচ একর জলাভূমি পেতে সরকারের কোনও অসুবিধেই হবে না।

যে কোনও নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কেই চাষিদের আশঙ্কা থাকে। এই ব্যবস্থা সম্পর্কেও থাকবে। সেই আশঙ্কা কাটানোর জন্য সরকারকে একটি মডেল ফার্ম গড়ে দিতে হবে। সেই ফার্ম গড়ে উঠতে পারে সিঙ্গুরেই। সিঙ্গুরে এখনও চাষিদের জমি চিহ্নিতকরণে কিছু সমস্যা আছে। কংক্রিট অংশে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং বাকি অংশে যৌথ খামার গড়ে তোলা গেলে, কৃষি ও শিল্পের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।

আশিস সামন্ত, কলকাতা-৬৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Statue Hima Das Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE