‘শিক্ষামন্ত্রী’ শীর্ষক সম্পাদকীয়টি (৪-৬) বাঙালিকে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। সমস্যা-কণ্টকিত রাজ্যে কোনও দুষ্কর্ম ঘটে যেতেই পারে। কিন্তু শাসক দল সমূলে তার বীজ উৎপাটন করার বদলে কিনা লঘু করার চেষ্টা করে! তাঁদের প্রতিনিধিরা টেলিভিশনের আলোচনায় এসে মন্ত্রীদের মতোই সাফাই দিয়ে বলেন— ক’টা এমন ঘটনা ঘটেছে, সব মিডিয়ার বাড়াবাড়ি!
আগের জমানায় শিক্ষাক্ষেত্র যে অমলিন ছিল তা বলা যাবে না, কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে এমন কুৎসিত ফাটকা খেলার বিপুল আয়োজন হয়েছিল বলে জানা যায়নি। যুবসমাজের উজ্জ্বলতম অংশ ছাত্রসমাজের মুখ আজ কলঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে। প্রথম থেকে মন্ত্রীমশাইরা সতর্ক হলে, দলেরই সৎ ছেলেদের দিয়ে দুষ্টের দমন করতে পারতেন, পুলিশের হস্তক্ষেপ দরকার হত না। কিন্তু সৎ ছেলেমেয়েরা সম্ভবত আর তেমন কদর পায় না। সমস্ত বিষয়টা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মন্ত্রী থেকে সান্ত্রি নেমে পড়েন। ওপর থেকে চাপা দেওয়া আগুন সম্পূর্ণ নিভে যাবে বলে মনে হয় না। রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের মাত্রাধিক লোভ-লালসার ওপর রাশ না টানতে পারলে, সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে ছাত্র সংগঠন, সবার অকাল-পচন ধরবে। তখন এই শাসনের বিকল্প হিসেবে, নীতিকথার ধ্বজাধারী মহাকাব্যের নায়কের নাম করে, লাঠিয়াল-অধ্যুষিত সংস্কৃতির আমদানি না হয়!
তরুণকুমার ঘটক
কলকাতা-৭৫
বেঠিক কথা
সুগত মারজিৎ-এর ‘অভিবাসন: কিছু অপ্রিয় সত্য’ (৫-৭) সম্বন্ধে কয়েকটি কথা। প্রবন্ধে বলা কাহিনিগুলি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-নির্ভর (অ্যানেকডোটাল)। প্রতিটি মানুষের প্রতিটি অভিজ্ঞতাই মূল্যবান এবং প্রত্যেwকের অধিকার আছে সেই অভিজ্ঞতা অন্যদের কাছে তুলে ধরার। কিন্তু যখন তথ্যসূত্র ছাড়া শুধুমাত্র অভিজ্ঞতানির্ভর কাহিনি থেকে পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে প্রচ্ছন্ন ভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়, বিশেষত অভিবাসনের মতো বিতর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, তখনই ভুল বোঝার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
সুগতবাবু বলেছেন, ‘‘কিন্তু আশ্রয়প্রার্থীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাগজপত্র পাইয়ে দিয়ে, আর্থিক বা অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা করে তাদের ভোট-সক্ষম করে তোলা হয় বেশ কিছু বড়লোক দেশে, অথচ অন্য দেশ থেকে পড়াশোনা করে আসা ছাত্রছাত্রীরা সেখানে ভাল কাজের বিনিময়ে থাকবার সুযোগ পেতে চাইলে তাদের চুল পেকে যায়। কোনও দেশের নাম করছি না, একটু খোঁজ করলেই বোঝা যাবে কোন দেশগুলোর কথা বলছি।’’ কোনও দেশের নাম না করায় বিভ্রান্তির জন্ম হতে পারে। দেশের নাম করলে পাঠকের সুবিধা হয়, তাঁরা নিজেরা আন্তর্জাল ঘেঁটে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র থেকে লেখকের বক্তব্য যাচাই করতে পারেন। যে দেশগুলির রাজনীতি টলোমলো এবং যেখানে সাধারণ মানুষের বিরক্তির শেষ নেই, সেখানে যাওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন।
শ্রীলঙ্কাবাসী যে তামিলরা এলটিটিই-র সদস্য ছিলেন না, তাঁরাও গৃহযুদ্ধ এবং সরকারের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন (রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ২০১১-য় প্রকাশিত রিপোর্ট দ্রষ্টব্য)। এঁদের অনেকেই আশি-নব্বইয়ের দশকে সুইৎজ়ারল্যান্ডে আশ্রয় নেন। এখন এঁদের এবং এঁদের বংশধরদের সংখ্যা প্রায় ৩৫০০০ (সুইস ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের একটি রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত)। লেখকের সঙ্গে জ়ুরিখে যাঁদের পরিচয় হয়েছিল তাঁরা পাসপোর্ট পুড়িয়েছিলেন এবং এলটিটিই-র সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন বলেই অভিবাসনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছিলেন— এ কথা ভাবার কোনও কারণ দেখছি না, প্রবন্ধেও তা বলা নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত মাতৃভূমি ছেড়ে পালানোর সময়ে কী ভেবে মানুষগুলি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা-ও অজানা।
যে বিদেশিনি সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় কমে যাওয়ার কথা বলেছেন, তাঁর অভিযোগ অত্যন্ত সঙ্গত। কিন্তু এর জন্য তিনি দায়ী করেছেন উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যয়কে, যা ঠিক নয়। ২০১৮-র ২৭ মার্চ মার্কিন অর্থনীতিবিদ মাইকেল জে বসকিন, জন এইচ কোচরেন, জন এফ কোগান, জর্জ পি শুলৎজ় এবং জন বি টেলর, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে মতামত দেন, ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি এবং জাতীয় ঋণের বোঝা কমাতে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে ব্যয়সঙ্কোচ করতে হবে। আবার ৮ এপ্রিল অর্থনীতিবিদ মার্টিন নিল বেলি, জেসন ফারম্যান, অ্যালান বি ক্রুগার, লরা ডি’আন্দ্রেয়া টাইসন এবং জ্যানেট এল ইয়েলেন ওই পত্রিকাতেই একটি প্রবন্ধে পূর্বোক্ত প্রবন্ধটির যুক্তি খণ্ডন করে মত দেন, ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং বাজেট ঘাটতির জন্য দায়ী অপরিকল্পিত সামরিক ব্যয় এবং ধনকুবের ও কর্পোরেশনগুলিকে দেওয়া বিপুল কর-ছাড়।
সাধারণ মার্কিন নাগরিক সরকারের শুরু করা যুদ্ধের জন্য দায়ী নন, বরং তাঁরা এক দুষ্টচক্রের শিকার। মার্কিন সরকার পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে চরম অশান্তির সৃষ্টি করার ফলে, এই দেশগুলি থেকে দলে দলে উদ্বাস্তু মানুষ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই দরজায় হাজির হন। তখন রাজনৈতিক নেতা এবং ধনকুবেররা সাধারণ মানুষকে এই বলে খেপিয়ে তোলেন যে, উদ্বাস্তুরা তাঁদের প্রাপ্য সুবিধাগুলি কেড়ে নিচ্ছেন, আর অন্য দিকে সাধারণ মানুষের প্রাপ্য থেকে বরাদ্দ কমিয়ে নিজেদের আখের গোছান। অথচ মার্কিন আদমশুমারি বিভাগের করা একটি চলমান সমীক্ষা (American Community Survey) থেকে প্রাপ্ত ২০১০-১৪ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম এন ইভান্স এবং ড্যানিয়েল ফিটজ়ারাল্ড ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকনমিক রিসার্চ কর্তৃক ২০১৭-র অগস্টে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী উদ্বাস্তুরা সরকারের থেকে যে আর্থিক সাহায্য পান, করের মাধ্যমে তার অনেক বেশি অর্থ সরকারকে ফিরিয়ে দেন।
পরিশেষে বলি, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সম্মানিত এবং নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার প্রতিটি মানুষের আছে। আর অধিকাংশ সময়েই ‘রাজনৈতিক ভাবে বেঠিক’ বলে চিহ্নিত করা কথাগুলি সত্যি সত্যিই বেঠিক হয়।
সুতপা ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৬
যাচাই হোক
বিবাহিত/বিবাহিতারা বিয়ের মাত্র এক দিন পরেও ‘ডিভোর্স’ চাইলে, তাদের এই চাওয়াটা সাময়িক কি না, সেটা যাচাইয়ের জন্য কিছু দিন ‘আলাদা’ থাকতে হয় এবং পরে জজসাহেব সকল কার্যকারণ যাচাই করার পর রায় দেন। কিন্তু, পিতা-মাতার অমতে বিবাহযোগ্য/ যোগ্যাদের বিবাহোদ্দেশ্যে পিতৃমাতৃগৃহ ত্যাগের ইচ্ছাটা সাময়িক কি না— সেটা যাচাইয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। মনে হয় না কি, স্বল্প পরিচিত বা প্রায় অপরিচিত এক অনাত্মীয় মানুষের আকর্ষণে, আজন্ম-পরিচিত আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার ইচ্ছাটাও সাময়িক উত্তেজনাপ্রসূত কি না, সেটাও একটু যাচাই করে দেখা প্রয়োজন?
রাগিনী রায়
ই-মেল মারফত
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
•পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘সংস্কৃত শিক্ষা’ শীর্ষক চিঠিতে (সম্পাদক সমীপেষু, ৭-৭) ‘‘আচার্য মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে...’’ বাক্যে নামটি হবে আচার্য রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়।
• ‘মন্থর ব্যাটিং দেখে ধোনিকে বিদ্রুপ ভারতীয় দর্শকদেরই’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (পৃ ২১, ১৬-৭) লেখা হয়েছে, ৩৭ বলে ৫৮ রান করেন ধোনি। আসলে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে ধোনি করেন ৫৯ বলে ৩৭ রান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy